Logo
×

Follow Us

লাইফস্টাইল

অভিভাবকত্বের নানা ধরন

Icon

সাফওয়ানা জাবীন

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৩:০২

অভিভাবকত্বের নানা ধরন

প্রতীকী ছবি

অভিভাবকত্ব হলো বহু স্তরের বিষয়। এক স্তর আরেক স্তরের বিকল্প নয়, বরং পরিপূরক। কিছু অভিভাবকত্বের মেয়াদ কখনো শেষ হয় না। তবে সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সেটার মাত্রা ও ব্যাপ্তির পরিবর্তন ঘটে। কিছু ক্ষেত্রে অভিভাবকত্ব সাময়িক ও শর্ত সাপেক্ষ। বংশধারাভিত্তিক যে অভিভাবকত্ব তা স্থায়ী। সন্তানের উপর মা-বাবার যে অভিভাবকত্ব সেটার ধরন পরিবর্তন হয় সন্তানের বয়স ও অবস্থা সাপেক্ষে।

শিশুকালে একজন সন্তানের ব্যাপারে মা-বাবার যে ভূমিকা, কৈশোরেও তা অব্যাহত থাকে। অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের সব দায়িত্ব থাকে তার অভিভাবকের উপর। সন্তান প্রাপ্তবয়ষ্ক হয়ে যাওয়ার পর এই সব দায়িত্ব একেবারে শেষ হয়ে যায় না, আবার তা শৈশব-কৈশোরের মতো অতটা অবলিগেটরি হিসেবেও থাকে না। তবে সন্তান যদি মেয়ে হয়, তাহলে তাকে সাপোর্ট দেওয়া সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের স্থায়ী দায়িত্ব; যদি তাদের তেমন সামর্থ্য থাকে এবং সন্তানের যদি তেমন সাপোর্টের প্রয়োজন ঘটে।

দ্বিতীয় প্রকারের অভিভাবকত্ব হলো শর্তসাপেক্ষ। এই হিসেবে বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে স্থাপিত পারিবারিক সম্পর্কসহ যে কোনো ধরনের মুয়ামালাত তথা সামাজিক সম্পর্ক অভিভাবকত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত। সম্পর্কের ধরনের উপর নির্ভর করে অভিভাবকত্বের পরিসর ও মাত্রা। 

একটা শিশুর উপরে তাদের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব থাকে সব থেকে বেশি। কিন্তু কখনো কখনো অভিভাবকরা নিজেদের জীবনের জাঁতাকলে এমনভাবে জড়িয়ে পড়েন যে, তারা অজান্তেই সন্তানের বিভিন্ন চাহিদাকে অবহেলা করতে শুরু করেন। একে অমনোযোগী বা অযত্নশীল অভিভাবকত্ব শৈলী বলা হয়। অভিভাবকত্ব ও তার বিভিন্ন ধরন নিয়ে বহুদিন ধরে গবেষণা চলে আসছে। ১৯৬০ সাল নাগাদ উন্নয়নমূলক মনোবিজ্ঞানী ডায়ানা বাওম্রিন্ড বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে অভিভাবকত্বকে তিন ভাগে ভাগ করেন : আধিকারিক, স্বৈরাচারী ও প্রশ্রয়শীল। সাম্প্রতিককালে অন্য গবেষকরা চতুর্থ ধরন, অর্থাৎ অযত্নশীল অভিভাবকত্বকে এই তালিকায় যোগ করেন। অভিভাবকদের অবহেলা সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবনের উপরে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অযত্নশীল অভিভাবকত্বের ফলস্বরূপ নিম্নলিখিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

নিজেকে উপেক্ষিত মনে করা : আশৈশব নিজেকে অপ্রয়োজনীয় বা অবাঞ্ছিত মনে হয়, ফলে তারা কোনো সম্পর্কের গুরুত্ব বুঝতে শেখে না এবং নিজের মূল্যও বুঝতে পারে না। যা তাদের ভবিষ্যতের সম্পর্কের ভিতকে নাড়িয়ে দেয়।

সামাজিক যোগাযোগ : শিশুদের মনে সামাজিক আচরণ সম্পর্কে ধারণা তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকেই গড়ে ওঠে। কিন্তু শৈশব থেকেই বাড়িতে অবহেলিত হওয়ার কারণে তাদের মধ্যেও অন্যকে উপেক্ষা করার মতন মানসিকতা তৈরি হয়। বিভিন্ন গবেষণায় এটা দেখা গেছে যে এমন পরিবেশে তাদের মধ্যে অসামাজিক ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে, যার ফলে তারা স্বাভাবিকভাবে কারও সঙ্গে মিশতে পারে না।

বুলিং (নিপীড়ন) : শিশুদের মধ্যে বুলিং আটকাতে মা-বাবার এক বিশাল ভূমিকা রয়েছে। কারণ একমাত্র তারাই পারেন সন্তানকে নিপীড়ন সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা দিতে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যে শিশুরা অবহেলার মধ্যে বেড়ে ওঠে, তাদের সঙ্গী-সাথিদের বা বড় ভাই-বোনদের দ্বারা নিপীড়িত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। 

মাদকাসক্তির আশঙ্কা : বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মা-বাবার অবহেলা অনেক ক্ষেত্রেই সন্তানকে নেশা করার প্রবণতা ও আসক্তির আশঙ্কাকে বাড়িয়ে তোলে। 

কী করা যেতে পারে

যদি আপনি দেখেন যে আপনার সন্তান অগোছালো থাকছে, স্কুলে যাচ্ছে না, অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে অথবা সব সময় আলাদা বা বিচ্ছিন্ন থাকার চেষ্টা করছে তাহলে তার জীবনের সঙ্গে নিজেকে আরও বেশি করে জড়ানোর চেষ্টা করুন। নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে মা-বাবা যদি প্রথম থেকেই সন্তানের মতামতকেও গুরুত্ব দেন বা আলোচনার জায়গা তৈরি করে দেন, সেক্ষেত্রে সন্তানও সব কথা সরাসরি মা-বাবার সঙ্গে শেয়ার করে নেওয়ার কনফিডেন্স পায়। এতে মা-বাবাও প্রয়োজনে বিভিন্ন সেনসিটিভ বিষয় নিয়ে সরাসরি সন্তানের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান এবং আসন্ন অনেক জটিলতা থেকেই সন্তানকে আগে থেকে সাবধান করে দেওয়া সম্ভব হয়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫