এই বর্ষায় যত্নে থাকুক গাছ

সাধ করে খোলা ছাদ বা ছোট্ট বারান্দাটিতে নিজের হাতে বাগান বানিয়েছেন। সেখানে পছন্দের কত গাছ আপনার। তাদের যত্নআত্তির কোনো কমতিও নেই; কিন্তু এই যে বর্ষার সময়ে শখের গাছগুলো নষ্ট হচ্ছে, কখনো পচে যাচ্ছে। এখন বুঝতে পারছেন না, এই সময়ে আলাদা করে আবার গাছের যত্ন কীভাবে করা যাবে।

তাই জেনে নেওয়া যাক এই বর্ষার মৌসুমে গাছ আর বাগানের যত্ন কীভাবে নেওয়া যাবে : 

গাছকে ছায়ায় রাখবেন

বর্ষার সময়ে কিছু কিছু গাছের জন্য পানি বেশ ক্ষতির কারণ হতে পারে। ক্যাকটাস বা সাকুলেন্ট গাছ বেশি পানি সহ্য করতে পারে না। তাই এদের খোলা আকাশের নিচে না রাখাই ভালো। এই জাতীয় গাছগুলোকে ছায়ার মধ্যে বা ঘরের মধ্যে রাখা উচিত বর্ষায়।

পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গাছে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা। যে কোনো ঘরোয়া গাছের জন্য এমন টব বা পাত্র বাছাই করবেন, যেটায় পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনমতো ছিদ্র থাকে। আর ছাদে গাছ লাগানোর জন্য আজকাল বড় আকারের ড্রাম ব্যবহার করা হয়। সেগুলোতেও ছিদ্র রয়েছে কিনা খেয়াল রাখুন।

টবে জমে থাকা পানি ফেলে দিতে হবে 

বৃষ্টির পর টবে পানি জমে থাকলে টব একদিকে কাত করে পানি ফেলে দিতে হবে। আর মাটি না শুকালে একটু খুঁচিয়ে দিতে হবে যাতে সম্পূর্ণ মাটি শুকিয়ে যায়। আর যদি গাছের মাটি শুকানোর ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে বৃষ্টির সময় ঘরে এনে রাখাই ভালো। কারণ পানি জমলে সেখান থেকে ডেঙ্গুসহ অন্য পানিবাহিত রোগগুলো বাড়বে। তাই নিয়মিত গাছের টবগুলো দেখা দরকার যেন পানি না জমে।

গাছে পানি না দেওয়াই ভালো

আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে যে বর্ষা মৌসুমে কি গাছে পানি দেব কি দেব না। বর্ষায় গাছে পানি না দেওয়াই ভালো। অতি বৃষ্টির ফলে গাছে পানির ঘাটতি পূরণ হয়। তাই গাছের মাটি না শুকানো পর্যন্ত পানি দেওয়া উচিত নয়। একটা কথা মাথায় রাখা উচিত, পানির অভাবে গাছ মরে না; কিন্তু পানির পরিমাণ বেশি হলে গাছ মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

টবে মাটি দিয়ে ভরাট করা

গ্রীষ্মের সময়ে আমরা যেমন টবের মাটি কয়েক ইঞ্চি নিচ পর্যন্ত ভরাট করি; কিন্তু বর্ষাকালে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য টবে মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়া উচিত, যাতে পানি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়।

মাটি তৈরি করা

অতি বৃষ্টির সময় অবশ্যই এমন ধরনের মাটি নির্বাচন করতে হবে, যাতে মাটি খুব দ্রুত পানি শুষে নিতে পারে। আর তাই এর জন্য এঁটেল মাটি ব্যবহার করা উচিত। গাছের টব তৈরির ক্ষেত্রে মাটি, সারের সাথে সাথে বালু ও নুড়ি পাথর বেশি পরিমাণে মিশিয়ে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোকোডাস্ট বা পার্লাইট মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নিতে হবে।

গাছের টব সরিয়ে দেওয়া

অনেক সময় পিঁপড়া বা অন্যান্য ছোট ছোট পোকা টবের নিচে বাসা তৈরি করে। এসব পোকামাকড় গাছের অনেক ক্ষতি করে। তাই গাছের টব সরিয়ে নিয়ে পোকামাকড় ধ্বংস করতে হবে।

সার দেব কি দেব না

বর্ষাকালে সার না দেওয়াই ভালো। কেননা বৃষ্টির পানিতে যে পরিমাণে নাইট্রোজেন বা অন্যান্য উপাদান থাকে, তা গাছের খাদ্য হিসেবে কাজ করে। তাই সার দেওয়া উচিত নয়। যদি একান্তই সার দেওয়া দরকার মনে হয়, তাহলে জৈব সার দিতে হবে। অন্য কোনো রাসায়নিক সার না দেওয়াই ভালো।

খুঁটি দিয়ে দিন

ঝড় বৃষ্টি হলে অনেক সময় গাছ, বিশেষ করে চারা গাছ একদিকে হেলে যায়। তাই গাছের অবস্থান ঠিক রাখার জন্য গাছের সাথে খুঁটি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে।

মৃত ডালপালা ছাঁটাই করে নিন

এটি মূলত বর্ষার বৃষ্টির পরপরই করণীয় একটি কাজ। আপনার বাগানের সমস্ত গাছের যত মৃত ডাল বা শাখা-প্রশাখা বিদ্যমান তার সবকিছুই ছেঁটে ফেলুন। এতে করে বর্ষায় নতুন করে আপনার গাছে ফুল ও পাতা আসার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যাবে। তবে এ ক্ষেত্রেও আপনার সতর্ক থাকা দরকার। মরা ডালপালা কাটতেগিয়ে গাছের উপর যেন অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না হয়, সেদিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে।

বর্ষায় বাগান পরিষ্কার রাখুন

বারান্দা হোক বা ছাদ বাগানের মাটি থেকে শুরু করে গাছ পুরোটাই পরিষ্কার রাখতে হবে। সবার আগে পানি নিষ্কাশন ভালোভাবে করা দরকার। এতে কাদা হবে কম।

গাছের পচা বা হলুদ পাতা একটা পাত্রে জড়ো করুন। সেখানেই কম্পোস্ট করে তৈরি করুন জৈব সার। অনেক সময়েই দেখা যায়, টবের উপরের স্তর পুরো সবুজ শ্যাওলায় ঢেকে গিয়েছে। এই শ্যাওলা কিন্তু অক্সিজেন গাছের গোড়ায় পৌঁছতে দেয় না। ফলে গাছের বৃদ্ধি রোধ করে। তাই শ্যাওলার অংশটুকু খুরপি দিয়ে খুঁচিয়ে তুলে ফেলে দিতে হবে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //