
প্রশান্ত ত্রিপুরা।
একটা ভালো ‘কুসংস্কার’-এর কথা বলি? বেশ আগে আমার গবেষণার অংশ হিসাবে ত্রিপুরা জুমিয়া কৃষকদের কাছে জেনেছিলাম যে, বাদুড়ের গুহা আছে, এমন পাহাড়ে নাকি তাঁরা জুমচাষ করতেন না। এটা কি ‘কুসংস্কার’?
এবার 'কাকতালীয়' একটা যোগসূত্রের কথা বলি, যা বন্ধুরাও হয়তো অনেকেই জেনেছেন সম্প্রতি। সার্স, মার্স থেকে শুরু করে কোভিড-১৯-এর ভাইরাসসহ মানুষের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠা আরো একাধিক ভাইরাসের আদি উৎস খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা প্রায়শই কোনো না কোনো প্রজাতির বাদুড়ের হদিস পেয়েছেন। একই সাথে তাঁরা নতুন করে এটাও উপলব্ধি করছেন, নিত্যনতুন বৈশ্বিক মহামারি ঠেকাতে হলে অন্য সকল প্রাণীর আবাসস্থল ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করতেই হবে (এ বিষয়ক যে সব লেখালেখি ইদানিং চোখে পড়ছে নিয়মিত, সেগুলির সর্বশেষ একটি নমুনা মন্তব্যের ঘরে)।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বহু প্রজন্ম ধরে আদিবাসীদের বিভিন্ন 'কুসংস্কার' কিন্তু পরিবেশ সংরক্ষণেই অবদান রেখে এসেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে!
অতএব, হে দেশি সাহেববৃন্দ, আপনারা যাঁরা দু'কলম ইংরেজি ও তিন পাতা 'বিজ্ঞান' মুখস্থ করেই প্রান্তিক হয়ে ওঠা নিজেদের তুতো ভাইবোনদের 'কুসংস্কারাচ্ছন্ন' বলতে শিখেছেন, একটু ভাবুন, অন্যের বিশ্বাসকে কুসংস্কার বলতে গিয়ে আপনি নিজেই নিজের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বা দৃষ্টিভঙ্গীর সংকীর্ণতা জাহির করছেন কিনা। অথবা নিজেকে প্রশ্ন করুন, অন্যদের বিশ্বাসকে ‘কুসংস্কার’ বলে খারিজ করার আপনার অভ্যাসটাও এক ধরনের কুসংস্কার নয় কি?
লেখাটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক প্রশান্ত ত্রিপুরার ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেয়া হয়েছে।