Logo
×

Follow Us

লাইফস্টাইল

ছাদ বাগান করতে করণীয়

Icon

ফারজানা শশী

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২১, ১১:৪৭

ছাদ বাগান করতে করণীয়

ছাদ বাগান

ছাদে বাগান কোনো নতুন বিষয় নয়। অতি প্রাচীন সভ্যতাতেও ছাদে বাগানের ইতিহাস রয়েছে। খ্রিস্টের জন্মেরও আগে মেসোপটেমিয়া ও পারস্যের জুকুরাক নামীয় পিরামিড আকৃতির উঁচু পাথরের স্থাপনায় বাগান ও ছোট গাছ লাগানোর জন্য স্থান নির্ধারণ করার নিদর্শন পাওয়া যায়। শহরাঞ্চলে ফুল, ফল ও সবজির বাগান এখন আর কেবলই শৌখিনতা বা পারিবারিক প্রয়োজন নয়। পরিবেশ রক্ষা আর নগরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে ছাদ বাগান অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখছে। আমাদের দেশেও প্রাতিষ্ঠানিক নয় বরং একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগেই ছাদবাগানের সূচনা। 

খিলগাঁও সি ব্লকের ফরিদা আখতার তার চারতলা বাড়ির ছাদেই গড়ে তুলেছেন বিশাল ছাদবাগান। সেখানে ফলেছে আম, পেয়ারা, ডালিম, লেবুসহ নানা ফুল ও ফল। তিনি নিজেই যত্ন করেন গাছের। 

ফরিদা আখতার জানালেন, যখন বাড়ি একতলা ছিল তখন বাড়ির সামনের খোলা জায়গায় অনেক গাছ ছিল। বাড়ি করতে গিয়ে সেসব গাছ কেটে ফেলতে হয়েছে। তাই ছাদেই এখন বাগান করি। অবসর জীবনে এই ছাদবাগান আমার সবচেয়ে বড় সঙ্গী। আমার সময় কেটে যায় বাগানের দেখাশোনা করতে করতে। 

ফ্ল্যাট বাড়িগুলোতেও ছাদ ফাঁকা না রেখে বাগান করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে বাসিন্দাদের। সবাই মিলে ছাদের জায়গা ভাগ করে নিয়ে যার যার মতো গাছ লাগাচ্ছেন। ছাদ বাগান করতে হলে আগে কিছু ধারণা থাকা প্রয়োজন। সেই ধারণাগুলো জেনে নেওয়া যাক। 

ধারণক্ষমতা : ছাদে বাগান করতে হলে অবশ্যই জেনে নেওয়া উচিত ধারণক্ষমতা কতটুকু। বাড়ির ধারণক্ষমতার ওপর নির্ধারণ করতে হবে কোন ধরনের গাছ লাগানো সম্ভব। কোনো কারণে যদি ধারণক্ষমতা কম হয় তাহলেও চিন্তার কিছু নেই। অল্প মাটিতে ছোট গুল্মজাতীয় গাছের বাগান করাও সম্ভব।

সূর্যের অবস্থান : যে কোনো গাছের বেঁচে থাকার জন্য সূর্যালোক একটি অপরিহার্য বিষয়। তাই বাগানের নকশা তৈরি করার আগে ছাদের কোন দিক থেকে রোদ আসে এবং ঋতুভেদে রোদ কোনদিকে সরে যায় ইত্যাদি বিষয় দেখে নেওয়া ভালো। বাগানের গাছ বাছাই করতে হবে রোদের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত ছাদে সরাসরি সূর্যের আলো অনেক সময় ধরে পাওয়া যায়। তাই সবজির চাষ করা বেশ সুবিধাজনক। তবে রেলিংয়ের অবস্থান বা পাশের বাড়ির উচ্চতার কারণে বাগানে ছায়া পড়তে পারে। এক্ষেত্রে সারাদিনে কতক্ষণ এবং কোনদিকে বেশি রোদ পাওয়া যাবে এসব বিবেচনা করে তারপর বাগানের নকশা করতে হবে।

বাতাসের দিক : সাধারণ বাগানের থেকে ছাদের বাগানে বাতাসের চলাচল একটু বেশিই হয়ে থাকে। এমনিতে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল সব ধরনের গাছের জন্যই ভালো। তবে অতিরিক্ত বাতাস গাছের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। এ ছাড়াও ঝড়ো বাতাসে গাছ নুয়ে পড়তে পারে। তাই ছাদে বাগানের নকশায় রোদের অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের দিকও বিবেচনায় রাখা দরকার।

ছাদ যদি খুব উঁচুতে হয় এবং আশপাশে আর কোনো উঁচু দালান না থাকে তবে বাতাসের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য বেড়া দিতে হবে। বাতাস যেন মাটির আর্দ্রতাও কেড়ে না নেয় তা নিশ্চিত করতে মাটির ওপর খড়ের বা প্লাস্টিক চাদরের আবরণও দিতে পারেন।

পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা : বাগানের মাটি থেকে বের হওয়া অতিরিক্ত পানি ছাদের কংক্রিটের ক্ষতি করতে পারে। এ ছাড়াও ছাদে আগাছা জন্মে ছাদের মেঝেকে পিচ্ছিল ও ক্ষয় করে ফেলে, তাই যে গাছই বোনা হোক না কেন এবং যে পদ্ধতিতেই বোনা হোক না কেন পানি নিষ্কাশনের জন্য সঠিক পরিকল্পনা থাকতে হবে। যদি টবে গাছ বোনা হয় তাহলে এর নিচে আরও একটি মাটির ট্রে রাখা হয়। এটি অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত নয়। উপরন্তু মাটির ট্রে পানি শোষণ করে সেটিকে ছাদের মেঝেতেই পৌঁছে দেয়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি ছাদের মেঝেতে পানি নিরোধক কোনো রঙ, টাইলস বা আলকাতরার একটা স্তর তৈরি করে তার ওপরে যথাযথ একটা নিষ্কাশন নালার ব্যবস্থা করা যায়। নালার ওপরে একটা ছাঁকনি রাখা যেতে পারে। এতে পানির সঙ্গে ধুয়ে যাওয়া মাটি নিষ্কাশন নালা বা ছাদে না পড়ে ছাঁকনিতে আটকে থাকবে। এভাবে মাটি এবং ছাদ উভয়ের ক্ষয় রোধ করা যাবে। অনেকেই পানি নিষ্কাশনের জন্য ছাদের এক কিনারা সামান্য ঢালু রাখেন এটিও বেশ ভালো উপায়। তবে কিছুতেই ছাদের কোনো কিনারা ভেঙে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা যাবে না। এতে স্থাপনার বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

মাটি দেওয়া : ছাদের বাগানে দু’ভাবে মাটি স্থাপন করা যায়। কোনো পাত্র বা টবের মধ্যে অথবা ছাদকে পানিরোধী করে সরাসরি মাটি ফেলে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। প্রথম ক্ষেত্রে ছোট ছোট টব বাছাই না করে বড় ট্রে বা প্লাস্টিকের বাক্স নেওয়া যেতে পারে। অনেকেই সিমেন্টে ঢালাই করা বড় টব বানিয়ে নেন। তবে এ ধরনের টবের ওজন অনেক বেশি হয় ফলে ছাদের ধারণক্ষমতার বড় অংশই কংক্রিটের টব দখল করে ফেলে। টব বা সরাসরি মেঝে যেভাবেই মাটি ফেলা হোক না কেন, মাটির ধরন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে। ছাদের বাগানের মাটি এমন হতে হবে যেন তা হালকাও হয় এবং পানিও ধরে রাখতে পারে। বেলে মাটির সঙ্গে সবুজ সার মিলিয়ে তৈরি করা মাটিই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয়।

গাছ বাছাই : সব কিছু সঠিকভাবে করার পর এখন গাছ বাছাইয়ের পালা। যেহেতু বাগানটি ছাদে হবে তাই অন্য সব কিছুর মতো গাছ বাছতে হবে ভেবে-চিনতে। ছাদের বাগানে ফুল, ফল বা সবজি যে ধরনের গাছই লাগান না কেন গাছের আকার যতটা সম্ভব ছোট রাখবেন। যদি ফল গাছ বোনার পরিকল্পনা থাকে, তবে গাছের উচ্চতা কম রেখে, বেশি ডালপালার ঝাড় রাখুন। লম্বা কাণ্ডের কম ডালপালার গাছের অসুবিধা হচ্ছে এই ধরনের গাছ অল্প বাতাসেই নুয়ে যাওয়ার বা কাণ্ড ভেঙে যেতে পারে। ছাদে বোনার জন্য লতানো এবং কম উচ্চতার গাছ নেওয়া সবদিক দিয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। যেসব গাছের শিকড় বেশি গভীরে প্রবেশ করে সেসব গাছও ছাদের বাগানে লাগাবেন না। শিকড় পাশের দিকে বেশি ছড়ায় এমন গাছই ছাদের বাগানের জন্য উৎকৃষ্ট।

ছাদবাগানে লাগানোর মতো কিছু গাছ

ফল : পেয়ারা, পেঁপে, কলা ইত্যাদি হালকা ওজনের গাছ লাগানো যেতে পারে। বড় গাছ যেমন আম বা লিচু লাগালে গাছের আকার যতটা সম্ভব ছোট হতে হবে। এ ছাড়াও আঙুরের মতো লতানো বা স্ট্রবেরির মতো একদম মাটিতেই জন্মানো গাছ বেছে নেওয়া যেতে পারে।

সবজি : প্রায় সব ধরনের সবজিই ছাদের বাগানে বোনা যায়। সব ধরনের শাক, লতানো-সবজি যেমন লাউ, কুমড়া, শিম থেকে শুরু করে মূলা, গাজর, ফুলকপি, ব্রোকলি, ক্যাপসিকাম, মরিচ বেগুন সবই বোনা সম্ভব।

ফুল : ফুলের বড় গাছ এড়িয়ে যে কোনো ধরনের ছোট ফুলের গাছ লাগানো যায়। গোলাপ, গাঁদা, বেলির মতো ছোট গাছের ফুল অথবা অপরাজিতা, মর্নিং গ্লোরি ইত্যাদি লতানো গাছ বেড়া তুলে দিয়ে চাষ করা সম্ভব।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫