অ্যালোপিশিয়া অরিয়াটা: উইল স্মিথের স্ত্রীর কী এই রোগ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২২, ১২:১৬

জেডা পিনকেট স্মিথ অ্যালোপিশিয়া অরিয়াটা রোগে আক্রান্ত। ছবি : রয়টার্স
অস্কারের মঞ্চে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন হলিউড অভিনেতা উইল স্মিথ। তার স্ত্রী জেডা পিনকেট স্মিথকে নিয়ে চটুল রসিকতার ‘শাস্তি’ হিসেবে মঞ্চে উঠে গিয়ে সঞ্চালক তথা কমেডিয়ান ক্রিস রককে সপাটে একটি চড় মেরেছিলেন স্মিথ। আর এই চড়ের সঙ্গে আলোচনায় এল অ্যালোপিশিয়া রোগটি।
পিনকেট নিজেও একজন অভিনেত্রী। ২০১৮ সালে এলোপিশিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তার চুল ঝরে যায়। আর তার মুণ্ডিত মাথা নিয়ে রসিকতা করেছিলেন ক্রিস, যা সহ্য হয়নি উইল স্মিথের। তাই তিনি চড় কষেছিলেন, পরে অবশ্য দুঃখও প্রকাশ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস বলছে, অ্যালোপিশিয়া অরিয়াটা রোগটি তখন হয়, যখন কোনো ব্যক্তির দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা চুলের ফলিকলকে আক্রমণ করে। আর এর ফল হিসেবে চুল ঝরে পড়ে। শুধু তাই নয়, ওই অংশে নতুন চুল গজানোর প্রক্রিয়াও বাধাপ্রাপ্ত হয় অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটার প্রভাবে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, শরীরের বা মাথার কোনও বিশেষ বিশেষ অংশের হেয়ার ফলিকলকে ‘ত্রুটি’ বশত শরীরের ‘শত্রু’ হিসাবে চিহ্নিত করে এবং শ্বেতকণিকার আক্রমণে ওই বিশেষ অংশের হেয়ার ফলিকলের কার্যক্ষমতা সম্পূর্ণ রূপে নষ্ট হয়ে যায়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, রোগীর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে এই আক্রমণ করে থাকে। কিন্তু কেন এই ভুল হয়, সেটার নিশ্চিত কারণ এখনো বের করা যায়নি। জেনেটিক কারণে কেউ যেমন এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, আবার তার বাইরে পরিবেশগত কারণেও আক্রান্ত হতে পারেন।
চুল পড়ে যাওয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এর একটি হলো অ্যানাজেন ইফফ্লুভিয়াম। নানা রকম ওষুধ ও কেমোথেরাপির জন্য যখন চুল পড়ে, তাকে অ্যানাজেন ইফফ্লুভিয়াম বলে। আর চুলের ফলিকল যখন রেস্টিং স্টেজে যায়, তখন তাকে টেলোজেন ইফফ্লুভিয়াম বলে। চুলের ফলিকল রেস্টিং স্টেজে যাওয়া মানে চুল আর বড় না হওয়া এবং একসময় বেশি হারে চুল ঝরে যাওয়া।
মূলত অ্যালোপিশিয়া অরিয়াটা রোগে আক্রান্ত রোগীর চুল ও মুখমণ্ডলেই এই রোগের প্রভাব পড়ে। সাধারণত মাথার কোনো একটি অংশ থেকে চুল ঝরে পড়ে, অনেকটা দ্বীপের মতো গোলাকৃতি অংশ চুলশূন্য হয়ে পড়ে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে বড় অংশজুড়েও এমনটা দেখা যায়।
ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস জানিয়েছে, অ্যালোপিশিয়ায় আক্রান্তদের আর কোনো লক্ষণ থাকে না। অন্য সব ক্ষেত্রে সুস্থই থাকেন আক্রান্ত ব্যক্তি।
কারণ
- যেকোনো দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থতা (যেমন যক্ষ্মা, টাইফয়েড), কোনো অস্ত্রোপচারের পর, রক্তস্বল্পতা, ওজন কমে যাওয়া, হজমের সমস্যা বা পরিপাকতন্ত্রের সমস্যার কারণে চুল বেশি হারে পড়তে পারে।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ, কর্মব্যস্ততা, খুশকি, মাথার ত্বকের অপরিচ্ছন্নতা, অতিরিক্ত ডায়েট ও পুষ্টিহীনতার কারণেও টাক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- মূত্রনালির প্রদাহের কারণেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- গর্ভাবস্থা, মেনোপজের পর বা মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অতি মাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ গ্রহণ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবনেও এই সমস্যা দেখা দেয়।
- এছাড়া বংশগত কারণেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা
প্রথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু করলে এই রোগ নির্মূল করা সম্ভব। কখনো কখনো দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায় সারিয়ে তোলা হয় অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটাতে আক্রান্ত রোগীকে।
ওষুধ, ইনজেকশন বা আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিকে কাজে লাগিয়ে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এটি কোনো সংক্রামক রোগ নয়। এর অন্য কোনো ক্ষতিকারক প্রভাবও শরীরে পড়ে না। মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই রোগ বংশগত হতে পারে।