Logo
×

Follow Us

মধ্যপ্রাচ্য

ইসরায়েলের স্থল আগ্রাসন: কী আছে লেবাননের ললাটে

Icon

অরুন্ধতী সুরঞ্জনা

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:১৩

ইসরায়েলের স্থল আগ্রাসন: কী আছে লেবাননের ললাটে

লেবাননে ইসরায়েলের আগ্রাসন। ছবি: সংগৃহীত

গাজায় যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হচ্ছে নিরীহ ও স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনিরা, তাদের প্রতি সর্বদাই সশস্ত্র সংহতি জানিয়ে এসেছে লেবাননের যোদ্ধাগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেই এখন হিজবুল্লাহকে শায়েস্তা করতে লেবাননের ভেতর ঢুকে স্থল আগ্রাসন শুরু করেছে ইসরায়েল।

বলা বাহুল্য, যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে ইসরায়েলকে। আর অভিযোগ আছে- ইরান হিজবুল্লাহকে উসকে দিচ্ছে এবং মদদ জোগাচ্ছে। প্রকাশ্যে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান লেবাননের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন। ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী প্রথম থেকেই ফিলিস্তিন ও হিজবুল্লাহর পক্ষ নিয়ে ইসরায়েলের ওপর অনিয়মিত হারে হামলা চালিয়ে আসছে। 

ইসরায়েল এরই মধ্যে হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে খুন করেছে। দুই সপ্তাহের কম সময়ে সহস্রাধিক লেবানিজকে হত্যা করেছে। এখন আবার স্থল আগ্রাসন শুরু করেছে। তারা কি হিজবুল্লাহকে নিঃশেষ করতে পারবে? এ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা সম্প্রতি একটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে মন্তব্য করা হয়, হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াই সংগঠনটিকে শুধু আরও শক্তিশালীই করবে, কেননা এটিকে নিঃশেষ করে দেওয়ার ধারণা অবাস্তব।

হিজবুল্লাহকে নির্মূল করার কোনো সম্ভাবনাই নেই। হিজবুল্লাহ লেবাননের সমাজের সঙ্গে মিশে আছে, বিশেষ করে দেশের দক্ষিণে শিয়া মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে। ২০০৬ সালে ইসরায়েল ঘোষণা করেছিল- হিজবুল্লাহকে তারা শেষ করে দেবে। সেই বছর দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ বাধে; কিন্তু ইসরায়েলের ঘোষণা বাস্তবে ফলেনি। দেশটির সেনাদের দক্ষিণ লেবানন ছেড়ে চলে যেতে হয়। যুদ্ধে হিজবুল্লাহ জয়ী হওয়ার দাবি করে।

ওই ঘটনার এত বছর পর এখন হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েল আবার স্থল অভিযান শুরু করল; কিন্তু এবারও তার জন্য ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। ইসরায়েলের এ কর্মকাণ্ডের জন্য হিজবুল্লাহ বছরের পর বছর তাদের যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ইসরায়েলের স্থল বাহিনীকে রুখতে এই যোদ্ধারা একদিকে যেমন সমন্বিত প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, অন্যদিকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। আবার ইসরায়েলের এ অভিযান হিজবুল্লাহবিরোধীদের উসকে দেবে এবং লেবাননকে আবার গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে- এমন আশঙ্কা করতে পারেন কেউ কেউ। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই সম্ভাবনাও খুব একটা নেই।

এদিকে এ অভিযান কি নিরপেক্ষ অঞ্চল তৈরি করবে এবং হিজবুল্লাহকে সীমান্ত থেকে দূরে সরিয়ে দেবে? এটি হতে পারে। তবে এর সম্ভাব্য চূড়ান্ত ফল বিপর্যয়কর। নিরপেক্ষ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা শুনতে ভালো লাগলেও সীমান্তে এ ধরনের যে কোনো উদ্যোগে ইসরায়েলের জন্য দুঃসংবাদ বয়ে আনার সম্ভাবনাই খুব বেশি থাকবে। নিরপেক্ষ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে তেল আবিবকে তার স্থলবাহিনীর চলাচল নিজ স্থলভাগেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। আর সংঘাত নিরপেক্ষ অঞ্চল এড়িয়ে লেবাননে ঢুকতে হলে ইসরায়েলি স্থলবাহিনীকে পার্বত্য ও পাথুরে পথ পাড়ি দেওয়ার মতো প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং ট্যাংক ও অন্যান্য সমরযানকে সড়কপথে পরিচালিত করতে হবে। এটি ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর হিজবুল্লাহর হঠাৎ আক্রমণ সহজতর করে তুলবে। হিজবুল্লাহর যে কৌশল ২০০৬ সালে হকচকিত করে দিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনীকে। অবশ্য ইসরায়েলি বাহিনী এখন অনেকটাই পরিপক্ক এবং আগের ভুল দ্বিতীয়বার করবে না তারা।

হিজবুল্লাহও ইতোমধ্যে কম শিক্ষা নেয়নি। সংগঠনটি এত বছরে তার বাহিনী আরও শক্তিশালী করেছে। ২০০৬ সালে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের সময় দক্ষিণ লেবাননে সংগঠনটির যোদ্ধার সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজারের মতো। এ সংখ্যা বর্তমানে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার; সঙ্গে রয়েছে হাজার হাজার রিজার্ভ সদস্য। হিজবুল্লাহর বিশেষ বাহিনী ‘রাদওয়ান ফোর্স’-এ রয়েছে তিন হাজার যোদ্ধা। তারা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েল সীমান্তে লড়াই করার বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এ অঞ্চল তাদের কাছে হাতের উল্টো পিঠের মতোই চেনা।

ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ- দুপক্ষই শত্রুর অবস্থান শনাক্ত করতে নানা ধরনের প্রযুক্তি, নজরদারি ড্রোন ব্যবহার করে। হিজবুল্লাহর আছে করনেট ক্ষেপণাস্ত্রের মতো ট্যাংক- বিধ্বংসী অত্যাধুনিক অস্ত্রের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার। ইসরায়েলের মারকাভা ট্যাংকের বিরুদ্ধে এটি তার কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। লেবাননে স্থল অভিযানের জেরে কোনো বাফার অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলেও ইসরায়েলকে সীমান্তে সেনা মোতায়েন রাখার পাশাপাশি জোরদার তল্লাশি, নজরদারি ও বিমানবাহিনীকে কাজে লাগানোর মতো পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। এতে দেশটির স্থলবাহিনী রাস্তায় পেতে রাখা বোমা, স্নাইপার, হঠাৎ আক্রমণ ও রকেট হামলার মতো নিরবচ্ছিন্ন ঘটনার সম্মুখীন হতে পারে।

তা ছাড়া বাফার অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলেও ইসরায়েলের অভ্যন্তরে রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়া বন্ধ করবে না হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কৌশলবিদরা বাফার অঞ্চলের আওতা বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারেন; কিন্তু লেবাননের যে কোনো স্থান থেকে ইসরায়েলের একেবারে ভেতরের লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর যথেষ্ট সক্ষমতা হিজবুল্লাহর রয়েছে। বিপরীতে বাফার অঞ্চল যত বড় হবে, তত বেশি লেবাননি ইসরায়েলি দখলদারির আওতায় পড়বেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫