‘সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সফল হওয়া যায় না’

মাইকেল ব্লুমবার্গের জন্ম ১৯৪২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি নিউইয়র্ক সিটির সাবেক মেয়র। ২০০৭ সালে টাফটস ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনের বক্তা ছিলেন ব্লুমবার্গ। সেখানে শুনিয়েছিলেন নিজের জীবনের গল্প, সফলতা ও ব্যর্থতার গল্প। মাইকেল ব্লুমবার্গের সেই বক্তব্য সংক্ষিপ্ত অংশ অনুবাদ করে তুলে ধরা হলো। অনুবাদ করেছেন কিশোর কল্লোল।

তোমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলি, সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কখনো সফল হওয়া যায় না। তোমরা হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনে ভালোভাবেই এটি বুঝতে পেরেছ। যেকোনো দলগত প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দলবদ্ধ হয়ে কাজ করা। শুধু শিক্ষাজীবনেই নয়, কর্মজীবনেও এটি সমান গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীটা যথেষ্ট জটিল, এখানে কারো পক্ষেই একা সব সমস্যা সমাধান করে ফেলা অসম্ভব।

তুমি একাকী কাজ করে মাঝারি গোছের কিছু একটা হবে, নাকি সবাইকে নিয়ে দলগতভাবে সফল হবে, তা সবাই মিলে একে অন্যকে সহযোগিতা করে কাজ করতে পারার ওপরই নির্ভর করে। তোমাকে অন্যের দুঃখ ও দায়িত্বÑদুটোর ভারই নিতে জানতে হবে, তাহলেই দলের প্রাপ্তিতে তোমার অংশ থাকবে।

আসলে বড় কিছু কখনোই একা করা যায় না। জীবনে চলার পথে যদি ‘আমি’ আর ‘আমার’ এই শব্দ দুটোর বদলে ‘আমরা’ আর ‘আমাদের’ ব্যবহার করতে পারো, তাহলেই দেখবে আগের চেয়ে অনেক ভালো করতে পারছ।

ভুলে গেলে চলবে না, জীবনে চড়াই-উতরাই থাকবেই। আমি চাকরি পেয়েছি, বরখাস্ত হয়েছি, প্রশংসায় আপ্লুত হয়েছি, নিন্দার ঝড়ও সহ্য করেছি। কিন্তু সবকিছুর পরও আমি বিশ্বাস করতাম, আগামীকাল আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। সেই আশাতেই আমি আবার নতুনভাবে শুরু করতাম। পৃথিবী তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তোমাদের মেধা, শক্তি, উৎসাহ সবকিছুই আজ বড় বেশি দরকার। জেনে রেখো, আজ এখানে উপস্থিত সবাই তোমাদের নিয়ে গর্বিত। আমরা সবাই জানি, তোমরা তোমাদের স্বপ্নের জীবনকেই বেছে নিতে পারবে।

আরেকটি কথা, তোমাকে অবশ্যই ঝুঁকি নিতে হবে। ঝুঁকি নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আমি জানি, আজকের এই দিনটিতে আসার জন্য তোমাদের এরই মধ্যে অনেক ঝুঁকি নিতে হয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতেও এর ব্যতিক্রম হবে না। 

পৃথিবীটা প্রতিযোগিতায় ভরা। এখানে সবাই নিজের চিন্তা-ভাবনাকেই সেরা মনে করে। কিন্তু তোমরা খেয়াল করে দেখবে, সফল তারাই হয়, যারা তাদের চিন্তাকে বাস্তবে পরিণত করতে পারে। আমি নিজের একটা গল্প বলি। আমার চাকরিজীবনের শুরু ওয়াল স্ট্রিটে। টানা ১৫ বছর আমি ছিলাম সেখানে। দারুণ কাটছিল দিনগুলো, আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রশংসায় আমি প্রায় ভেসেই যেতাম। সবাই আমাকে ভালোবাসত, যত দিন না পর্যন্ত আমি চাকরিটা খোয়ালাম।

কিন্তু আমি আশাবাদী ছিলাম সব সময়। প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে টিকে থাকার মধ্যেই আমি সুখ খুঁজে পেতাম। তাই চাকরি হারানোর পরদিনই আমি আমার নিজের কোম্পানি খুলে বসলাম। এখানেই আমি প্রচণ্ড একটা ঝুঁকি নিয়েছিলাম। আমার পরিবার, বন্ধুরা সবাই অনেক চেষ্টা করেছিল আমাকে ফিরিয়ে আনতে; তাদের উদ্দেশ্য ভালো ছিল, সন্দেহ নেই। কিন্তু আজকে সেই ব্যবসা সফল হয়েছে, এতেই আমার সুখ।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যা বলার তা সোজাসুজি বলতে পারা। তোমার যুক্তিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করার চেয়ে ভালো উপায় আর নেই। কেউ যদি তোমার সঙ্গে একমত হতে না-ও পারো, তবু সে তোমাকে সততা আর সাহসের জন্য সম্মান না করে পারবে না। তাই তোমাদের নিজের আদর্শের প্রতি সৎ থাকতে হবে। যা মন থেকে বিশ্বাস করো, তা-ই জোর গলায় বলতে হবে।

তোমাকে অবশ্যই অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। বিশেষ করে যখন মতের অমিল হয়, তখন শ্রদ্ধা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা অন্যকে তাদের মত প্রকাশে বাধা দেয়, তারা আসলে নিজেরাই হীনম্মন্যতায় ভোগে। আমি মনে করি, প্রতিপক্ষের যুক্তিকে যুক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে গেলে পুরো ব্যাপারটা আরো গভীরভাবে ভাবতে হয়, যা শেষ পর্যন্ত নিজের অবস্থান শক্ত করতেও যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। তবে প্রথমে অবশ্যই অন্যকে বলার সুযোগ দিতে হবে আর তার কথা মন দিয়ে শুনতে হবে। আজকে যদি আমাকে একটি মাত্র উপদেশ দেওয়ার জন্য বলা হতো, তাহলে আমি এটাই বলতাম, অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করো।

আমার শেষ উপদেশ হলো, তুমি অন্যকে যত বেশি দেবে, নিজেও তত বেশি পাবে। আমি যখন ব্যবসা করতাম, তখন সব সময় অন্যের জন্য কিছু করতে চেয়েছি। পরিবর্তন আনার অদম্য ইচ্ছা আমাকে এক বিশাল চ্যালেঞ্জের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়।

একটি কথা বলতেই হবে, সফল হতে হলে পরিশ্রম ছাড়া সত্যিই আর কোনো উপায় নেই। হ্যাঁ, ভাগ্য বলে হয়তো কিছু একটা আছে। কিন্তু তুমি যত পরিশ্রম করবে, ভাগ্যও তোমাকে তত সহায়তা করবে। তাই পরিশ্রম করো, আর সে কাজই বেছে নাও, যা তুমি উপভোগ করো।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh