অতিরিক্ত চিন্তা কি কোনো রোগের কারণ

চিন্তা মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। দৈনন্দিন জীবনে ছায়ার মতো লেগে থাকে। রোজই কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে থাকি। তবে মাঝে মাঝে তা মাত্রা ছাড়ায়। এটি নিজের জন্য যেমন ক্ষতির কারণ, তেমনি অন্যদেরও ফেলে বিরক্তিতে। প্রশ্ন ওঠে মাত্রাতিরিক্ত চিন্তা কি তবে কোনো রোগের কারণ? চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে মানসিক রোগের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। যখন চিন্তাভাবনা সীমা ছাড়ায় তখন বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। চিন্তা তখন পরিণত হয় চিন্তা ব্যাধিতে। বিশেষজ্ঞের মতে, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চিন্তা যখন সামাজিক জীবন, কর্মজীবন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তখন তাকে উদ্বিগ্নতা বা অ্যাংজাইটি ডিজ-অর্ডার (Anxiety Disorder) বলা যায়।

অতিরিক্ত চিন্তা কেন হয়। মানসিক রোগ যেমন ওসিডি বা শুচিবাই, অ্যাংজাইটি বা উদ্বিগ্ন, ডিপ্রেশন, ব্যক্তিত্বজনিত অসুখ ইত্যাদি। অস্তিত্ব সংকট, না খবরদারি করার অভ্যাসের কারণ চিন্তা মাথায় চেপে বসে। কেননা এ ধরনের সমস্যা থাকলে সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার চিন্তা কাজ করে। ভবিষ্যৎ নিয়ে অতিরিক্ত ভাবনা থেকেও হতে পারে। অপ্রত্যাশিত অতীত নিয়ে পড়ে থাকাও চিন্তার কারণ। অতীতের কোনো ভুল নিয়ে দুশ্চিন্তা বা অনুশোচনাও অতিরিক্ত চিন্তার জন্ম দেয়।

অতিরিক্ত চিন্তা ব্যক্তি ও সমাজজীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এতে ঘুমের সমস্যা, মাথা ব্যথা, পেট খারাপ ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা হতে পারে। মানসিক চাপ বেড়ে যায়। ব্যক্তি কর্মক্ষমতা হারায়। কাজে অমনোযোগিতা ভর করে। মেজাজ খিটখিটে হয়। এতে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে।

তবে এই সমস্যাগুলো বাড়তে দেওয়া যাবে না। শুরুতেই সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। চিন্তা কমানোর চেষ্টা করতে হবে। ধ্যান বা মেডিটেশন মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে, যা অতিরিক্ত চিন্তা থেকে রেহাই দেয়। নিজেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখতে পারেন। কেননা ব্যস্ততা অহেতুক চিন্তা থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়। অতীতে কী হয়েছিল বা ভবিষ্যতে কী হবে, সেসব নিয়ে অতিরিক্ত না ভেবে বর্তমানকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কাজে মন দেওয়া উচিত। সামাজিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে। পরিবার বা বন্ধুদের আড্ডায় সময় দিলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে মস্তিষ্ক ও শরীরের অন্যান্য কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে চিন্তা বাড়তে পারে। খাবার টেবিলে সুষম খাবার বাড়ান। কেননা এ ধরনের খাবার খেলে মন শান্ত থাকে। তাতেও যদি কাজ না হয় তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। আর যখন দেখবেন অতিরিক্ত চিন্তা দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করছে তখন আর বসে থাকা উচিত না। এ ছাড়া ব্যক্তির যদি মানসিক কোনো সমস্যা থাকে তবে অন্য উপায় না খুঁজে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া উচিত।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh