
জন্মের পর প্রথম আট বছর শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল। শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের বড় পরিবর্তন হয় এই সময়েই। অনেক অভিভাবকই চিন্তিত হয়ে পড়েন, বাচ্চা বাড়ছে না কেন এই প্রশ্নে। প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে অপুষ্টি, অনাহারের কারণে শিশুর বৃদ্ধি থমকে যায়। কিন্তু শহরাঞ্চলে যেখানে শিশুর অভিভাবকরা যথেষ্ট শিক্ষিত ও সচেতন, সেখানেও কেন বৃদ্ধি আটকে যাচ্ছে সেটি একটি প্রশ্ন।
বিশেষজ্ঞদের কথায়, উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিশুর ওজন বাড়বে। কিন্তু যদি দেখা যায় বয়সের সঙ্গে ওজন বা উচ্চতা কোনওটাই ঠিকমতো বাড়ছে না তাহলে চিন্তার কারণ রয়েছে। সেক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ের দিকে আগে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন তাদের সঠিক ডায়েট হচ্ছে কিনা, নির্দিষ্ট সময় খাওয়া, শিশু অল্পেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে কিনা, কোনো রোগ ভেতরে ভেতরে বাসা বাঁধছে কিনা ইত্যাদি। শিশুর বৃদ্ধি সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, তা জানতে নিয়মিত শিশুর ওজন, উচ্চতা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া সর্বজনস্বীকৃত গ্রোথ চার্টের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে। ছেলে ও মেয়ে শিশুর জন্য আলাদা চার্ট আছে, যা দিয়ে সহজেই শিশুর বৃদ্ধি মাপা যায়। এই চার্টগুলো ফলো করে প্রতিনিয়ত অভিভাবকরা নিজেই মিলিয়ে নিতে পারবেন, তাদের শিশুরা ঠিকঠাক বেড়ে উঠছে কি না।
বিশেষজ্ঞরা শিশু বৃদ্ধির চারটি পর্যায়ের কথা বলেছেন। এক, জন্মের পর, দুই, স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগের সময়, তিন, স্কুলজীবনের মধ্যবর্তী সময় এবং চার, স্কুল পাস করার পরবর্তী সময় থেকে বয়ঃসন্ধি অবধি।
শৈশবে শিশুর যত্ন ও বেড়ে ওঠার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি খেয়াল করা প্রয়োজন। শিশুর প্রথম তিন বছর শিশুর মস্তিস্ক নমনীয় থাকে এবং দ্রুত বিকশিত হয়। শিশুর ভালো ও খারাপ অভিজ্ঞতাগুলো মস্তিস্কের বৃদ্ধির ওপর কড়া প্রভাব ফেলে। এই সময়ে অবহেলা বা নির্যাতন শিশুর বুদ্ধিবৃত্তি, আচরণ ও আবেগের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করে। এসময় শিশুর বিকাশের জন্য অত্যাবশ্যক উপাদান- পুষ্টি, উদ্দীপনা, সুরক্ষা ও শিক্ষা এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। কিছু বাচ্চার কিছুতেই বাড়তে চায় না। এর পিছনে বহু কারণ থাকতে পারে, যেমন- বাবা-মায়ের জন্মগত গঠনপ্রকৃতি, যদি বাবা এবং মা উভয়েই রোগা হন, মেটাবলিজম বা বিপাকপ্রক্রিয়াও শিশুর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনার শিশু যদি সক্রিয় এবং স্বাস্থ্যবান হয়, ওজন ও শারীরিক বৃদ্ধির মাইলফলক ঠিকই ছুঁয়ে ফেলবে। আপনার শিশুর জন্য একটি খাবার ডায়রি রাখতে পারেন, যেখানে আপনি পছন্দ, অপছন্দ, বেছে নেয়া খাবার ও অ্যালার্জিগুলি নোট করতে পারেন, এবং মা এবং বাচ্চা উভয়ের জন্য খাবার সময়ে মজা ও ঝামেলা-মুক্ত করতে সাপ্তাহিক মেনু তৈরি করুন। আপনার শিশুর বৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্য এখানে কিছু টিপস থাকলো
১। আপনার সন্তান যেনো যথেষ্ট ব্যায়াম এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপে ব্যস্ত থাকে, সেটি নিশ্চিত করুন।
২। ওজন বৃদ্ধির উপর বেশি মনোনিবেশ করবেন না। বরং সুস্থ, সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার ব্যাপারে মনোযোগ দিন।
৩। শিশু যখন বড় হয়, তাদের সাঁতার, সাইক্লিং প্রভৃতি খেলাধুলার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। এটি আপনার শিশুর ক্ষুধা বাড়াবে এবং তার শারীরিক বিকাশও ঘটাবে।