
ইনসেটে সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, দ্য ফিন্যান্সিয়াল হেরাল্ডের সম্পাদক ও প্রকাশক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের (৭৬) দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
রাজধানীর বারিধারা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তৃতীয় জানাজা শেষে রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) বাদ আসর বনানীতে মায়ের কবরে তাকে সমাহিত করা হয়।
এর আগে, নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার নারান্দী চীন মৈত্রী কেন্দ্রের সামনে শরাফত আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বাদ জোহর দ্বিতীয় এবং প্রেস ক্লাব চত্বরে প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি রবিবার বেলা ১১টার দিকে অনুষ্ঠিত রিয়াজ উদ্দিনের প্রথম নামাজে জানাজায় অংশ নেন শিল্প মন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আকরামুল হাসান, শামসুদ্দিন দিদার, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, সম্পাদক পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, নোয়াব সভাপতি এ কে আজাদ, এডিটরস গিন্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, নিউ এইজের প্রকাশক এসএসএম শহিদুল্লাহ খান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, শওকত মাহমুদ ও সাইফুল আলম এসেছিলেন শ্রদ্ধা জানাতে।
এছাড়া সাংবাদিক শাহজাহান মিয়া, স্বপন সাহা, আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, এম এ আজিজ, বদিউল আলম, গোলাম মহিউদ্দিন খান, আবদুল হাই শিকদার, রফিকুর রহমান, এলাহী নেওয়াজ খান, কামরুল ইসলাম চৌধুরী, আবদুল হাই সিদ্দিকী, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এম আবদুল্লাহ, নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের শাহেদ চৌধুরী, মাইনুল আলম, আশরাফ আলী, কাজী রওনক হোসেন, বখতিয়ার রানা, কাদির কল্লোল শ্রদ্ধা জানান।
জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘তার এই মৃত্যুতে অভাবনীয় ক্ষতি হয়েছে সাংবাদিকতা পেশায়। পৃথিবীতে কোনো শূন্যতা থাকে না। তবে হয়ত উনাকে হারানোয় যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা এখনই পূরণ হবে না। উনার ভালো গুণগুলো আমাদের সকলের স্মরণ রাখা দরকার। তার সাহস, দেশপ্রেম, বস্তুনিষ্ঠতা, সাংবাদিক শ্রেণির জন্য তার দরদ-অবদানকে আমাদের স্মরণে রাখতে হবে।’
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রিয়াজ ভাইয়ের চলে যাওয়া আমাদের সকলের জন্যই বেদনার, কষ্টের। উনি সেই সাংবাদিক, যিনি গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা দিয়ে, তার মেধা দিয়ে সাংবাদিকতাকে সবসময় সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। আমি মনে করি, এই সময়ে যখন গণতন্ত্রের একটা সংকট চলছে, তখন তার মতো সাংবাদিকের খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে রাজনীতিতে তার একটা বড় শূন্যতা অনুভব করছি। তার বিদেহী আত্মার আমি শান্তি কামনা করছি।’
ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘সাংবাদিকদের অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির অনেক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন সম্পাদক পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। সবার সঙ্গে মিলে-মিশে কাজ করার একটা স্বভাবসুলভ গুণ ছিল রিয়াজ ভাইয়ের, আমরা যেন সেই গুণ আমাদের মধ্যে আনতে পারি। উনার সাংবাদিকতার মূল্যবোধকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা যেন আরো উন্নত স্তরের সাংবাদিক হতে পারি, এই প্রত্যাশা রইল।’
প্রেস ক্লাবে জানাজা শেষে হেলিকপ্টারে করে তার মরদেহ নেওয়া হয় জন্মস্থান নরসিংদীর মনোহরদীতে। পরে সেখানে বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় এলাকার শত শত মানুষ অংশ নেন। পরে হেলিকপ্টারে করে মরদেহ রাজধানীর বারিধারায় নেওয়া হয়। সেখানেই তৃতীয় জানাজা শেষে বনানীতে মায়ের কবরে তার মরদেহ সমাহিত করা হয়।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ শনিবার রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি করোনা-পরবর্তী জটিলতায় ভুগছিলেন।
১৯৬৮ সালে পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় যোগদানের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। ইংরেজি সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই খ্যাতিমান সাংবাদিক প্রায় ৫০ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের প্রধান সম্পাদক, দি নিউজ টুডের সম্পাদক ও প্রকাশক, ডেইলি টেলিগ্রাফের সম্পাদক, ডেইলি স্টারের উপ-সম্পাদক ছিলেন।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার তথ্য উপদেষ্টা ছিলেন কিছু দিন। ছাত্রজীবনে তিনি প্রথমে ছাত্রলীগ ও পরে বাংলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা ছিলেন।
তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক; অবিভক্ত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক; বিএফইউজের সভাপতি, মহাসচিব; সার্কভুক্ত দেশগুলোর সাংবাদিকদের ফেডারেশন সমন্বয়ে গড়া দক্ষিণ এশিয়া সাংবাদিক সমন্বয় পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সাউথ এশিয়ান ফ্রি মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন।