ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসে দুর্নীতি: দুই সাবেক কর্মকর্তাসহ গ্রেপ্তার ১৩
ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসে দুর্নীতি: দুই সাবেক কর্মকর্তাসহ গ্রেপ্তার ১৩

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৩, ১৯:০০

ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাস। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে অবৈধ লেনদেন করার অভিযোগে ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসের দুই সাবেক কর্মকর্তাসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সৌদি আরব। দেশটির তদারকি এবং দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ (নাজাহা) গতকাল শনিবার (৪ মার্চ)-এ ঘোষণা দেয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ঢাকার সৌদি দূতাবাসের কনস্যুলার বিভাগের সাবেক প্রধান ও উপরাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ ফালাহ মুদাহি আল-শামারি এবং কনস্যুলার বিভাগের উপপ্রধান খালেদ নাসের আয়েদ আল-কাহতানি। বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি। তবে তাদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা, আটজন বাংলাদেশি নাগরিক, একজন দর্শনার্থী এবং একজন ফিলিস্তিনি বিনিয়োগকারী রয়েছেন।
আজ রবিবার (৫ মার্চ) সৌদি আরবের দৈনিক আল-মারসদ সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে তাদের গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে ৫ কোটি ৪০ লাখ সৌদি রিয়াল ঘুষ নিয়েছেন যা বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১৫৪ কোটি টাকার সমান।
এদিকে, টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে নাজাহা জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় সৌদি মুদ্রা, সোনা ও গাড়ি পাওয়া গেছে।
পরিচয় প্রকাশ না করে সৌদি আরবের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ভিসা বাণিজ্যের ব্যাপারে দেশটির তদারকি এবং দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষকে তথ্য দিয়েছে।
তারা জানিয়েছে, প্রায় এক বছর আগে ঢাকার সৌদি দূতাবাস রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো থেকে প্রতিটি ভিসা দেওয়ার জন্য ২২০-২৫০ মার্কিন ডলার আদায় করত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রমিকদের ভিসা দেওয়ার বিনিময়ে ৫ কোটি ৪০ লাখ রিয়াল আদায় করার কথা স্বীকার করেছেন ওই দুই সাবেক কর্মকর্তা। তারা জানান, এই অর্থের একটি অংশ সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছে এবং বাকিটা সৌদি আরবের বাইরে বিনিয়োগ করেছেন।
এদিকে, ঢাকার সূত্রগুলো জানায়, রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে ঘুষ নিয়ে ওয়ার্ক পারমিট দেওয়ার অভিযোগে সৌদি দূতাবাসের তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে বরখাস্ত হওয়া তৃতীয় কর্মকর্তার নাম জানা যায়নি।
নাম না প্রকাশ করা শর্তে একজন রিক্রুটিং এজেন্ট জানান, হঠাৎ করে সৌদি দূতাবাস একটি নিয়ম করে যে একটি রিক্রুটিং এজেন্সি সপ্তাহে ২০টির বেশি ভিসা আবেদন জমা দিতে পারবে না। একটি এজেন্সি সপ্তাহে মাত্র একবার ভিসা আবেদন করতে পারে।
কিন্তু অনেক রিক্রুটিং এজেন্সি সপ্তাহে কয়েকশ পাসপোর্ট নিয়ে কাজ করে। ভিসা পেতে এই এজেন্সিগুলো সমস্যায় পড়ে যায়। এজেন্সিগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্মীদের ভিসা পাইয়ে দিতে মরিয়া হওয়ায় দূতাবাসের কর্মীরা টাকা নেওয়া শুরু করে। এভাবে টাকার বিনিময়ে সৌদি ভিসা দেওয়া শুরু হয়। সংকট থাকার পরও তাদেরকে ডলারে অর্থ দিতে হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সৌদি কর্মকর্তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর পর ঘুষ আদায় বন্ধ হয়ে যায়।
গত বছর বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে গেছেন ৬ লাখ ১২ হাজারের বেশি শ্রমিক। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ওই দেশটিতে গেছেন আরও ৮৫ হাজার ৩১৯ জন।