-6609984890d57.jpg)
জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে আন্দোলকারীরা। ছবি- সংগৃহীত
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এতে অংশ নিচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। ইহুদিবাদী এই নেতাকে ‘চুক্তির পথে বাধা’ বলে উল্লেখ করে তাকে ক্ষমতাচ্যুত না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
গাজায় হামলা ঘিরে সাধারণ মানুষ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রবল চাপে রয়েছে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক জোট। গাজায় জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও সংহতি জানিয়েছে এসব আন্দোলকারী।
এদিকে, গাজার আল-শিফা হাসপাতালে গত ১৩ দিনে ৪০০ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। এমন বাস্তবতায় কয়েক দফা ব্যর্থ হলেও আবারও ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু হচ্ছে মিসরের কায়রোতে।
গত শনিবার শুরু হওয়া বিক্ষোভ ছড়িয়েছে তেল আবিব, জেরুজালেম, হাইফা, বেয়ার শেভা, সিজারিয়া এবং অন্যান্য শহরে। প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় নেমে আসা হাজারো বিক্ষোভকারী গাজায় এখনও বন্দি থাকা ইসরায়েলিদের মুক্তির দাবি জানায়।
বিক্ষোভে অংশ নিয়ে জিম্মি লিরি আলবাগের মা শিরা আলবাগ বলেন, আমার ছেলে এবং অন্য জিম্মিরা কী অবস্থায় আছে, সেই চিন্তা ও ভয়ে ১৭৬ দিন ধরে অন্য কিছু ভাবতে পারি না। তিনি বলেন, জিম্মি বিনিময় চুক্তিতে যে-ই বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তাকে ইসরায়েলের জনগণ ক্ষমা করবেন না। এখন আর কোনো অজুহাত চলবে না।
বিক্ষোভে অংশ নেন প্রায় ৫৪ দিন আগে মুক্তি পাওয়া জিম্মি রাজ বেন-আমি। বিক্ষোভকারীরা ‘জিম্মি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়’, ‘তারা সবাই বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত থামব না’ বলে স্লোগান দেয়।
এদিকে, বিক্ষোভ দমাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৬ জনকে।
গাজায় বন্দি মাতান জাঙ্গাউকারের মা আইনাভ জাঙ্গাউকার বলেছেন, আমরা অবিলম্বে নেতানিয়াহুকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরাতে না পারলে স্বজনদের জীবিত এবং দ্রুত বাড়ি ফিরিয়ে আনতে পারব না। আসবে তাদের লাশ। তাই আমরা আমাদের সংগ্রামের একটি নতুন পর্যায় শুরু করতে বাধ্য হয়েছি।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারীরা জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত বাসভবনের বাইরে জড়ো হয়। এ ছাড়া আজ রবিবার (৩১ মার্চ) শহরে আরেকটি গণবিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়।
এদিকে, ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরোক্ষ আলোচনার জন্য কায়রোতে প্রতিনিধি পাঠাবে তাঁর দেশ। হামাসের এক কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার ফলাফল কায়রোর মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে শোনার জন্য অপেক্ষা করছেন তারা।
গত বছরের নভেম্বরের শেষের দিকে মাত্র এক সপ্তাহ স্থায়ী হয়েছিল প্রথম যুদ্ধবিরতি। তার পর থেকেই বন্দি বিনিময় ও গাজায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে গাজায় বর্বরতা রেখেছে ইসরায়েল। রবিবার (৩১ মার্চ) গাজার কর্তৃপক্ষ জানায়, আল-শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান ও হামলায় ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ ছাড়া, শতাধিক ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তারও করেছে। গাজার মিডিয়া অফিস বিবৃতিতে বলেছে, নিহতদের মধ্যে রোগী, বাস্তুচ্যুত এবং স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন।
এরই মধ্যে প্রায় ৩৩২ টন খাবার ও অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে গাজার উদ্দেশে সাইপ্রাস বন্দর ছেড়েছে তিনটি জাহাজ। শনিবার লারনাকা বন্দর ছাড়ে জাহাজগুলো। সমুদ্রপথে প্রায় ৬০ ঘণ্টা চলার পর জাহাজগুলো অবরুদ্ধ গাজায় পৌঁছাবে।
এদিকে, গাজার আল কুয়েত গোলচত্বরে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়ে ১৭ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি দখলদাররা। রবিবার পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৭৮২ জনে।
সূত্র- গার্ডিয়ান, আল-জাজিরা