গণমাধ্যমে মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে ১৯০ বিশিষ্ট নাগরিকের নিন্দা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:৪৪

পিটার হাস। ফাইল ছবি
গণমাধ্যমের ওপর ভিসা নীতি প্রয়োগ নিয়ে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্যে হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে নিন্দা জানিয়েছেন দেশের ১৯০ বিশিষ্ট নাগরিক।
গতকাল শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) তারা এ হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে পিটার হাসের বক্তব্যে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ জানিয়ে লেখা চিঠির বিষয় উল্লেখ করা হয়। গতকাল ওই চিঠি পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদের ওই চিঠির বিষয় উল্লেখ করে বলা হয়, এরইমধ্যে সম্পাদক পরিষদও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাষ্ট্রদূতকে একটি চিঠি লিখেছে যেখানে জানতে চাওয়া হয়েছে, গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে এই নীতি কিভাবে বাস্তবায়ন হবে বা কোন কোন বিষয়গুলোকে বিবেচনায় আনা হবে। কিন্তু রাষ্ট্রদূত এই বিষয়ে বিস্তারিত জবাব দেননি। বরং তার অবস্থান আমাদের হতবাক করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গণমাধ্যমে ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নীতির পরিপন্থী। বাংলাদেশে সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যম একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। উগ্রবাদী শক্তি, জঙ্গি, জামায়াত ইসলামীর মত যুদ্ধাপরাধীর দল, সন্ত্রাসী যারা প্রগতিশীল ও ধর্ম নিরপেক্ষ শক্তিগুলোকে নির্মূল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে সোচ্চার ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যম। এর ফলে বাংলাদেশ তালেবানের মত একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়নি।
এতে আরও বলা হয়, আমরা দেখেছি স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা ভিসানীতিতে গণমাধ্যমের কথা উল্লেখ করা থেকে বিরত ছিলেন। কিন্তু হাস তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করায়, ধারণা করা যায় গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়তো চূড়ান্ত। এরইমধ্যে সম্পাদক ও সাংবাদিকরা এটির নিন্দা করেছেন। হাসের এই বক্তব্যের কারণে সংবাদমাধ্যমগুলো সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশে বাধাপ্রাপ্ত হবে বলে মত দিয়েছেন অনেকেই।
হাসের দ্বৈত নীতির বিষয়টি তার বক্তব্যে উঠে এসেছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে আসার পর থেকে তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু তার এখনকার অবস্থান গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মৌলিক অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
অন্যদিকে পররাষ্ট্র দফতরের ঘোষণা ছিল, গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দিলে তারাও ভিসানীতির আওতায় আসবেন। কিন্তু হাসের বিবৃতিতে দেখা যায়, বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিশ্রুতি, আর সেখানে গণমাধ্যমের ভূমিকার যে সুযোগ ছিল। সেটিকে মারাত্মক বাধাগ্রস্ত করবে।
সর্বশেষ বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা দেখতে পেলাম ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখার প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ঘটেনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দণ্ডপ্রাপ্ত এবং আত্মস্বীকৃত খুনিদের ক্ষেত্রে, যাদের যুক্তরাষ্ট্র আশ্রয় প্রদান করছে। এটি বাংলাদেশের জন্য এমন এক জঘন্য হত্যাকাণ্ড যা মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটায়। সুতরাং আমরা মনে করি যে, ভিসা নীতিটি কীভাবে প্রয়োগ করা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা যৌক্তিক। কারা এর অনুমোদন দেবে এবং এই ধরনের পদক্ষেপের বৈধতা নিয়ে কারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তা বোঝাটাও জরুরি। কারণ আমরা রাষ্ট্রদূতের কার্যকলাপ দেখেছি এবং অন্যান্য কার্যাবলিও দেখেছি যা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাওয়া মৌলবাদী শক্তিগুলোর জন্য বারুদ হিসাবে কাজে এসেছে।
এই বিবৃতিতে লেখক, অধিকারকর্মী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাপরাধ বিরোধী প্রচারক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ মোট ১৯০ জন বিশিষ্ট নাগরিক স্বাক্ষর করেছেন। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, শহীদজায়া সালমা হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, অ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ, ক্যাপ্টেন (অব.) আলমগীর সাত্তার বীরপ্রতীক, অধ্যাপক ডা. আমজাদ হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরন নবী, অধ্যাপক শিল্পী আবুল বারক আলভী, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ডা. শেখ বাহারুল আলম, ডা. ইকবাল কবীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাজকর্মী সুব্রত চক্রবর্ত্তী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভূতত্ত্ববিদ মকবুল-ই এলাহী চৌধুরী, অধ্যাপক আবদুল গাফ্ফার, কবি জয়দুল হোসেন, সমাজকর্মী কাজী লুৎফর রহমান, সমাজকর্মী কামরুননেসা মান্নান, এডভোকেট আজাহার উল্লাহ্ ভূঁইয়া, মি. নির্মল রোজারিও, সভাপতি বাংলাদেশ খ্রিস্টান এ্যাসোসিয়েশন, ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়, সাধারণ সম্পাদক বুড্ডিস্ট ফেডারেশন। স্থান সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে কিছু নাম উল্লেখ করা হয়েছে।