গাজায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিনিদের যত সংঘর্ষ

গেল কয়েক বছরের মধ্যে ইসরায়েলে সবচেয়ে বড় আক্রমণ চালিয়েছে ফিলিস্তিনের ইসলামি গোষ্ঠী হামাস। আজ শনিবার (৭ অক্টোবর) সকাল থেকে একের পর এক রকেট ছোড়া হয়েছে ইসরায়েলের শহরগুলোতে। এ হামলায় কমপক্ষে ২২ জন ইসরায়েলি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

হামাসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই যুদ্ধ দখলদারদের বিরুদ্ধে। ইসরায়েলও এটিকে যুদ্ধ ঘোষণা করে গাজায় হামাসের স্থাপনা লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা শুরু করেছে। 

ইতোমধ্যে ইসরায়েলের জনগণকে উদ্দেশ্য করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েলের জনগণ, আমরা যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি। আমরা জিতব।

গাজায় ২৩ লাখ মানুষের বসবাস। ২০০৫ সালে গাজা থেকে ইসরায়েল নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। তখন থেকে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বেশ কয়েকবার ভয়াবহ লড়াই হয়েছে। 

আগস্ট, ২০০৫: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে মিশর থেকে গাজা দখল করার ৩৮ বছর পর ইসরায়েলি বাহিনী গাজা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে এটি ছেড়ে দেয়। 

জানুয়ারি, ২০০৬: ফিলিস্তিনের আইনসভা নির্বাচনে হামাস সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় লাভ করে। হামাস সহিংসা ত্যাগ করতে এবং ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়ে অস্বীকার করার কারণে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। 

জুন ২০০৬: হামাস গোষ্ঠী গাজা থেকে আন্তঃসীমান্ত অভিযানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কর্মী গিলাদ শালিতকে বন্দী করে। এতে ইসরায়েল বিমান হামলা চালায় এবং গাজায় অনুপ্রবেশ করে। অবশেষে পাঁচ বছর পর বন্দী বিনিময় চুক্তির অধীনে মুক্তি পায় শালিত। 

জুন, ২০০৭: হামাস একটি সংক্ষিপ্ত গৃহযুদ্ধে গাজা দখল করে। পশ্চিম তীরে অবস্থিত ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের অনুগত ফাতাহ বাহিনীকে ক্ষমতাচ্যুত করে। 

ডিসেম্বর, ২০০৮: ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি শহর সেডেরোতে রকেট নিক্ষেপ করার পর ইসরায়েল গাজায় ২২ দিনে সামরিক আক্রমণ শুরু করে। যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আগে প্রায় ১,৪০০ ফিলিস্তিনি এবং ১৩ জন ইসরায়েলির নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 

নভেম্বর, ২০১২: হামাসের সামরিক প্রধান আহমাদ জাবারিকে হত্যা করে ইসরায়েল। এরপর আট দিন ধরে দুই পক্ষের হামলা-পাল্টা হামলা চলতে থাকে। 

জুলাই-আগস্ট, ২০১৪: হামাস কর্তৃক তিনজন ইসরায়েলি কিশোরকে অপহরণ এবং হত্যার অভিযোগে গাজায় হামলা চালায় ইসরায়েল। একসময় তা যুদ্ধে রূপ নেয়। সাত সপ্তাহ ধরে চলা যুদ্ধে ২,১০০ ফিলিস্তিনি এবং ৭৩ জন ইসরায়েলি নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। 

মার্চ, ২০১৮: ইসরায়েলের সঙ্গে সীমান্তে ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে গুলি চালায় ইসরায়েলি সেনারা। কয়েক মাসের বিক্ষোভে ১৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়।  

মে, ২০২১: রমজান মাসে কয়েক সপ্তাহের উত্তেজনার পর, ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান জেরুজালেমের আল আকসা প্রাঙ্গণে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে কয়েকশ ফিলিস্তিনি আহত হয়। আল আকলা প্রাঙ্গণ থেকে ইসরায়েলি  নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যাহারের দাবির পর গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালায় হামাস। এতে অন্তত ২৫০ জন ফিলিস্তিনি এবং ১৩ জন ইসরায়েলির মৃত্যু হয়। 

আগস্ট, ২০২২: ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইসলামি জিহাদ গোষ্ঠীর একজন সিনিয়র কমান্ডার আহত হওয়ার পর সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে ১৫ শিশুসহ অন্তত ৪৪ জনের মৃত্যু হয়। 

জানুয়ারি ২০২৩: ইসরায়েলি সেনারা একটি শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালিয়ে সাত ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী এবং দুই বেসামরিক নাগরিককে হত্যার পর ইসলামিক জিহাদ ইসরায়েলে রকেট নিক্ষেপ করে। এরপর গাজায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। 

অক্টোবর, ২০২৩: গত কয়েক বছরের মধ্যে ইসরায়েলে সবচেয়ে বড় আক্রমণ চালিয়েছে ফিলিস্তিনের ইসলামি গোষ্ঠী হামাস।  প্রথম ২০ মিনিটের অভিযানে ৫ হাজারের বেশি রকেট ছুড়েছে বলে জানিয়েছে হামাস।

ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এ পর্যন্ত ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের পাল্টাপাল্টি হামলায় কমপক্ষে ২৪৭ জন ফিলিস্তিনি, ৩২ জন ইসরায়েলি এবং ২ জন বিদেশি নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকও আছেন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //