
গ্যাস সিলিন্ডার।
প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ কমে আসায় দেশে সিলিন্ডার চুলার কদর বেড়েছে। রাজধানী কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় ঘরেই এখন এর ব্যবহার। শুধু ঘরে নয়, ফুটপাতের চায়ের দোকানসহ হোটেলগুলোয় এর ব্যবহার আরও বেশি। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও সিলিন্ডার থেকে অগ্নিকা-ের ঘটনা। ইতোমধ্যে বহু জীবন চলে গেছে, পাশাপাশি ক্ষতি হয়েছে শত শত কোটি টাকার সম্পদ। ব্যবহারকারীদের জন্য এটা আতঙ্ক ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের একটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাথমিক ধারণা সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে সিলিন্ডার বিস্ফোরণজনিত ২৩০ দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত হয়েছে। সিলিন্ডার গ্যাসের পাশাপাশি পাইপলাইনের লিকেজ গ্যাস থেকে প্রায়শই ভয়াবহ অগ্নিকা- ঘটছে। ২০২১ সালের ২৭ জুন মগবাজারের একটি ভবনে তিতাসের পাইপের লিকেজ থেকে বের হওয়া গ্যাসের বিস্ফোরণে ১২ জন মারা যায়। এর আগে ২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের একটি মসজিদে এ ধরনের বিস্ফোরণে ৩৪ জন মারা যায়।
এমনই সব ট্র্যাজেডি আসে, ট্র্যাজেডি যায়। মৃত্যু আর আহাজারিতে ভারী হয় বাতাস। তবু মানুষের সুরক্ষার কথা চিন্তা না করে গড়ে উঠছে বড় বড় অট্টালিকা।
কেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কারিগরি ত্রুটি, অসচেতনতা ও অসতর্কতার ফলে সিলিন্ডার দুর্ঘটনা ঘটছে। মূলত গ্যাসের লিকেজ থেকে ঘটে এসব দুর্ঘটনা। সিলিন্ডারের হোস পাইপ, রেগুলেটর, গ্যাস ভালভের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারণে গ্যাস লিক হয়। সেই লিকেজ থেকে গ্যাস বেরিয়ে বাইরে কোথাও জমতে থাকে। সামান্য আগুন, এমনকি স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে জমে থাকা সেই গ্যাস থেকে আগুন ধরে যেতে পারে। এ ছাড়া বাজারে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ গ্যাস সিলিন্ডার মেয়াদোত্তীর্ণ এমনও অভিযোগ আছে। গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহকারী সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর উচিত বাজারে সরবরাহের আগে অবশ্যই সিলিন্ডারগুলো তদারকি করা।
তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা অনেকাংশেই কমানো সম্ভব। চলুন জেনে নেওয়া যাক পদ্ধতিগুলো-
রান্না শেষে চুলা বন্ধ রাখুন
অনেকেই রান্না শেষেও চুলা চালু করে রাখেন। এটি করা যাবে না। রান্নার পর অবশ্যই চুলা বন্ধ রাখতে হবে। চুলা জ্বালিয়ে রাখলে গ্যাসের অপচয়ের পাশাপাশি সারা ঘরে (রান্নাঘরের জানালা বন্ধ থাকলে) গ্যাস ছড়িয়ে পড়তে পারে; যা থেকে হতে পারে গ্যাস বিস্ফোরণ।
রান্নাঘরের জানালা খুলে রাখুন
রান্নার আগে ও পরে রান্নাঘরের জানালা বন্ধ রাখা যাবে না। জানালা বন্ধ রাখলে গ্যাস জমে হতে পারে বিস্ফোরণ। তাই গ্যাসের চুলার বিস্ফোরণ থেকে বাঁচতে রান্নাঘরে জানালা খুলে রাখুন।
পাইপ লিক হলে দ্রুত বদলাতে হবে
সিলিন্ডার গ্যাসের পাইপে কোনো লিক পেলে দ্রুতই সেটি বদলে ফেলতে হবে। কোনোভাবেই পাইপের গায়ে কাপড় বা প্লাস্টিক মোড়ানো যাবে না। এটি দুর্ঘটনার শঙ্কা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
সেফটি ক্যাপ ব্যবহার
বিস্ফোরণ থেকে নিরাপদ থাকতে সিলিন্ডারে সেফটি ক্যাপ ব্যবহার জরুরি। রান্না শেষে সিলিন্ডারের মুখ সেফটি ক্যাপ দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
জরাজীর্ণ সিলিন্ডার পরিহার করুন
অনেক সময় পুরনো বা জরাজীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করেন অনেকে। এটি দুর্ঘটনার আশঙ্কা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। দুর্ঘটনা এড়াতে যথাসম্ভব পুরনো গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
নিয়মিত গ্যাসের চুলা পরীক্ষা করুন
সিলিন্ডার লিক হচ্ছে কি না, সেটি নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। এ জন্য পানিতে সাবানের গুঁড়া মিশিয়ে ফেনা তৈরি করতে হবে। এরপর সাবানের ফেনা হোসপাইপ, রেগুলেটর, ভালভ ইত্যাদিতে লাগাতে হবে। গ্যাস লিক হলে সাবান-পানির ফোঁটা বড় হবে। এমন হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।