মি টাইম কী, কেন প্রয়োজন

খুব ব্যস্ত একটি বিশ্বে বাস করছি। প্রতিদিন এত কাজ যে, নিজের জন্য একটু সময় বের করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেকে হয়তো একান্তে কিছু মুহূর্ত কাটাতে চান। কিন্তু সময় না পেয়ে বলেন, আগামীকাল সিনেমা দেখব। সেই আগামীকালটা আর কখনো হয়ে ওঠে না। অথচ শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে নিজের জন্য কিছুটা সময় ব্যয় করা জরুরি। যাকে বলা হচ্ছে ‘মি টাইম’ কিংবা নিজের একান্ত সময়। শত ব্যস্ততার মাঝে মি টাইম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় ও চাপ থেকে মুক্তি দেয়। আবার পারিবারিক সম্পর্কে বেশ ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

মি টাইম কেন প্রয়োজন

সহজ কথায় এই প্রশ্নের উত্তর হলো, নিজের জীবনকে উপভোগ করা, জীবনের মুহূর্তগুলো রঙিন করে রাখা, নিজেকে চাপমুক্ত রাখা। মূলত নারীদের ম্যাগাজিনগুলো এই শব্দকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করেছে। গ্লোবাল উইম্যান ম্যাগাজিন বলছে, নারীরা সংসার ও অফিসের কাজ সামলাতে গিয়ে নিজের জন্য সময় বের করতে পারে না। তাই মাঝে মাঝে প্যারেন্টিং, অফিসের কাজ, বাড়ির কাজ ইত্যাদি থেকে বিশ্রাম দরকার। সেই বিশ্রামের সময়টুকু নিজের মতো করে কাটাতে হবে। তাহলে মন উৎফুল্ল থাকবে, ক্লান্তি কেটে যাবে।

ওই ম্যাগাজিনের নিবন্ধে বলা হয়েছে, কে কীভাবে একান্ত সময় কাটাবে তা নির্ভর করবে তার পছন্দের ওপর। যেমন কেউ সাঁতার কাটতে পছন্দ করে, কেউ সিনেমা দেখতে পছন্দ করে, কেউ বই পড়তে, কেউ কেউ হাঁটতে বা যোগব্যায়াম করতে পছন্দ করে। তাই যার যেটা পছন্দ সেভাবেই একান্ত সময় কাটাবে।

এই শব্দটা নারী ম্যাগাজিনগুলো জনপ্রিয় করলেও মি টাইম নারী-পুরুষ সবার জন্য প্রয়োজন। যারা আত্মবিশ্বাসী হতে চান, কর্মোদ্যম থাকতে চান, মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকতে চান-তাদের জন্য মি টাইম অপরিহার্য। কারণ অতিরিক্ত মানসিক চাপ আমাদের শরীর ও কাজের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

মি টাইম মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা কমায়। একান্ত কিছু সময় কাটালে কর্মোদ্যম বাড়ে ও কাজের চাপের প্রভাব কাটাতে সহায়তা করে। একান্ত সময় কাটালে উৎপাদনশীলতা বাড়ে। তাই নিয়মিত বিরতি মস্তিষ্ক উৎপাদনশীল রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মি টাইম সৃজনশীলতা বাড়ায়। কারণ কেউ তার পছন্দের কাজ করলে কল্পনা শক্তি প্রখর হয়। আবার একান্ত সময় কাটালে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করা যায়। এছাড়া একান্ত সময় আমাদের সম্পর্ক আরও মজবুত করে। কারণ প্রিয়জনকে কিংবা পরিবারকে সময় দিলে আন্তরিকতা বাড়ে। সব মিলিয়ে একান্ত সময় বা মি টাইম আমাদের জন্য ইতিবাচক ও অসম্পূর্ণতাকে পূর্ণ করে।

নিজেকে সময় না দিলে কী হয়

নিজেকে সময় না দিলে নিজের মধ্যে অসন্তুষ্টি তৈরি হতে পারে। যারা নিজেকে সময় দেয় না তারা সহজেই হতাশ হয়ে পড়ে এবং তাদের নিজের ওপর কম নিয়ন্ত্রণ থাকে। অনেকের আবার সমাজ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। নিজেকে সময় না দিলে অনিদ্রা, প্যানিক অ্যাটাকের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। মি টাইম ছাড়া কাজ ও জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখা অসম্ভব। তাই যারা নিজেকে সময় দেয় না, তারা প্রায়ই আত্মসম্মানহীনতায় ভোগে। এমনকি তারা কোনো দায়িত্ব নিলে, তা ঠিকমতো পালন করতে পারে না।

কীভাবে মি টাইম ঠিক করবেন

মি টাইম কাটাতে আগে একটি সময়সূচি ঠিক করতে হবে। তারপর ঠিক করতে হবে সেই সময়টা কীভাবে কাটাতে হবে। এজন্য নিজের কাজ ও পারিবারিক দায়িত্বকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। সঠিকভাবে পরিকল্পনা করে ছোট ছোট নিয়মিত পদক্ষেপ নিলে একান্ত সময়গুলো বেশ ভালোভাবে পার করা যায়। তবে কর্মক্ষেত্রে বা পরিবারের সঙ্গে সময় ব্যয় না করার জন্য নিজেকে দোষী মনে করা যাবে না। কারণ সুখী সম্পর্ক ও কর্মক্ষেত্রে সফল হতে হলে নিজের জন্য কিছুটা সময় থাকা অত্যাবশ্যক।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //