প্রত্যাখ্যান এই শব্দটির মধ্যেই বেশ কঠিন একটি ব্যাপার আছে। আর সেই ব্যাপারটি যদি ঘটে প্রিয় কোনো মানুষের সঙ্গে তবে সেটা মেনে নেওয়া আরও কষ্টকর। সম্পর্কে প্রত্যাখ্যাত হলে অনেকেই মুষড়ে পড়েন। ভেবে নেন তার সবকিছু শেষ।

এই জীবনটার আর কোনো মানে নেই। প্রত্যাখ্যান মনের সবচেয়ে যে বড় ক্ষতিটা করে সেটা হলো- এটা আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানের জায়গায় আঘাত করে। যেটাকে অতিক্রম করা সত্যিই কষ্টকর।

যে কোনো সম্পর্ক সেটা হোক বন্ধুত্ব অথবা প্রেম সেখান থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর নিজের ভেতরে এক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। মানুষ এই শূন্যতাকে মেনে নিতে পারে না বলেই হতাশায় ভোগে, কষ্ট পায়। প্রত্যাখ্যান সত্যিই একটি কষ্টকর বিষয়। আমাদের শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলে বা পুড়ে গেলে আমরা সেখানে মলম লাগাই; কিন্তু মন যদি কেটে যায় সেখানেও ক্ষত হয়।

সেই ক্ষত সারাতে কি পদক্ষেপ আমরা নিই? না, নিই না। কারণ আমরা সেই বিষয়টিকে আমলেই নিই না। অথচ প্রত্যাখ্যানের সঙ্গে চুরমার হয় নিজস্ব ইগো আর অহংবোধটাও। যেটা মেনে নেয়া সত্যিই কষ্টকর। আর তাই প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর নিজেকে আবার ঠিকঠাক করে সামলে চলার যুদ্ধটা সহজ কিছু নয়। তবে এই সময়টাকে পাল্টে দিতে পারেন নিজেই। পাঁচ উপায়ে কাটিয়ে উঠুন প্রত্যাখ্যানের ক্ষত।

. প্রথমেই ভাবুন এটা একটি দুর্ঘটনা। যেমন করে কোথাও পড়ে গেলে বা হোঁচট খেলে মানুষ ব্যথা পায় এই ঘটনাটিও ঠিক তেমন। তাই এই মনের দুর্ঘটনাটি কাটিয়ে উঠতে নিজেকে সাহায্য করুন। বিষয়টিকে মেনে নিয়েই নিজেকে সামলে নিন। যদি কষ্ট পান তবে সেটাও মেনে নিন। নিজের আবেগকে সম্মান করুন। সেই সঙ্গে শরীরের ক্ষতের মতো মনের এই সাময়িক ক্ষতটার দিকে সহমর্মী হয়ে উঠুন। 

. খুব গভীরভাবে বিষয়টি দেখবেন না। জীবনটা একটি ভ্রমণ। এই ভ্রমণে আপনার সঙ্গে সবাই সঙ্গী হবে এটা নাও হতে পারে। তাই ফেলে আসা স্টেশনের আগন্তুকের মতোই তাকে ফেলে আসুন। খুব গভীরভাবে এই বিষয়টি না নিয়ে হালকাভাবেই দেখুন। বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করে রাত-দিন এক করার কোনো প্রয়োজন নেই। নিজেকে বুঝিয়ে বলুন, যার জীবনে আপনার যেমন আর দরকার নেই, তেমনি আপনার জীবনেও তার থাকা না থাকায় কিছু এসে যায় না।

. নিজেকে ভালো রাখুন, ভালোবাসুন। আপনার সঙ্গে খুব খারাপ কিছু ঘটেছে এটা না ভেবে বরং বিষয়টি সাবলীলভাবে গ্রহণ করুন। ইংরেজিতে দুটি শব্দ আছে- একটি হলো রিঅ্যাক্ট আর একটি হলো রিসিভ। অর্থাৎ প্রতিক্রিয়া ও গ্রহণ করা। প্রত্যাখ্যানকে গ্রহণ করুন এবং কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। এটি ব্যক্তিত্বকে সুন্দর করে তুলবে। 

. নিজেকে সময় দিন। বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে নিজের সঙ্গে নিজেই একটু সময় কাটান। নিজের হাতটি ধরে নিজেকে অভয় দিন। কোনো কিছুর বিনিময়ে যেন আত্মসম্মান নষ্ট না হয়। আপনি অনুভূতি প্রকাশে সৎ ছিলেন আর সেটাই বড় যোগ্যতা। নিজেকে কোনো কিছুর বিনিময়ে ছোট ভাববেন না।

. কথায় বলে- একটি দরজা বন্ধ হয়ে গেলে হাজারটা দরজা খুলে যায়। কোনো কিছুর প্রতিস্থাপন করা হয়তো সহজ নয়; কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে যাকে চাইছেন, ভবিষ্যতে তার চেয়ে আরও ভালো কেউ এসে পূর্ণ করে দেবে আপনার শূন্যতা। পৃথিবীতে কারো জন্য কিছুই থেমে থাকে না। গভীর শোকটাও একসময় ফিকে হয়ে আসে। তাই নিজেকে ভালোবেসে সেই সুন্দর সময়টির জন্য নিজেকে তৈরি করুন।