‘সুন্দর সুবর্ণ’ এক সন্ধ্যায় সাবিনা ইয়াসমিন

বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:২১

বাংলা গানের কোকিলকণ্ঠী সাবিনা ইয়াসমিন। গত ৪ সেপ্টেম্বর ছিল তার জন্মদিন। ৭২-এ পা দেন তিনি। জন্মদিনের আগেই জানা যায়, এবার তার জন্য অপেক্ষা করছে বিশেষ একটি দিন। জন্মদিনে এই কিংবদন্তি জানান, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় তাকে সম্মাননা প্রদান করবে এবং তার একক সংগীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে।
অবশেষে দেখা মেলে বিশেষ এবং সেই সুন্দর দিনটির। ৭ সেপ্টেম্বর সম্মাননা, গান আর স্মৃতিচারণায় হয়ে উঠল অন্য রকম এক ‘সুন্দর সুবর্ণ’ সন্ধ্যা। যারা এই অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেছেন, তারা নিজেদের সৌভাগ্যবান বলেই মনে করছেন। এদিন সন্ধ্যায় আফজাল হোসেন মঞ্চে এসে অনুষ্ঠান শুরু করেন। শুরুতেই প্রয়াত লেখক ও গবেষক, রাজনীতিক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমরের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এরপর দেখানো হয়, সাবিনা ইয়াসমিনকে নিয়ে নির্মিত সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৈরি একটি প্রামাণ্যচিত্র। সেখানে বরেণ্য এই শিল্পীকে নিয়ে কথা বলেন তার সমসাময়িক, অগ্রজ ও অনুজ শিল্পীরা। প্রামাণ্যচিত্রের প্রদর্শনী শেষে শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা সাবিনার ‘গীতিময় সেই দিন চিরদিন’ গানের তালে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন।
সাবিনাকে উত্তরীয় পরিয়ে ও ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আজকে যাকে সম্মাননা দিচ্ছি, তিনি আমাদের কিংবদন্তি, সত্যিকারের গৌরব।’ আয়োজনে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
এদিন সাবিনাকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন সাত সংগীতশিল্পী-খুরশীদ আলম, রফিকুল আলম, আবিদা সুলতানা, নকীব খান, ফেরদৌস আরা, পার্থ বড়ুয়া ও আগুন। তাদের স্মৃতিচারণায় উঠে আসে নানা জানা-অজানা গল্প। এ ছাড়া সাবিনা ইয়াসমিনকে ‘মহানায়ক বুলবুল আহমেদ স্মৃতি সম্মাননা ২০২৫’ পদক দেন অভিনেতা বুলবুল আহমেদের স্ত্রী ডেইজি আহমেদ ও কন্যা ঐন্দ্রিলা আহমেদ।
এই আয়োজনে সাবিনা ইয়াসমিন একে একে শ্রোতাপ্রিয় ১০টি গান গেয়ে শোনান। গানগুলো হলো ‘সুন্দর সুবর্ণ’, ‘আমি রজনী গন্ধা’, ‘ফুল যদি ঝরে গিয়ে’, ‘শত জনমের স্বপ্ন’, ‘ইশারায় শিস দিয়ে’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’ ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘আমি আছি থাকব’, ও ‘সে যে কেন এলো না’।
সাবিনা ইয়াসমিন ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা লুৎফর রহমান ব্রিটিশ রাজের অধীনে সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মা বেগম মৌলুদা খাতুন। পৈতৃক বাড়ি সাতক্ষীরায়। তার পাঁচ বোনের মাঝে চার বোনই সংগীতের সঙ্গে যুক্ত। তারা হলেন ফরিদা, ফৌজিয়া, নীলুফার ও সাবিনা। তার আরেক বোন নাজমা ইয়াসমিন।
সাবিনা তার বাবার চাকরি সূত্রে নারায়ণগঞ্জে বেড়ে ওঠেন। শৈশব থেকে গানের পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন তিনি। এই কিংবদন্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন। মাত্র সাত বছর বয়সে প্রথমবার মঞ্চে গান করেন তিনি। ১৯৬২ সালে রবীণ ঘোষের সুরে ছোটদের জন্য গান গেয়ে সংগীতে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেন সাবিনা। একই বছর এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে গান করেন তিনি। ১৯৬৭ সালে আমজাদ হোসেন ও নুরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ চলচ্চিত্রে প্রথম প্লেব্যাক করেন এই কোকিলকণ্ঠী।