Logo
×

Follow Us

লাইফস্টাইল

জীবনের নানা রঙ : বিষণ্ণতা

Icon

আফরোজা চৈতী

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২২, ১৩:২২

জীবনের নানা রঙ : বিষণ্ণতা

প্রতীকী ছবি

বিষণ্ণতা চার অক্ষরের একটি শব্দ। ইংরেজিতে যাকে আমরা বলি ডিপ্রেশন। কেন হয় এই ডিপ্রেশন? মনোবিজ্ঞানীদের কঠিন ভাষায় না বলে যদি সহজ ভাষায় বলি- যখন চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে আর মিল পাওয়া যায় না- এই ডিপ্রেশনের শুরু ঠিক সেখান থেকেই। আধুনিক হচ্ছে বিশ্ব, আধুনিক হচ্ছে মানুষ; কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বস্তুগত চাহিদার নানা আবদার। আর সেই আবদারের চাহিদায় ঘাটতি পড়লেই শুরু হয়ে যাচ্ছে মন খারাপ, হতাশা আর ভালো না লাগা। দীর্ঘদিনের সংসার ভেঙে যাওয়া, দাম্পত্য কলহ, প্রিয় সন্তানের অবাধ্যতা, প্রেম বা হৃদয়ঘটিত প্রতারণা, প্রিয়জনদের সঙ্গে দূরত্ব, শিক্ষা বা পেশাগত ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল না পাওয়া, অর্থনৈতিক দুর্বলতা, চাকরি চলে যাওয়া, ব্যবসায় ক্ষতি ইত্যাদি নানা কারণেই মানুষ বিষণ্নতায় আক্রান্ত হতে পারে। 

মানুষের জীবন কখনো সরলরেখায় চলে না। জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যেটা হয়তো মানুষ দুঃস্বপ্নেও ভাবে না। অথচ সেই দুঃস্বপ্ন হয়তো তার জীবনে নিয়তি হয়ে ধরা দেয়, তখন শত চেষ্টা করেও বিষণ্নতার ঘেরাটোপ থেকে বের হতে পারে না তারা। তবে এই মানসিক বিষণ্নতা শুধুই যে মনকে বিষণ্ন করছে সেটা নয় বরং এই বিষণ্নতার কারণে দেখা দেয় হাইপারটেনশন, হার্টের সমস্যা, ডায়বেটিসসহ নানা ধরনের রোগ। তাই এই সময়ে নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া বিশেষ জরুরি।

আর এজন্য প্রথমেই আপনার যে কাজটা করতে হবে সেটা হলো নিজের প্রতি মমতা। নিজের প্রতি মমত্বশীল হোন। আমি অপয়া, আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না- এই জাতীয় নেতিবাচক কথা মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন। একটি জিনিস মনে রাখবেন আপনিই আপনার সব ক্ষমতা ও শক্তির উৎস। আর সেই আপনিই যদি আপনার বিরুদ্ধে চলে যান তখন কী হবে বলুন? তাই প্রথম যেটা করতে হবে- যে পরিস্থিতিতেই আপনি থাকুন না কেন নিজেকে কখনোই দোষারোপ করবেন না, ছোট করবেন না। হয়তো সময়টা এখন খারাপ যাচ্ছে। কিন্তু এক সময় আসবে যখন এই সময় আপনার পক্ষেই হাসবে। কাজেই নিজেকে ক্ষমা করতে শিখুন, নিজের প্রতি মমত্বশীল হোন।

এরপর দ্বিতীয় যে বিষয়টি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো ধৈর্য। হয়তো এমন একটি ঘটনা ঘটেছে যা আপনার পুরো জীবনটাকেই এলোমেলো করে দিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে একমাত্র সমাধান ধৈর্য। জীবনকে কখনো কখনো পাখির চোখে দেখার অভ্যাস করুন। যে পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে আপনি যাচ্ছেন সে পরিস্থিতিতে নিজেকে একজন নিরপেক্ষ দর্শক বানিয়ে দেখুন। দেখবেন আপনি নিজেই অনেক সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়েছেন। ইতিবাচক মানসিকতার মানুষের সঙ্গে থাকুন এবং নিজেও ইতিবাচক মনোভাব নিজের ভেতরে ধারণ করুন। জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব অপরাহ উইনফ্রে বলেছিলেন, ‘আমি এমন একটি পরিবার থেকে এসেছিলাম যেখানে আমি অবহেলিত দরিদ্র এক জীবন কাটিয়েছিলাম। কিন্তু আমি সব সময়ই বিশ্বাস করেছি এই অবস্থা থেকে নিশ্চয়ই আমি একদিন উন্নতি লাভ করব। আমি সব সময়ই ইতিবাচকভাবে জীবনকে দেখার চেষ্টা করেছি।’

তৃতীয় যে বিষয়টি মনে রাখবেন সেটা হলো- সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ কিন্তু টাকা-পয়সা বা প্রতিপত্তি নয়, সেটা হলো মনের শান্তি। একে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেবেন না। ভালো বা মন্দ যা কিছুই ঘটে যাক সেটা নিয়ে খুব অস্থির না হয়ে ঠান্ডা মাথায় মোকাবেলা করুন। বিপদ বা খারাপ সময়ে বন্ধুরাও দূরে সরে যায়, তারপরও যদি এমন কোনো বন্ধু থাকে যার সঙ্গে এক কাপ কফি খেতে খেতে অনেক জমানো কথা বলে, চোখ থেকে দু ফোঁটা বৃষ্টি ঝরিয়ে হালকা হতে পারেন তবে তাই করুন। 

চতুর্থ বিষয় হলো- নিজের ভেতরে খুব ছোট ছোট বিষয়ে আনন্দময়তা তৈরি করা। বিষণ্নতা থেকে মুক্তির সবচেয়ে বড় উপায় হলো নিজের ভেতরে আনন্দকে ধরে রাখা। ছোট ছোট কাজ বা শখগুলোকে সময় দিন- যেমন বাগান করা, লেখালেখি বা ঘুরে বেড়ানো। যেটা আপনার ভালো লাগে চেষ্টা করুন সেই ভালো লাগার কাজটি করতে আর নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে। বা নতুন কিছু শিখতে পারেন যা আপনার পছন্দ। হতে পারে রান্না, সাইক্লিং, নতুন কোনো ভাষা, কোনো কোর্স, থিয়েটার।

সবশেষে হলো ব্যস্ত থাকুন। নিজেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখুন। বন্ধুদের সঙ্গে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে চলে যেতে পারেন নদী, সমুদ্র বা পাহাড়ের কাছে। প্রকৃতি অনেক বড় হিলার। প্রকৃতির বিশালতার কাছে তখন নিজের দুঃখ-কষ্টগুলো ভীষণ ম্লান মনে হবে। জীবন আসলে সুন্দর। আর আমাদের জীবন প্রকৃতিরই অংশ। তাই আপনি যখন প্রকৃতির কাছে যাবেন তখন নিজেকে ভীষণ হালকা মনে হবে। দিন শেষে নিজেকে নিজের কাছে ভারী হতে দেবেন না। নিজেকে নিজের কাছে বোঝা না করে বরং দারুণ একজন বন্ধু করে তুলুন। যে বন্ধু চরম দুঃসময়েও আয়নায় তাকিয়ে আপনাকে ভেংচি কেটে বলবে, ‘এই একটু দাঁত কেলিয়ে হাসি দে তো দোস্ত।’ বিষণ্নতা নয়, আমাদের সাথি হোক আনন্দময়তা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫