
অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও ভূরাজনৈতিক আগ্রহকে মাথায় রেখে আস্তে আস্তে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ।
কিন্তু ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের একটা বড় অংশ ইসরায়েল যে আনুষ্ঠানিকভাবে দখল করার উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি কীভাবে দেখবে আরব বিশ্ব, সে বিষয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।
আগামী ১ জুলাই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের ৩০ শতাংশ জমি দখল করার লক্ষ্যে একটি বড় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত এই চাল সারা বিশ্বজুড়ে নানামুখী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকা আরব লীগও জানিয়েছে যে এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে এই অঞ্চলের ভেতরে-বাইরে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে ধর্মীয় যুদ্ধের আঁচ। পাশাপাশি জর্দানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ মে মাসে জার্মান সংবাদপত্র ডেয়ার স্পিগেলকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল এই দখলের পথে অনড় থাকলে ব্যাপক গণ্ডগোল বাধতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে আরব আমিরাতের দূত ইউসেফ আল-ওতাইবাও মনে করেন, এই পদক্ষেপ আরব-ইসরায়েল সম্পর্কের স্বাভাবিকত্বে আঘাত হানতে পারে।
জেরুজালেমে মার্কিন কনসুল জেনারেল জেক ওয়ালেস এ বিষয়ে বলেছেন, ইসরায়েল থেকে পাওয়া খবর থেকে আমরা জেনেছি যে আরব দেশগুলোর প্রতিক্রিয়ার জেরে সম্পূর্ণ অধিগ্রহণের বদলে আংশিক অধিগ্রহণের পথে হাঁটছে তারা৷
ওয়ালেসের মতে, আরব দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেই এমন পদক্ষেপ। এই অধিগ্রহণ যদি ১৯৬৭ সালের তথাকথিত সীমান্ত মেনে করা হয় তাহলে এর প্রত্যুত্তরে জর্দান নানা বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে।
এর আগে মার্কিন-ইসরায়েলের অধিগ্রহণ বিষয়ক সিদ্ধান্তে ফিলিস্তিনের বন্ধু হিসেবে পরিচিত আরব দেশগুলোর বিরোধিতা নজরে আসলেও তা ছিল তুলনামূলকভাবে ক্ষীণ। এর কারণ হিসাবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের সাথে এই দেশগুলোর ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুসম্পর্কের কথা।
এবিষয়ে ইসরায়েল ফোরাম ফর রিজিওনাল থিংকিংয়ের গবেষক এলিজাবেথ সুরকভ বলেন, আরব দেশগুলো এতদিন ধরে যা করে এসেছে তারই ফসল এই দুর্বল প্রতিরোধ। ফিলিস্তিনিদের ওপর অসহনীয় সামরিক অত্যাচারের সময়েও ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে লেগেছিলেন তারা।
দ্বিধাবিভক্ত মধ্যপ্রাচ্য
জর্দান ও অন্য আরব দেশগুলো যদি ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের বিরোধিতায় অনড় থাকে, তাহলে তা ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে আরো কড়া হতে উৎসাহ দেবে। পাশাপাশি গাজা অঞ্চলে হামাসের কার্যকলাপ বাড়িয়ে ইসরায়েলকে কড়া বার্তা দেয়া সম্ভব হবে। কিন্তু ইসরায়েলের তিন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক প্রধান ফরেন পলিসি পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনে আরব দেশগুলোর উদ্দেশ্যে সাবধানবাণী দিয়েছেন। তাদের মত, বিরোধিতার পথে থাকলে এরপর কূটনৈতিক রাস্তায় সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সম্ভাবনা কমবে।
এর মধ্যে বর্তমান অবস্থাকে আরো জটিলতার দিকে ঠেলে দিতে পারে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের বিষয়টি। কড়া পদক্ষেপের ফলে যদি বড় সংখ্যায় শরণার্থীরা জর্দানের সীমান্তে এসে পৌঁছান, তাহলে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
জেক ওয়ালেসের বক্তব্য, রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহর ওপর এখন একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্ক বজায় রাখা ও অন্যদিকে নিজের দেশের নাগরিকদের পক্ষ থেকে উঠে আসা ফিলিস্তিনপন্থি আওয়াজের চাপ। এটাই হয়ত জর্দানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়। -ডয়চে ভেলে