চিনে নিন ঢাকার সেরা মেক্সিকান খাবারের রেস্টুরেন্টগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২২, ১৫:২৯

এল তোরো রেস্টুরেন্টের খাবার। ছবি- সংগৃহীত
গত কয়েক বছরে ঢাকায় বেশ কয়েকটি মেক্সিকান রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। যাদের মূল আকর্ষণ টাকো। স্বাদ এবং ঝাল মসলার ব্যবহারে স্থানীয় খাবারের সাথে মেক্সিকান পদের বেশ সামঞ্জস্য রয়েছে।
ঢাকার শীর্ষ তিনটি মেক্সিকান খাবারের রেস্টুরেন্ট হলো- এল তোরো, তালতিবাজ এবং তাকিয়েরা লোলা। তিনটি রেস্টুরেন্টই ঢাকার গুলশানে অবস্থিত।
এল তোরো
মেক্সিকান খাবারের রেস্টুরেন্টের কথা বললে সবার আগে যেটির কথা মাথায় আসবে, সেটি হলো এল তোরো। এটি বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো মেক্সিকান খাবারের রেস্টুরেন্ট। ১৯৯৫ সালে যাত্রা শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত তিনবার এই রেস্টুরেন্টটির স্থানান্তর হয়েছে। ২৭ বছর ধরে সাফল্যের সাথে যাত্রা অব্যাহত রেস্টুরেন্টটি বর্তমানে গুলশান-২ এর য়েস্টিন হোটেলের পেছনে অবস্থিত।
এই রেস্টুরেন্টের খাবারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ট্যাম্পিকো চিকেন ট্যাকো। কয়েক লেয়ারের ময়দা দিয়ে তৈরি ট্যাকো শেলের মধ্যে আস্ত মুরগি, টমেটো, লেটুস এবং একটি মশলাদার ট্যাকো সস দিয়ে এ খাবারটি পরিবেশন করা হয়।

এ রেস্টুরেন্টের আরেকটি সুস্বাদু খাবার হচ্ছে গরুর মাংসের নাচোস। টমেটো, মরিচ, সবুজ পেঁয়াজ এবং ক্রিমপূর্ণ টর্টিলা চিপসের সাথে পরিবেশন করা খাবারটি সুস্বাদের জন্য অনেকের কাছে বেশ পছন্দনীয়। সেই সাথে অতিরিক্ত টর্টিলা চিপস স্বাদের মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দেবে।
চঙ্কি চিকেন কোয়েসাদিলা এখানকার আরেকটি জনপ্রিয় খাবার। ময়দা দিয়ে তৈরি টর্টিলার ভেতরে গলিত চেডার পনিরের সাথে হালকাভাবে মাখন, রসুন এবং জিভে জল আনা ক্রিম সসের মাধ্যমে খাবারটি পরিবেশন করা হয়।
পানীয়ের মধ্যে এখানকার অন্যতম জনপ্রিয় হচ্ছে পিনা কোলাডা নামের একটি মকটেল। তবে পানীয়টি পানের পর আপনার মধ্যে তন্দ্রাভাব আসবে। এছাড়া, তাৎক্ষণিকভাবে আপনাকে সতেজ করার জন্য রয়েছে অ্যাপেল আইসড চা।
এল তোরো রেস্টুরেন্টে ২২০ থেকে ১,০৫০ টাকার মধ্যে আপনি নিজের পছন্দমতো খাবার বেছে নিতে পারবেন। ২০১৬ সালের হোলি আর্টিসান হামলা এবং ২০২০ সালের করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে রেস্টুরেন্টটি বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কথা জানিয়ে রেস্টুরেন্টটির ম্যানেজার মহিউদ্দিন আহমেদ দুলাল বলেন, এমনও দিন আছে যখন আমাকে একসাথে শেফ, ম্যানেজার এবং ওয়েটার- তিন দায়িত্বই পালন করতে হয়েছে।
তাকিয়েরা লোলা
তাকিয়েরা লোলা রেস্টুরেন্টটির বয়স খুব বেশিদিন না, মাত্র ৬ মাস। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার গুলশান এভনিউয়ে উদ্বোধন হওয়া এ রেস্টুরেন্টটি উচ্চ স্তরের আধুনিক ইন্টেরিয়র ডিজাইনে সজ্জিত।
রঙিন ফ্লোরাল ওয়ালপেপার এবং মেঝেতে সাজানো জ্যামিতিক প্যাটার্নটি মেক্সিকান সংস্কৃতি এবং খাবারের বৈচিত্র্যের প্রতিনিধিত্ব করে। এ রেস্টুরেন্টের সবগুলো আইটেমই একটি ট্রেতে পরিবেশন করা হয়, দুর্দান্ত এবং অত্যাধুনিক রেস্তোরাঁয় বসার পরেও যা আপনাকে স্ট্রিট ফুড খাওয়ার অনুভূতি এনে দেবে।
এই রেস্টুরেন্টের আইটেমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে বিফ বার্বাকোয়া। মূলত এটি কিছু রসালো চিপটল ব্রেইজড গরুর মাংস, ধনেপাতা এবং সবুজ মরিচের সংমিশ্রণে তৈরি একটি পদ, যা একটি ময়দার টর্টিলার ভিতরে চুন দিয়ে পরিবেশন করা হয়।

এছাড়া, গরম গলিত পনির থেকে তৈরি কোয়েসো ফান্ডিডো এখানকার আরেকটি জনপ্রিয় খাবার। বাহারি উপকরণ দিয়ে পরিবেশিত ভিন্ন স্বাদের এ আইটেমটি আপনার রুচি এবং তৃপ্তিকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
পানীয়ের মধ্যে হিবিস্কাস ফুল, দারুচিনি, কমলা, বরফ এবং সাধারণ সিরাপ দিয়ে তৈরি হিবিস্কাস এলিক্সির নামের বিদেশি পানীয়টি আপনাকে হয়ত হতাশ করতে পারে। তবে আনারস এক্সপ্রেস নামের মশলাদার পানীয়টি আপনার পছন্দ হতে বাধ্য।
তাকিয়েরা লোলা রেস্টুরেন্টে ১৮০ থেকে ৩৯৫ টাকার মধ্যে আপনি নিজের পছন্দমতো খাবার বেছে নিতে পারবেন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যগুলো এখনও তাদের সাধ্যের মধ্যে রয়েছে বলেই তাদের বিভিন্ন খাবারের দাম এখনও সর্বস্তরের মানুষের নাগালের মধ্যে। সম্প্রতি ফুডপান্ডার মাধ্যমে ডেলিভারি পরিষেবাও দেওয়া শুরু করেছে।
ঢাকা রেস্টুরেন্ট কনসেপ্টের বিজনেস ম্যানেজার তানভীর নাসের চৌধুরী বলেন, ‘গ্রাহকরা শুধু খাবারের জন্য নয়, অভিজ্ঞতার জন্যও আসে। রেস্টুরেন্টটির সবাই সত্যিই কঠোর পরিশ্রম করছে।’
তালতিবাজ
তালতিবাজ সম্ভবত প্রথম রেস্টুরেন্ট, যাদের খাবারে একই সাথে বাংলাদেশি এবং মেক্সিকান অনুভূতি মিশ্রিত। গুলশানে অবস্থিত জনপ্রিয় কৌতুক শিল্পী নাভিদের কমেডি ক্লাবের পাশেই মাত্র দুই মাস আগে রেস্টুরেন্টটি যাত্রা শুরু করলেও খাবার এবং স্বাদ ছাড়াও তারা নতুনত্ব নিয়ে এসেছে।
শেফ তাসনিমা রেজা দিশা রেস্টুরেন্টটির ব্যতিক্রমী পরিবেশ প্রসঙ্গে বলেন, অনেক রেস্টুরেন্টই নিজেদের লাইভ কিচেন বলে দাবি করে। কিন্তু কতজন লোক আপনাকে পুরো প্রক্রিয়াটি দেখতে দেয়? এখানে আপনি সবকিছু দেখতে পারবেন।

বাংলাদেশি এবং মেক্সিকান স্বাদের পছন্দের সমন্বয়ে তালতিবাজ রেস্টুরেন্টটির মেনু সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয় বাজা ভেটকি (বারামুন্ডি) টাকো, স্পাইসি শ্রিম্প ট্যাকো, চিকেন ঝাল ফ্রাই টাকো এবং চিকেন আল পাস্তোর।
স্পাইসি শ্রিম্প ট্যাকোতে গ্রিল করা চিংড়ি, বাঁধাকপি, মধু রসুন আইওলি, সালসা এবং ফ্রেসকা এর পুরোপুরি রান্না করা টুকরো থাকে। প্রথমে টুকরোগুলোকে তুলতে গিয়ে শক্ত মনে হলেও একবার ধরলে সেগুলো সহজেই তুলে ফেলা সম্ভব।
তালতিবাজ রেস্টুরেন্টে ১০০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে খাবারের দাম শুরু হয়। মুদ্রাস্ফীতির কারণে তাদের খাবারের দাম বাড়বে কি-না তা শিগগিরই বোঝা যাবে। পাঠাও এবং ফুডপান্ডার মতো অনেক পরিষেবার মাধ্যমে তার খাবার সরবরাহ করে থাকে। নতুন রেস্টুরেন্টে হিসেবে তারা ইতোমধ্যেই অনেকের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়েছে।
সেরা কে?
মেক্সিকান খাবারের রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে সেরা অভিজ্ঞতা হয়েছে তালতিবাজ রেস্টুরেন্টে। খাবারের মান, জনপ্রিয়তা, সাশ্রয়ী দাম এবং কর্মীদের বন্ধুত্বপূর্ণ এবং বিনয়ী ব্যবহার যে কাউকে ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতার মাধ্যমে মুগ্ধ করতে বাধ্য।
আর্থিক লাভ না হওয়ার কারণে এল তোরোর খাবারের দামের পাশাপাশি এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায়ও প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে, আমদানিকৃত কর্ন টর্টিলাসের কারণে দাম অনুযায়ী তাকিয়েরা লোলার খাবারের মান খুবই ভালো। সেই সাথে পাবেন মেক্সিকান ধাঁচও।
তবে সপ্তাহান্তে নৈশভোজের জন্য যদি আপনার কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে আমি নিঃসন্দেহে তালতিবাজে যেতে বলব। আপনি যাকেই সাথে নিয়ে যান না কেন, সেটি একটি দারুণ অভিজ্ঞতা হবে।