
ডটু রাসেল আজ অসীম ডট-এ হারিয়ে গেল।
রাসেল পারভেজকে ব্লগার-লেখক হিসেবে আবিষ্কার করি সামহোয়ারইনব্লগে, ২০০৭ সালে। তাকে সবাই ডটু রাসেল বলে ডাকতো, কারণ তার আইডিতে ‘রাসেল’-এর সঙ্গে বেশ কয়েকটা ডট ছিল। লেখক হিসেবে সে খুব শক্তিশালী ছিল। কিছুটা ক্ল্যারিটির অভাব বোধ হতো, কিন্তু প্রতিবাদী কণ্ঠটি স্পষ্ট ছিল।
২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলনের সময়ে প্রথমে যে তিনজন ব্লগারকে গ্রেফতার করা হয়, তার মধ্যে সে ছিলো। তারা ছিলো কুখ্যাত ৫৭ ধারার প্রথম শিকার! সেসময় আমরা এর প্রতিবাদ করেছি, কোর্টকাচারি করেছি। বস্তুত অন্যান্যদের সঙ্গে যৌথভাবে রিট করতে সেই আমার প্রথম হাইকোর্টে যাওয়া। Jyotirmoy Barua-র সঙ্গে সেই প্রথম কাজ করা। রাসেলকে বন্দি অবস্থায় পিজিতে রাখা হয়েছিলো, সেখানে গিয়ে দেখাও মিলেছিলো। রাসেলের স্ত্রী Asma Begum লিপির সঙ্গে সেই সময় পরিচয় হয়। তিনি আইইউবির শিক্ষক। তিনি আজ জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটিকে হারালেন। তাদের বাচ্চাদের বয়স বেশি নয়। তারাও বাবাকে হারালো। তাদের জীবনে তৈরি হয়েছে অপূরণীয় শূন্যতা।
রাসেলের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু Kowshik Ahmed - কৌশিকের বাসায়, শাহবাগের নানান আন্দোলনে রাসেলের সঙ্গে, লিপির সঙ্গে বহুবার দেখা হয়েছে। রাসেল এরপর জাপানে যায় পিএইচডি করতে।
বছরখানেক হবে না, কৌশিকের মাধ্যমে জানলাম, রাসেলের ক্যান্সার ধরা পড়েছে। গ্রুপ চ্যাটে কৌশিক আপডেট দিতো, কিন্তু কখনোই ভালো খবর দিতে পারেনি। ভারতে চিকিৎসা করানো হয়েছে, রাসেলের অসুখের উন্নতি হয়নি। সম্ভবত অ্যাডভান্সড স্টেজে ধরা পড়েছিলো ক্যান্সার। অসুস্থ অবস্থায়ও সে মাঝে মাঝে লিখতো ফেসবুকে। তীব্র অসুস্থতাজনিত কাতরতা তাতে দেখিনি।
রাসেল প্রায় আমার সমবয়েসী, বয়স পঞ্চাশ পেরোয়নি। কেউ অকালপ্রয়াত হলে আমার কেবল মনে হয়, বাংলাদেশের মানুষের মৃত্যুর গড় বয়স ৭০-এর ওপরে। আরো ২০/২৫ বছর জীবিত থাকার অধিকার তার ছিলো।
লিপি বহুদিন ধরে সংগ্রাম করছেন। আজ তিনি নিঃশেষ-নিঃসঙ্গ, তাকে প্রবোধ জানানোর ভাষা জানা নেই।
রাসেল জ্বলজ্যান্ত একজন শক্ত মানুষ ছিলো। আমাদের কাছে তার সেই ইমেজই রয়ে গেলো।
রাসেল আমার বন্ধু ছিলো।
লেখাটি গবেষক ফাহমিদুল হকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেয়া হয়েছে।