শিশুর কৌতূহলকে উৎসাহিত করুন

সাড়ে তিন বছরের নাফিহার প্রশ্ন তার মা-বাবা, ভাই-বোন থেকে শুরু করে সবাইকে অস্থির করে তোলে। এটা কেন হলো? ওটা কী? ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রতিটি প্রশ্নের জবাব না পাওয়া পর্যন্ত পিছু ছাড়ে না সে। শিশুদের এমন কৌতূহলী প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় প্রায় প্রত্যেককেই। অজানাকে জানার ইচ্ছা মানুষের একটি সহজাত বৈশিষ্ট্য। বড় হতে হতেই চারপাশের পরিবেশ এবং মানুষজন শিশুমনে কৌতূহল তৈরি করে। শিশুর কৌতূহল না মেটা পর্যন্ত সে বিভিন্নজনের কাছে একই প্রশ্ন বারবার করে। একই প্রশ্ন বারবার করায় বিরক্ত হয়ে নানা সময় শিশুকে ভুলভাল বুঝিয়ে থাকি বা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। শিশুর কোনো কোনো প্রশ্ন আমাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও ফেলে দেয় কখনো। বাড়ন্ত বয়সে শিশুর এই কৌতূহল দমনের চেষ্টা না করে তার জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধিতে সহায়তা করুন।

শিশুর প্রশ্ন এত বৈচিত্র্যময় হয় যে উত্তর দিতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। অভিভাবক হিসেবে নিজের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে। সব সময় নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে সব ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য। শিশুকে উৎসাহিত করুন তার পাঠ্য বইয়ের বাইরে অন্য বই পড়ায়। এতে শিশু নিজেই অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবে।

শিশুর সব প্রশ্ন মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আপনার অমনযোগিতা শিশুর মনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

শিশুর কৌতূহলী প্রশ্নগুলোর কোনো ভুল বা মিথ্যা উত্তর দেওয়া ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী সময় শিশুটি যখন আস্তে আস্তে অন্য উৎস থেকে বিষয়টি সম্পর্কে প্রকৃত সত্য জানতে পারে, তখন তার মনের মধ্যে একটা দ্বিধা তৈরি হয়। দুটি ভিন্নধর্মী উত্তরের মধ্যে সে কোন উত্তরটি গ্রহণ করবে তা নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে ভোগে, যা এক পর্যায়ে তার মধ্যে মা-বাবার প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি করে।

শিশুর প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। এতে তার মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। কৌতূহলী মনকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলেই কিন্তু তার জিজ্ঞাসা থেমে থাকে না, বরং সে অন্য কোনোভাবে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে। মা-বাবা যদি তার প্রশ্নকে এড়িয়ে যান, তখন তার কৌতূহল আরো বেড়ে যায় এবং সে আবারও অন্য পথে, অন্য কারো কাছে বিষয়টি জানতে চায়। এই ‘অন্য কেউ’ যদি হয় তার স্কুলের বন্ধু বা বাসার কাজের লোক, যে নিজেই বিষয়টি সঠিকভাবে জানে না বা জানলেও কীভাবে তা শিশুর সামনে উপস্থাপন করতে হবে, সেটি যদি না বোঝে তখন শিশুটি আবার সেই বিভ্রান্তির জগতে ঘুরপাক খেতে থাকে।

শিশুরা অনেক সময় এমন সব প্রশ্ন হয়তো করে বসে, যা তার এই বয়সে করার কথা নয়। শিশুর বয়স বিবেচনা করে তার প্রশ্নের যুক্তিসংগত জবাব দিতে হবে, পাশাপাশি এই বয়সে এই বিষয়ের সবটুকু যে তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয় এবং সে বড় হয়ে এ বিষয়ে আরো জানতে পারবে, সেটি তাকে বোঝাতে হবে। একই প্রশ্নের উত্তর শিশুর বয়সভেদে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে হবে। জবাব দেওয়ার সময় পরিশীলিত শব্দ ব্যবহার করতে হবে, শিশুকে নিয়ে ব্যঙ্গ করা যাবে না। 

অনেক সময় শিশুরা বিব্রতকর প্রশ্ন করে বসে। তখন অস্বস্তিতে পড়তে হয় বড়দের। এ রকম পরিস্থিতিতে শিশুদের বকাঝকা করা ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে শিশুর মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরাতে অন্য কোনো বিষয়ে ওর সঙ্গে কথা বলুন, গল্প করুন। যাতে শিশু বিষয়টি ভুলে যায়।

বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি শিশুদের কৌতূহল জন্মায়। তখন অনেকেই মা-বাবাকে শারীরিক পরিবর্তন বা এ ধরনের প্রশ্ন করে থাকে। সাধারণত টিভি দেখে বা অন্য কারো কাছ থেকে পাওয়া ভাসা ভাসা ধারণা থেকে শিশুরা এ ধরনের প্রশ্ন করে। তাই এ ধরনের প্রশ্নে বা বিষয়ে শিশুর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা উচিত। এ বিষয়ে আলোচনা এড়িয়ে গেলে, ওদের মধ্যে আরো বেশি কৌতূহল সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে টিনএজদের শারীরিক পরিবর্তনের কারণে তাদের মনে নানা প্রশ্ন জন্মায়। তাদের যুক্তি দিয়ে বোঝান। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক পরিবর্তনগুলো কেন হয় এবং তা অত্যন্ত স্বাভাবিক, তা নিয়ে তার সঙ্গে পরিশীলিত ভাষায় আলোচনা করুন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh