
‘পতাকার মূল্য অনেক; কিন্তু বিক্রির দাম অনেক কম। এটা বাঙালির স্বাধীনতার পতাকা। এই পতাকা লাখো রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। এরসাথে দেশপ্রেম মিশে রয়েছে। আমরা ডিসেম্বর মাসজুড়ে পতাকা নয়, দেশপ্রেম ফেরি করি।’
গত ১ ডিসেম্বর বিকেলে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ঢাকার গুলিস্তানে ইউসুফ, কামাল ও বাবুল। প্রতি বছর বিজয়ের মাস শুরু হলেই প্রতিদিন লাল-সবুজের পতাকা হাতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কসহ অলিগলিতে হেঁটে বেড়ান তারা। এবার করোনার কারণে লোকজন অনেকটা কম। তারপরও তারা পতাকা হাতে করে, কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
গত কয়েকদিন ঢাকার গুলিস্তান, পল্টন ও শাহবাগে সরেজমিনে দেখা গেছে, পতাকা বিক্রেতারা কখনোবা কাঁধে করে আবার কখনো বা ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে করে বিক্রি করছে বিভিন্ন আকারের পতাকা। তবে অন্য সময়ের চেয়ে পতাকার কদর একটু বেশি হওয়ায় দাম নিচ্ছেন একটু বেশি। ১০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দুইশ’ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে এসব পতাকা।
পতাকার ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচিত ইউসুফ জানান, সংসার চালানোর জন্য পতাকা ফেরি করি না। পথে পথে ঘুরি দেশপ্রেম বিলিয়ে দিতে। মানুষ আমাকে দেখে নয়, পতাকা দেখে কাছে আসে। এটাই তো দেশপ্রেম।
পতাকা বিক্রেতা কামাল বলেন, পতাকা দেখলে তরুণরাই কাছে ছুটে আসে। ছবি তোলে। এটা ভালো লাগে। কত মানুষের মোবাইলে আমার ছবি আছে! কিন্তু সবার কাছে আমাদের দেশের পতাকাই বেশি দামি, মূল্যবান। জাতীয় দিবসগুলোতে পতাকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তাদের উপস্থিতিও বেশি দেখা যায়। ডিসেম্বর মাসে কোনো কাজ না থাকায় বিজয়ের পতাকা বিক্রির পাশাপাশি সামান্য আয় করি।
নাজিরাবাজারে থাকেন আলী হোসেন। অফিস থেকে বাসায় যাচ্ছিলেন হেঁটে। গুলিস্তান থেকে পতাকা বিক্রেতা বাবুল মিয়ার কাছ থেকে তার ছেলের জন্য পতাকা কিনছিলেন। এ সময় তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার ছেলে ক্লাস ওয়ানে পড়ে। তাকে লাল-সবুজের পতাকা কিনে দিলাম। সে পতাকা দেখে অনেক প্রশ্ন করবে। তখন তার সব প্রশ্নের উত্তর দেবো। সন্তানকে বিজয়ের গল্পের কথা জানানোর দায়িত্বটা তো আমাদেরই।