Logo
×

Follow Us

মিডিয়া

চীন থেকে পাঠানো লেখার চিঠি

Icon

প্রশান্ত ত্রিপুরা

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২০, ১২:৩৬

চীন থেকে পাঠানো লেখার চিঠি

প্রশান্ত ত্রিপুরা।

লেখা ত্রিপুরার কথা আমার ফেসবুক বন্ধুরা অনেকে জানতে পারেন, যাকে নিয়ে আমি আগেও লিখেছি। চীনের বেইজিং-এ স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গবেষণায় নিয়োজিত এই মেধাবী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর ইচ্ছা সে ২০৩০ নাগাদ মঙ্গলগ্রহে চালু হতে যাওয়া ‘স্পেস বায়োলজি ল্যাব’-এ যোগ দেবে।

করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে যে আতঙ্ক চলছে, তার প্রেক্ষিতে সে বর্তমানে উহানে অবস্থান করছে, ভাইরাসটি সেখানে ঠিক কিভাবে এসে থাকতে পারে, এ বিষয়ে অনুসন্ধানরত একটি গবেষক দলের সদস্য হিসাবে। লেখা উহান থেকে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু নখাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে, ই-মেইলে। চিঠিটির একটা কপি আমাকে নখা ফরোয়ার্ড করেছে ছোট এক বার্তা সমেত। ক্যালিফোর্নিয়ার মেক্সিকো সীমান্ত সংলগ্ন একটি জায়গা থেকে সে আমাকে জানিয়েছে, “আপনি নিশ্চয় জানেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষদের সংখ্যা এখন আমেরিকাতেই সবচেয়ে বেশি। আমি একটা বিশেষ কাজে মেক্সিকো যাচ্ছি। সীমান্ত পার হবো লুকিয়ে, সড়ক পথে। মেক্সিকো থেকে যাবো পেরুর লিমাতে। লেখার চিঠিটা আপনি সম্পাদিত আকারে ফেসবুকে পোস্ট করতে পারেন। কী কী অংশ বাদ দিতে হবে, আপনি নিশ্চয় বুঝে নেবেন।”

সদ্য পাওয়া নখার চিঠিটা আমি এখানে প্রকাশ করছি, যেসব অংশ গোপন থাকাই ভালো, সেগুললো বাদ দিয়ে।

গোপনীয় ও অতীব জরুরি

উহান, ২৮/৩/২০২০

প্রিয় নখা,

আবারো খুব তাড়ার মধ্যে লিখছি তোমাকে। যে কাজে আমি উহানে এসেছি, তা মোটামুটি শেষ। ... ইতোমধ্যে একটা বিষয় খুব স্পষ্ট হয়ে গেছে, যেমনটা আমি আগেই অনুমান করেছিলাম যে, কোভিড-১৯ রোগের ভাইরাসটি আসলে কোনো বাদুড় থেকে বা চীনাদের সাপ-ব্যাঙ খাওয়ার কারণে আসেনি। ওটা আমেরিকান সেনারাও আনেনি উহানে। এর পেছনে আছে মচোভিরা। ... এতদিন আমরা ব্যস্ত ছিলাম মচোভিদের আক্রমণ থেকে শিশুদের রক্ষার উপায় উদ্ভাবন নিয়ে।

কিন্তু হঠাৎ করে মচোভিরা কেন বয়োবৃদ্ধদের টার্গেট করছে? প্রশ্নটির উত্তর ভালো করে বোঝা দরকার। তুমিও এ বিষয়টির প্রতি নজর রেখো।

... যে জরুরি প্রয়োজনে তোমাকে লিখছি, সেটা বলে দেই। নিশ্চয় শুনেছ, বান্দরবানের কিছু ম্রো শিশু, এবং রাঙামাটির সাজেকের বেশ অনেকজন ত্রিপুরা শিশু, সম্প্রতি হামে মারা গেছে। ইউরোপ আমেরিকা চীন জাপানের মতো বাংলাদেশেও সবাই করোনাভাইরাস নিয়ে এতটাই মেতে আছে! এই সময়ে সাজেকে বা বান্দরবানের ম্রো এলাকায় হামের আক্রমণ কি কাকতালীয় মনে হয় তোমার কাছে?

আমি জানি না পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও রাজা হেডম্যানরা বা অন্য সমাজপতিরা খোঁজখবর নিচ্ছেন কিনা এ বিষয়ে। অবশ্য তাঁদের মধ্যে মচোভিদের কবলে পুরোপুরি যায়নি, এমন কেউ আদৌ আর অবশিষ্ট আছেন কিনা কে জানে। আর থাকলেও তাঁরা কে কতটা চিন্তিত প্রান্তিকদের মধ্যে প্রান্তিক শ্রেণী-গোষ্ঠীর আদিবাসী শিশুদের নিয়ে, তা দেখার বিষয়। কিন্তু তুমি আর আমি জানি কেন তাদের বাঁচিয়ে রাখা জরুরি।

আমাকে ... জানিয়েছে যে, মচোভিরা বিশেষ একটি মিশনে নেমেছে যাতে প্যারালেল আরেক ইউনিভার্সে তোমার আমার জন্ম না হয়। সেই ইউনিভার্সের কথা তুমি পড়েছ নিশ্চয়? ওই যে, প্রশান্ত ত্রিপুরাকে দিয়ে গল্পের ছলে লিখিয়ে রাখা হয়েছিল? সেই ‘গল্প’ থেকে কিছু দরকারি তথ্য ও সংকেত তোমাকে আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি।

২০৩২ সাল নাগাদ মচোভিরা পৃথিবী দখল করে নেবে। সেই মচোভিদের বিরুদ্ধে একাধিক গ্যালাক্সি জুড়ে যে মহাজাগতিক যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে, সেখানে আমাদের যোগ দেয়ার কথা। তোমার জন্ম হবে ২০৩৩ সালে, আর আমার ২০৩৮-এ। তুমি নিশ্চয় ভুলে যাওনি, তুমি তিন্দুর এক ত্রিপুরা বাবার সন্তান হলেও মায়ের দিকে বান্দরবানের খুমি ও ম্রোরাও তোমার আত্মীয়, আর আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সাজেকে, ত্রিপুরা পরিচয়ে, যদিও আমি অংশত পাংখুয়াও।

এই যে বেছে বেছে ম্রো এবং ত্রিপুরা শিশুদের মেরে ফেলা হচ্ছে নীরবে, এবং কেউ উচ্চবাচ্য করছে না, এটা কি মচোভিদের কারসাজি নয়? নিশ্চয় বুঝতে পারছ, মচোভিরা চাইছে না আগামী দুনিয়ায় তোমার আর আমার জন্ম হোক। তাই তারা আমাদের সম্ভাব্য মা-বাবাদের বেছে বেছে মেরে ফেলছে বর্তমানে। করোনাভাইরাসের আক্রমণ এক্ষেত্রে একটা কৌশল হতে পারে সবার মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে রাখার।

এদিকে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ করার নামে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় কী হচ্ছে, তুমি নিশ্চয় দেখেছ? প্রান্তিক মানুষদের কানে ধরে ওঠবস করাচ্ছে যারা, তাদের চোখের দিকে কি কেউ ভালো করে তাকিয়ে দেখেছে? আমি নিশ্চিত, তারা সবাই মচোভি। এদিকটাও একটু খেয়াল রাখতে বলতে হবে আমাদের সহযোদ্ধাদের।

আর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য সবাই যেভাবে শুধু সাবান, স্যানিটাইজার আর মাস্কের পেছনে ছুটছে, মচোভিদের ব্যবহৃত অন্য কৌশলগুলির কথাও একটু মনে করিয়ে দিতে হবে আমাদের। মনে আছে সেগুলি? “মচোভিরা বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে, যেমন বইয়ের মধ্যে জীবাণুগুলো ঢুকিয়ে দেয়, বা দূর নিয়ন্ত্রিত চৌম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে বাতাসে ভেসে বেড়ানো জীবাণুদের সক্রিয় করে ধূলাবালির সাথে শিশুদের শরীরে প্রবেশ করায়।”

ফেসবুকে আমি দেখেছি, করোনাভাইরাসের ভয়ে প্রান্তিক মানুষেরা যেভাবে থানকুনি পাতাসহ নানান ‘স্বপ্নে পাওয়া’ ঔষধের পেছনে ছুটছে, বা অসময়ের আজান, উলুধ্বনি ইত্যাদির ডাকে সাড়া দিচ্ছে। এগুলি নিয়ে অনেকেই ট্রল করছে। অনেকে ব্যস্ত ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ নির্মূল করার চিন্তায়। কিন্তু তুমি আমি জানি, স্বপ্নে পাওয়া ঔষধের গূঢ়ার্থ। এগুলো যেন আমরা না ভুলি।

আমাদের ‘স্বপ্নে পাওয়া’ ঔষধের কথা মনে আছে তো তোমার? আবার একটু মনে করিয়ে দেই, যাতে প্রয়োজনে সবাইকে জানিয়ে দিতে পার।

মচোভিদের বিরুদ্ধে শিশুদের সুরক্ষার জন্য যেসব গাছের শেকড় নিয়মিত সেবন করতে হবে, সেগুলির কিছু নমুনা রাখা আছে রেমাক্রি ও সাজেকের কিছু গ্রামে। গাছগুলোর গায়ে লেখা আছে কিছু শব্দ – সমতা, মানবতা, সহভাগিতা (সমাস) ও প্রকৃতির জন্য ভালবাসা (প্রভা)। সমাস আর প্রভা, এই দুইটি শব্দ মনে গেঁথে নিতে হবে। এরপর নিচের মন্ত্রটাও মুখস্থ রাখতে হবে: “আমি লেখাকে ভালবাসি। আমি ভালবাসি স্বপ্ন দেখতে। ... আমি স্বপ্নের কাছে যেতে চাই।” মন্ত্রটা যেন কোনভাবেই ভুলে না যাই আমরা। এগুলো যে শিশুরা গভীর আস্থায় উচ্চারণ করবে, তারা আগামীর পোর্টাল পার হতে পারবে। ... দেখা হবে লিমাতে, ২০৬২ সালে।

লেখাটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের  সাবেক শিক্ষক প্রশান্ত ত্রিপুরার ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেয়া হয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫