বাংলা ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তী শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। তার চলে যাওয়ার ছয় বছর পূর্ণ হলো আজ। ২০১৮ সালের এ দিনে (১৮ অক্টোবর) প্রয়াত হন এই ব্যান্ড তারকা।

আশির দশক থেকে এবি গানে, সুরে ও কথায় জয় করেছেন লাখো বাঙালির হৃদয়।

শিল্পী হিসেবে তিনি ছিলেন অতুলনীয়। বরাবরই শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে স্মরণ করেন তাকে শোবিজ অঙ্গনের সকলে। স্টেজে তার জন্য কেঁদেছেন নগরবাউল জেমস।

ভক্তরা তাকে কতটা ভালোবাসেন সেটি দেখা গেছে তার জানাজায়। ঢাকায় এ তারকার জানাজায় মানুষের ঢল নামে। একইভাবে জন্মস্থান চট্টগ্রামে জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ময়দান পরিণত হয় জনসমুদ্রে। মাঠ ছাড়িয়ে পাশের সড়কেও সাধারণ মানুষ অবস্থান নেয়। আশপাশের বিভিন্ন ভবনের ছাদে জড়ো হয় নারী ও শিশুরা।

শিল্পী সত্বার বাইরে মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন তিনি? এবি ভক্তদের অনেকেই আগ্রহ নিয়ে এটি জানতে চান। ‘এলআরবি’ ব্যান্ডে একটা সময় অন্যতম সদস্য ছিলেন এস আই টুটুল। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি এলআরবি থেকে বের হবার পরেও কোনো দিন বাচ্চু ভাই আমাকে ভিন্ন চোখে দেখেননি। যখনই দেখা হতো তিনি আমাকে বুকে টেনে নিতেন। আমার জন্য তার কখনো ভালোবাসার কমতি ছিলোনা। আমার আজকের এতটুকু আসার পেছনে বাচ্চু ভাইয়ের কতটা অবদান সেটা ভাষায় বোঝানো যাবে না।’

অচেনা মানুষের সাথে আইয়ুব বাচ্চুর মতো তারকা কেমন আচরণ করতেন, তার একটা উদাহরণ দিয়েছেন বিবিসির সাংবাদিক আকবর হোসেন। এ কিংবদন্তির মৃত্যুর পর তাকে স্মরণ করে সে সময় বিবিসির সাংবাদিক আকবর হোসেন নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। এই পোস্ট পড়লেই বোঝা যাবে, মানুষ হিসেবে আইয়ুব বাচ্চু কত বড় ছিলেন! আকবর হোসেন লিখেছেন, ‘প্রায় ১০ বছর আগে আইয়ুব বাচ্চুর সাথে একই লিফটে উঠেছিলাম। সে লিফটে আরও ৫-৭ জনের মতো ছিলেন। সবাই একে অপরের সাথে পরিচিত নয়। শুধু আইয়ুব বাচ্চুকে সবাই চেনে। লিফটে ওঠার পর আইয়ুব বাচ্চু নিজ থেকে সবার সাথে পরিচিত হলেন। তিনি বললেন, ‘এই যে লিফটের ভেতরে আমরা সবাই বাঙালি। সবাই বাঙলা ভাষায় কথা বলি। কিন্তু লিফটে ওঠার পর মানুষ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। একজন আরেকজনের সাথে কুশল বিনিময় করে না। বিষয়টা আমার কাছে ভালো লাগে না। সেজন্য আমি লিফটে উঠলে সবার সাথে কুশল বিনিময় করি। আপনারা কিছু মনে করবেন না।’ বিষয়টি খুবই ছোট। কখনো সেভাবে খেয়াল করিনি। আইয়ুব বাচ্চু দেখিয়ে দিয়েছিলেন, কুশল বিনিময় করতে সব সময় পরস্পরের পরিচিত হতে হয় না।’

বাচ্চুকে নিয়ে কথা বলেছেন এবি কিচেনে কাজ করা কর্মী মো. কুদ্দুস হাওলাদার; যিনি এই গায়কের সঙ্গে দীর্ঘ ২২ বছর কাজ করেছেন, থেকেছেন জীবনের শেষ পর্যন্ত। কুদ্দুস বলেন, ‘আমার জীবনে যদি বাপের পরে কারো জায়গা থাকে তিনি বস। যারা উনার কাছে ছিল তারা জানত তার মন কত উদার ছিল। নিজে খাওয়ার আগে আমাদের খাওয়ার চিন্তা করতেন। বাইরে থেকে ওনারে বাঘের মত দেখাইলেও ভেতরটা নরম ছিল। মানুষের প্রতি মায়া ছিল।’

কখনো কর্মীদের সঙ্গে রাগারাগি করেননি? কুদ্দুস বলেন, ‘রাগ হলেও পরে আবার গায়ে হাত দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। বলতেন রাগ করিস না, একটু অন্য টেনশনে ছিলাম। রাগ করিস না, মাফ করে দিস। এটা প্রত্যেকটা মানুষের ক্ষেত্রেই উনি করতেন।’