Logo
×

Follow Us

আন্তর্জাতিক

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির নেপথ্যে

Icon

স্বর্ণা চৌধুরী

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৩

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির নেপথ্যে

গাজায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। ছবি: সংগৃহীত

১৫ মাস ধরে চলা ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞে কার্যত গোটা গাজা উপত্যকা বিধ্বস্ত এবং এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৬ হাজার ৯১৩ জন; আহতের সংখ্যা এক লাখ ১০ হাজারের বেশি। হতাহতের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অর্থায়ন ও সামরিক, কূটনৈতিক সমর্থনে এই হামলা চালানো হয়। ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এখানেও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মার্কিন প্রশাসনের ভূমিকাই মুখ্য।

যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী ভূমিকা ছাড়া এই গণহত্যা বন্ধের কোনো অবকাশও ছিল না। চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত ব্রেট ম্যাকগার্ক। যিনি ৫ জানুয়ারি থেকে এ অঞ্চলে ছিলেন এবং যুদ্ধবিরতি নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। তবে ট্রাম্প বারবার সতর্ক করে দিয়েছিলেন, যদি তার ২০ জানুয়ারির শপথ গ্রহণের আগে যুদ্ধবিরতি কার্যকর না হয়, তবে চরম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

মার্কিন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা আলজাজিরাকে জানান, নভেম্বরে ইসরায়েল ও লেবাননের হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পর গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা গতি পায় এবং ৯৬ ঘণ্টা ধরে টানা আলোচনার পর এটি চূড়ান্ত হয়।

চুক্তির প্রথম পর্যায়ে হামাসের দিক থেকে একটি বাধা ছিল। তা হলো- কতজন জিম্মি আটক আছে বা জিম্মিদের মধ্যে কাদের মুক্তি দেওয়া হবে তা জানাতে তারা প্রথমদিকে সম্মত হয়নি। ডিসেম্বরের শেষের দিকে হামাস জিম্মিদের তালিকা জানাতে সম্মত হয়। ইসরায়েলের হাতে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিনিময়ে জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে রাজি হন তারা। ১৯ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মিদের তালিকা দিতে দেরি হওয়ায় যুদ্ধবিরতি আটকে যায়। অবশেষে হামাস তালিকা দেওয়ার পর স্থানীয় সময় বেলা সোয়া ১১টায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

এর আগে বহুবার গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। হামাসের প্রতিনিধিরা মিসরের রাজধানী কায়রোসহ বিভিন্ন স্থানে আলোচনায় বসেন। এসব আলোচনায় ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এগুলো ভেস্তে যায়। এসবের মধ্যেই হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে ইরানের রাজধানী তেহরানে হত্যা করে ইসরায়েল। এতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে; যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়ে।

কয়েক মাস ধরে চুক্তির জন্য কাজ করেছেন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন, মিসর, তুরস্ক ও উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা বারবার চুক্তির কথা বললেও তা ইসরায়েল সরকার আমলে নেয়নি। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে আলোচনায় রয়েছে ট্রাম্প ও তার বিশেষ দূত উইটকফের চেষ্টা। ১৫ জানুয়ারি বিকেলে দোহায় যখন চুক্তির বিষয়টি দৃশ্যমান, তখন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার জানান, তিনি তেল আবিবে ফিরে যাচ্ছেন। ওই দিনই ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে চুক্তিতে তার কৃতিত্বের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিজয়ের কারণেই এই মহাকাব্যিক চুক্তিটি হয়েছে। এটা পুরো বিশ্বের জন্য এই বার্তা যে, তার প্রশাসন শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে; পাশাপাশি সব মার্কিন নাগরিকের সুরক্ষায় চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবে। ট্রাম্প বলেন, এটা ভেবে তিনি রোমাঞ্চিত যে, মার্কিন ও ইসরায়েলের জিম্মিরা বাড়ি ফিরবেন, তারা তাদের পরিবার ও প্রিয়জনের সঙ্গে পুনর্মিলিত হবেন।

তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কালক্ষেপণের চেষ্টা অব্যাহত ছিল। এ অবস্থায় ১৭ জানুয়ারি একটি ফোনকল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সহযোগীদের বিস্মিত করেছিল। দ্য গার্ডিয়ান জানায়, সন্ধ্যায় কাতারের রাজধানী দোহা থেকে উইটকফ জানান, তিনি তেল আবিবে গিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তখন ইসরায়েলে অবকাশের সময় সাব্বাত শুরু হয়ে গেছে। নেতানিয়াহুর সহযোগীরা জানান, অবকাশের সময় তিনি শুধু একবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন; সেটা নেতানিয়াহুর ইচ্ছামতো কোনো সময়ে। তখন ট্রাম্পের দূত ৬৭ বছর বয়সী আইনজীবী উইটকফ সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়ে বলেন, সকালের দিকেই তিনি দেখা করবেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠক ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ ছিল বলে জানায় গার্ডিয়ান। স্টিভেন উইটকফের বার্তা ছিল- ট্রাম্প তার পূর্ব ঘোষণার জন্য চাপে রয়েছেন। তিনি জিম্মিদের মুক্তি এবং যে করেই হোক একটা যুদ্ধবিরতি চান। ট্রাম্প গাজার এ যুদ্ধ শেষ করতে চান। ওই বৈঠকের বর্ণনা দিতে গিয়ে নেতানিয়াহু সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা  বলেন, ট্রাম্পের পক্ষ থেকে উইটকফ এক কঠোর বার্তা দিয়েছেন; তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে একটি চুক্তি চেয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ বন্ধের অঙ্গীকার করে গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন ট্রাম্প। ২০ জানুয়ারি তিনি শপথ নেন। এর আগেই গাজায় যুদ্ধ বন্ধের চুক্তির মাধ্যমে বড় ধরনের সাফল্য দেখাতে চেয়েছেন। তবে এর মধ্যে এটি আবারও প্রমাণিত হলো যে, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া ইসরায়েল নিজ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম নয়; সেটা গণহত্যা হোক বা যুদ্ধবিরতি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫