
প্রতীকী ছবি
নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, এতে কম খরচে গুছিয়ে সংসার চালানো নিঃসন্দেহে কঠিন একটি কাজ। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সামাল দিয়ে ভবিষ্যৎ জীবনে আর্থিক সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা।
প্রাথমিক প্রস্তুতি : প্রথমেই আয়, ব্যয়, ধার ও সঞ্চয়ের একটা হিসাব করে ফেলতে হবে। মাসের প্রথম ছুটির দিনে পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে পরিবারের বাজেট ঠিক করুন। বড়রা তো নিশ্চয়ই, বাড়ির খুদে সদস্যদের, বিশেষ করে টিনএজার ছেলে-মেয়েদেরও এই মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে বলুন। সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট ডায়েরি রাখুন, যেখানে শুধুই মাসের খরচের হিসাব লেখা থাকবে। খরচের একটা খসড়া করে ফেলুন। প্রথমেই দেখে নিন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ও মেইনটেন্যান্সের খাতে কতটা খরচ হতে পারে। মাসের বাঁধাধরা খরচের টাকা যেমন- ইলেকট্রিক বিল, বাজার খরচ, ফোনের বিলের টাকা, কাজের লোকের বেতন, ছেলেমেয়ের স্কুল, টিউশন ফি ও আরও অন্য খরচ আলাদা ভাগ করে নিন। সম্ভব হলে আলাদা আলাদা খামে ভরে, উপরে নাম লিখে রাখুন। এতে বাড়তি খরচ হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।
কেনাকাটা করার সময় : বাজার করতে গিয়ে টাকা খরচ করার জন্য হাত নিশপিশ করে? যতটা বাজেট ঠিক করে গিয়েছিলেন অবধারিতভাবে তার থেকে বেশি খরচ করে চলে আসেন? আসলে পরিবারের জন্য শপিং হোক বা দৈনন্দিন বাজার, পছন্দের সঙ্গে সাধ্যের সামঞ্জস্য রাখা অত্যন্ত জরুরি। বাজার করতে যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় জিনিসের একটি নির্দিষ্ট তালিকা বানিয়ে নিন, যাতে দোকানে গিয়ে অযথা বাড়তি খরচ না করে ফেলেন। অনেক সময় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে গেলে চোখের সামনে নানা রকম অত্যাধুনিক জিনিস দেখে মন চঞ্চল হয়ে যেতেই পারে। যে জিনিসের প্রয়োজন আপনার একেবারেই নেই, তাও হয়তো হুট করে কিনে ফেলেন। তাই অবশ্যই তালিকা সঙ্গে রাখুন। একটা দোকানে ঢুকেই সব জিনিস একসঙ্গে কিনে ফেলবেন না। দু-তিনটি দোকান ঘুরে দেখে তবেই জিনিস কিনুন। কোনো একটি দোকানে যে জিনিসের দাম হয়তো বেশি, অন্য কোনো দোকানে তাই কম দামে পেয়ে যেতে পারেন। খুচরা পরিমাণে জিনিস না কিনে একসঙ্গে বেশ কিছুটা পরিমাণে জিনিস কিনলে দাম তুলনায় অনেকটাই কম পড়ে। মাসের শুরুতেই ঠিক করে নিন মোটামুটি আপনাকে কী কী কিনতে হবে। মাসে একবার হাউসহোল্ড গুডস- যেমন তেল সাবান বা বাথরুমের জিনিসপত্র কিনুন। আর তরকারি, সবজি, মাছ, গোশত, ডিমজাতীয় জিনিস সপ্তাহে একবার কিনুন।
মাসিক বাজার একসঙ্গে কিনুন : কাঁচা বাজার ছাড়া চাল, ডাল, তেল, লবণসহ বাকি সবকিছু এক মাসের জন্য একবারে কিনে রাখুন। এতে আপনার বারবার বাজারে যাওয়ার জন্য খরচ আর সময় দুটোই বাঁচবে।
রান্নাঘরের বাজেট : সম্ভব হলে দুই-তিন দিনের মেন্যু আগে থেকে ঠিক করে নিন। এতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জিনিসের অহেতুক অপচয়ও কমবে। রান্না শুরু করার আগে প্রয়োজনীয় সব জিনিস গুছিয়ে নিন। গ্যাস জ্বালিয়ে খুঁজতে বসবেন না। এতে গ্যাসের অকারণ অপচয় হয়, যা রাষ্ট্রের সম্পদ ধ্বংসের শামিল। রান্না করার আগে উপকরণের পরিমাণের দিকে বিশেষ নজর দিন। অনেকেরই অভ্যাস আছে বেহিসেবিভাবে বেশি জিনিস নেওয়া। ফলে খাবার নষ্ট হয় যা একেবারেই কাম্য নয়। সেজন্য প্রথম থেকেই একটু সতর্ক থাকলে এই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে না।
যানবাহনে খরচ কমান : যানবাহনে খরচ কমানোটা বোধহয় সম্ভব নয়, তাও চেষ্টা করুন অপেক্ষাকৃত কম খরচের বাহনে চড়তে। যেখানে বাসে করে যাওয়া সম্ভব, সেখানে ট্যাক্সিতে চড়বেন না। হাঁটার সুযোগ থাকলে রিকশায় না চড়ার চেষ্টা করুন।
সন্তানকে টাকার মূল্য বোঝান : মা-বাবা তো সন্তানের সুযোগ-সুবিধার দিকে নজর রাখবেনই, তবে তাই বলে সন্তান যখন যা চাইবে তাই হাজির করে দিতে হবে তার কোনো মানে নেই। সন্তানকে দায়িত্বশীল করে তুলুন। পকেটমানি নিশ্চয় দেবেন, তবে টাকার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে ভুলবেন না। সন্তানকে সেভিংয়ের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানান। এতে সন্তান পকেটমানি থেকে সেভ করতে আগ্রহ পাবে। ওকে একটা সুন্দর পিগি ব্যাংক উপহার দিন। মাসে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা ওকে পকেটমানি হিসেবে দিন। সন্তানের সঙ্গে একটি জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খুলুন। আপনার সঙ্গে সন্তানকেও ব্যাংকে নিয়ে যান। চেকবই, পাসবইয়ের ব্যবহার শেখান। ইন্টারেস্ট বা সুদের হিসাবও বুঝিয়ে দিন। মাসে মাসে অ্যাকাউন্টে জমানোর জন্য একটা টাকার অঙ্ক দিন। এই সেভিংস পরে ওর কাজে আসতে পারে।
ফোনের ব্যবহার : অনেকে অকারণেই ফোনে কথা বলতে অভ্যস্ত। প্রতিটি শব্দ উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে টাকা দিতে হচ্ছে তা যেন আমরা ভুলেই যাই। সেলফোন বা ল্যান্ডলাইন ফোনের ব্যবহার সীমিত রাখুন। গল্প করার জন্য ফোন ব্যবহার করবেন না। কাজ না থাকলে ফোন করে অহেতুক টাকা নষ্ট করবেন না। মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে চিন্তাভাবনা করে স্কিম নির্বাচন করুন। ফোন বিল নিয়ন্ত্রণ করতে প্রি-পেইড সার্ভিস বাছতে পারেন। নির্দিষ্ট খরচের উপর চলে গেলে ফোন করা কমিয়ে দিন। মাসের শুরুতেই ফোনের জন্য একটা বাজেট নির্দিষ্ট করে নিন।
অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন : কোন খাতে কতটা খরচ করবেন তা ঠিক করে নিন। অতিরিক্ত খরচ করবেন না। আয় বুঝে খরচ করুন। কেউ হয়তো ডিপ ফ্রিজ কিনল, সেটা হয়তো তার প্রয়োজন। কিন্ত এখন যদি আপনি তার কেনা দেখে অপ্রয়োজনে একটা ডিপ ফ্রিজ কিনে ফেলেন তাহলে সেটা কিন্তু আপনার জন্য বাড়তি খরচ। তাই কারো সঙ্গে অসুস্থ প্রতিযোগিতা করবেন না।
চিকিৎসা খাতে টাকা রাখুন : চিকিৎসার জন্য প্রতিমাসে অবশ্যই কিছু টাকা আলাদা করে রাখবেন। এতে হঠাৎ প্রয়োজন হলে সমস্যায় পড়বেন না।