বর্তমান সময়ের আলোচিত একটি শব্দ হলো জেন-জি বা জেনারেশন জেড। কারা এই জেন-জি? আর কেনই বা তাদের নিয়ে এত আলোচনা? ফোর্বসের এক আর্টিকেলে বলা হয়েছে, সহস্রাব্দের পরের প্রজন্ম ও জেন-আলফার আগের প্রজন্ম হলো জেন-জি। একটু সহজ করে বললে, ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত যাদের জন্ম, তারাই জেন-জি। অর্থাৎ জেন-জিদের বয়স এখন ১২ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে। অন্যদিকে ২০১০ সালের পর জন্ম নেওয়া শিশু-কিশোরদের আলফা-জেনারেশন ধরা হচ্ছে।
জেন-জি প্রজন্মের বিশেষত্ব হলো-তারা ‘ডিজিটাল নেটিভ’-এর প্রথম প্রজন্ম। যারা ইন্টারনেট ছাড়া পৃথিবীকে ভাবতে পারে না। এই প্রজন্ম করোনা মহামারি ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকটকে খুব কাছ থেকে দেখেছে। যা তাদের ব্যক্তিত্ব ও মূল্যবোধে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
জেন-জিদের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে-তারা বড় হচ্ছে, অর্থ সাশ্রয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, ভ্রমণ করতে ভালোবাসে, উদ্বেগপ্রবণ, গেম খেলাকে শখের চেয়েও বেশি কিছু মনে করে, জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে খুব বেশি মাথাব্যথা নেই, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে আগ্রহী, তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের তুলে ধরতে পছন্দ করে।
জেন-জি প্রজন্ম মূলত ফোনে আটকে থাকে। কিন্তু বাস্তবে তারা করপোরেট সিঁড়ি বেয়ে উঠছে। তাদের হাতে প্রচুর টাকা। এই টাকা আয়ের বড় উৎস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সামাজিক মাধ্যমকে তারা অর্থ আয়ের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছে। সেখানে ব্যবসা করছে, ইনফ্লুয়েন্সার হচ্ছে, ভিডিও কনটেন্ট বানাচ্ছে।
তারা শুধু অর্থ আয় করছে না, সেই অর্থ আবার সঞ্চয়ও করছে। এ প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা প্রবল। করোনা মহামারিতে জেন-জিরা ঘরবন্দি সময় কাটিয়েছে। এই সময়টাকে তারা কাজে লাগিয়েছে। কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করার পরিবর্তে সঞ্চয় করেছে।
জেন-জি প্রজন্ম ঘুরতে পছন্দ করে। কারণ তারা নতুন কিছু শুরু করতে চায়, নতুন দক্ষতা অর্জন করতে চায়। তবে এই প্রজন্মের শুরুর দিকের যারা তারা ভ্রমণে তেমন আগ্রহী না। ফোর্বসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেন-জি প্রজন্মের ৩৮ শতাংশ দেশ-বিদেশে ঘোরার সুযোগ খোঁজে।
অন্যান্য প্রজন্মের চেয়ে জেন-জি বেশি দুশ্চিন্তায় ভোগে। এটা তাদের নিজেদেরই ধারণা। জেন-জি প্রজন্মের ২৯ শতাংশ বলেছেন, তারা দুশ্চিন্তায় ভোগে। তারা কেন এমন ভাবে? এর পেছনে অনেক প্রেক্ষাপট আছে। যেমন-করোনা মহামারি তাদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। আবার ভবিষ্যতে হয়তো জলবায়ু পরিবর্তন তাদের ওপর প্রভাব ফেলবে।
জেন-জি প্রজন্মকে গেমিং প্রজন্ম বলা যেতে পারে। ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রজন্মের ৭৫ শতাংশ অনলাইনে গেম খেলে।
অনেকে জেন-জিকে পরিবেশবাদী প্রজন্ম হিসেবে দেখেন। কারণ তারা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করে। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে তারা যতটা দেখায় বাস্তবতা হলো বিপরীত। তাদের পরিবেশগত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে স্বতন্ত্র কিছুই নেই।
জেন-জি ইন্টারনেট আসক্ত একটি প্রজন্ম। এরা কখনো ইন্টারনেট ছাড়া একটি বিশ্ব কল্পনা করতে পারে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে অনেকের দুশ্চিন্তা থাকলেও এ প্রজন্ম এআই নিয়ে আশাবাদী। তাদের ধারণা এআই ও ইন্টারনেট দিয়ে বিশ্বকে বদলে দেওয়া সম্ভব। এই প্রজন্মের ৫৯ শতাংশ এআই দিয়ে বানানো তথ্যকে অনেক বা সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করে।
তবে জেন-জি প্রজন্ম খুব আত্মবিশ্বাসী। এই প্রজন্ম মনে করে, তারা যা করে সেটাই সঠিক। তাই অন্যদের পরামর্শকে পাত্তা দেয় না।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : জেন-জি জেনারেশন জেড জেন-আলফার
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh