
গীতিকার মতিউর রহমান।
বাংলাদেশে যে কজন আধুনিক গানের গীতিকার নিজের গানে পরিচয় বহন করেন তাদের মধ্যে অন্যতম হাসান মতিউর রহমান। ‘আমি বন্দি কারাগারে, ‘আমার লাইন হইয়া যায় আঁকাবাঁকা’, ‘রাঙ্গা মাটির পাহাড়ে’, ‘তুমি যে ক্ষতি করলা আমায়’সহ অসংখ্য গান তার জনপ্রিয় হয়েছে। এর বাইরে জাতির পিতাকে নিয়ে লেখা তার ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’ গানটি তাকে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। চলতি বছর তার এ গানটি পাঠ্যপুস্তকে জায়গা করে নিয়েছে। ক্লাস সিক্সের ‘শিল্প ও সংস্কৃতি’ বইয়ের ‘শুধিতে হইবে ঋণ’ নামক নিবন্ধের ৫৫ নম্বর পৃষ্ঠায় গানটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
হাসান মতি জানান, ১৯৯০ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফ্রান্সের দলীয় একটি সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। সেখানেই প্রথম এ গনাটি পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মলয় কুমার। তিনি আরও বলেন, মলয় কুমার আমাকে দুটি গান লেখার জন্য বলেন। অনেক দিন চেষ্টা করার পরও আমি নতুন কিছু লিখতে পারিনি। শেষবার বলার পর অনেক রাত পর্যন্ত গানটি নিয়ে ভাবি। ভোরের দিকে হঠাৎ আমার চিন্তায় আসে যদি রাত পোহালে শোনা যেত আমাদের বঙ্গবন্ধু মরেননি। এ ভাবনা থেকেই গানটি লিখেছি। তখন ভাবিনি এক রাত জেগে লেখা গানটি মানুষ কতটা গ্রহণ করবে।
১৯৭৮ সাল থেকেই পেশাগত গীতিকার হিসেবে গান লেখা শুরু করেন এ গীতিকার। সে সময় তার লেখা ১৪টি গান কুটি মুনসুরের সুরে গ্রামোফোন রেকর্ড থেকে প্রকাশ হয়। সে গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন শেখ জমিরউদ্দিন, সুফিয়া মনোয়ার, পারভীন, আনোয়ারা বেগম, জিএম সাদেকসহ কয়েকজন। হাসান মতির গান দিয়েই গানের জগতে যাত্রা শুরু করেন ‘পাগল মন’খ্যাত সঙ্গীতশিল্পী দিলরুবা খান। পেশাগত গীতিকার হিসেবে পথচলার শুরু আগে তিনি ছিলেন একজন ব্যাংকার। দশ বছরের মতো ব্যাংকে চাকরি করেন তিনি। গান লেখালেখি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গানের টানেই ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। এখন মনে হয় এ গান আমাকে নতুন প্রজন্মের কাছে বাঁচিয়ে রাখবে। আমি সব শ্রেণির শ্রোতার জন্য গান লিখছি। নিদিষ্ট কোনো শ্রেণির গীতিকার হয়ে থাকতে চাই না।’
নতুন গীতিকারদের নিয়েও তিনি কথা বলেন। তার ভাষ্য, আমি নতুনদের জন্য বলব যে কোনো সৃজনশীল কাজ বা সৃষ্টি যেন অনেক দিন মানুষের মনে থাকে এমনভাবে করতে হবে। সংস্কৃতি অনেক কিলোমিটার বেগে চলে। সময় সময় পরিবর্তন হয়। এটিকে অস্বীকার করা যাবে না। তাই সময় পরিবর্তন হলেও তার কাজটা যেন ঠিকই থাকে সেভাবেই লিখতে হবে।