Logo
×

Follow Us

মিডিয়া

নিবেদন কোথায়? প্রাতিষ্ঠানিক কর্তৃত্ব না বুদ্ধিবৃত্তিক কর্তৃত্বের কাছে?

Icon

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:৩৬

নিবেদন কোথায়? প্রাতিষ্ঠানিক কর্তৃত্ব না বুদ্ধিবৃত্তিক কর্তৃত্বের কাছে?

গত ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের মূলফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ফটকের গায়ে লেখা চিকাটি আমার মনোযোগ কাড়লো। অমানবিক অথোরিটিকে ধিক্কার! ধমকে দাঁড়ালাম। ভারতজুড়ে ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার ফর সিটিজেন (এনআরসি) এবং সিটিজেনশিপ অ্যামেনমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) এর যে আন্দোলন চলছে সেই পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো এমন কড়া বার্তা সেটে দেয়া হয়েছে কলেজের সম্মুখভাবে।

যুগপৎভাবে, গত ২২ ফেব্রুযারি ২০২০ একুশে গ্রন্থমেলা থেকে ফিরছি। হঠাৎ চোখ পড়লো আরেকটি চিকা। লেখা- কায়দা করে বাঁচতে শিখো। দুটি চিকাই খুব তাৎপর্যপূর্ণ মনে হলো। মানুষকে মূলত অমানবিক অথোরিটির দীর্ঘ ছায়ার নিচে বাস করতে হয় । তা থেকে বাঁচতেই হয়তো এমন আহ্বান।

আমি প্রাতিষ্ঠানিক কর্তৃত্বকে ঘৃণা করি। ভালোবাসি বুদ্ধিবৃক্তিক কর্তৃত্বকে। যেখানে সুরম্য চেয়ার নয় মস্তিষ্কের ঘ্রাণই মুখ্য। বুদ্ধিবৃক্তিক কর্তৃত্বের বিষ্ঠা পরিষ্কার করতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কর্তৃত্বের হম্বিতন্বি দেখলে বিবমিষা হয়।

প্রাতিষ্ঠানিক কর্তৃত্বের যে কাঠামো তা আমার প্রিয় শিক্ষক সেলিম রেজা নিউটনের ভাষায় হৃদয়হীন। যা হৃদয়হীন তা নৈতিকতাবর্জিতও বটে। অথচ হৃদয়হীন এ প্রাতিষ্ঠানিক কর্তৃত্ব আজ নৈতিকতা ও শৃংখলা উৎপাদনের প্রধান এজেন্সি।

কর্তৃত্বকে হ্যান্ডেলের ব্যাপারে সবচেয়ে ধূর্ত ও স্বার্থবাজ তথাকথিত শিক্ষক শ্রেণি, যারা মূলত আপোষকামী, স্বার্থপর, অর্থলোভী, হিংস্র ও বর্বর। তারা কোনো কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার নূন্যতম সাহস রাখে না। কারণ, তারা ভীতু।

এ ভয় আসে জ্ঞানহীনতা ও যুক্তিহীনতা থেকে। এরা নিজেরা ভিতু এবং ভয় সঞ্চার করে দক্ষতার সঙ্গে। এক পর্যায় ভাষা হারিয়ে তো তো করে বাকি জীবন পার করে।

ফলে প্রাতিষ্ঠানিক কর্তৃত্বের নিচে কোনো বৃদ্ধিবৃক্তিক কর্তৃত্ব গড়ে ওঠা সম্ভব নয়। বড় জোর একটা অনুগত দাস শ্রেণি গড়ে ওঠতে পারে। সলিমুল্লাহ খান যেমন বলেন, একজন দাসকেও অন্য দাসের মুক্তির কথা ভাবতে হয়। হয়ত হয়। লোকজ ও প্রান্তিক বাংলা মানসে আমি প্রাতিষ্ঠানিক কর্তৃত্বকে অগ্রাহ্য করার তীব্র মনোভঙ্গী লক্ষ্য করেছি। এ লোকজ জনগোষ্ঠীই আমার নমস্য।

জগৎসংসারের এ বিশাল আমলাতন্ত্রের নিচে নিজের বুদ্ধিবৃক্তিক সত্তাকে জিয়ে রাখাই আজ বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু তা ধরে রাখা জরুরি। সার্বিক বৈরী পরিস্থিতিতে ইনডিভিজুয়্যাল এজেন্সি (ব্যক্তি সত্তার বিকাশ) সমৃদ্ধ করার কোনো বিকল্প নেয়।

এক বঞ্চনা থেকে ২০০৭ সালে হাইকোর্টে রিট করার জন্য ড. শাহ্দীন মালিকের কাছে যায়। তিনি কথা শুনে বলেছিলেন- মামলা করার দরকার নাই। বিশ্বায়নের অন্যতম দিক হলো ইনডিভিজুয়্যাল এজিন্সের বিকাশ। নিজেকে গড়ে তোলো। ধারণাটি ভালো লাগে। আমি আর মামলায় জড়াইনি। কারণ, ইনডিভিজুয়্যাল এজেন্সির মূল কথা বুদ্ধিবৃক্তিক উৎকর্ষ অর্জন। আমার অতিপ্রিয় জেএনইউ-এর ইতিহাসের অধ্যাপক রোমিলা থাপার যেমন বলেন, Intellectuality is the supreme authority। সুতরাং নিবেদন অবশ্যই বুদ্ধিবৃক্তিক কর্তৃত্বের কাছে প্রাতিষ্ঠানিক কর্তৃত্বের কাছে নয়।

লেখাটি যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ খান মো. রবিউল আলমের ফেসবুক থেকে নেয়া হয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫