Logo
×

Follow Us

সংগীত

‘আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সঙ্গে সংগীতের সম্পৃক্ততা আরো বাড়ানো প্রয়োজন’

Icon

আশরাফুল ইসলাম আকাশ

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২০, ১০:৩৩

‘আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সঙ্গে সংগীতের সম্পৃক্ততা আরো বাড়ানো প্রয়োজন’

কুমার বিশ্বজিৎ।

আশির দশক থেকে শুরু করে এখনো দেশের সংগীতাঙ্গন যিনি মাতিয়ে রেখেছেন নিজের সুরের মূর্ছনায়, তিনি সংগীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার এবং সংগীত পরিচালক কুমার বিশ্বজিৎ। ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’, ‘চতুর্দোলায় চড়ে’ গানের সফলতার পর ‘চন্দনা গো’ গানটি শ্রোতারা পছন্দ করেন।

তারপর ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ গানটিও খুব জনপ্রিয় হয়। কোনোকিছুর জন্য তাড়াহুড়া করেননি। এরপর ‘ছোট ছোট আশা’ গানটিও শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছে। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ধারাবাহিকতা রয়েছে সবকিছুর মধ্যে। তার কাছে সফলতা ধাপে ধাপে এসেছে। 

এইতো ২ জুন শ্রোতাদের ভালোবাসার বৃষ্টিতে ভিজেছিলেন গুণী এই শিল্পী। বিশ্বজুড়ে মানুষ যখন করোনা আতঙ্কে, তখন কে কার কথা মনে রাখে; কিন্তু কুমারের শ্রোতারা তাকে ভুলেননি। প্রিয় শিল্পীর জন্মদিনে ছবি ও শুভেচ্ছাবার্তায় সয়লাব হয়ে গিয়েছিল ফেসবুক। 


শ্রোতাদের এই ভালোবাসার জবাবে কুমার বিশ্বজিৎ সাম্প্রতিক দেশকালকে মুঠোফোনে বলেন, এই দুঃসময়ে আমাকে যেভাবে সবাই ভালোবাসা, শুভেচ্ছা জানাল, আসলে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমি খুব নগণ্য একজন মানুষ। সংগীতের পূজারি। সবার কাছে আমি আরও ঋণী হয়ে গেলাম। আমার ছোট্ট এই জীবনে আমাদের সংগীতাঙ্গনকে আমি যা দিয়েছি প্রতিদানে তার বহুগুণ পেয়েছি। সবার দোয়া, ভালোবাসা সহযোগিতায় আমি আজকের কুমার বিশ্বজিৎ। তাই সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমার মনে হয়, সৃষ্টিশীল মানুষের জন্য একজীবন যথেষ্ট নয়। আরও সময় পেলে অনেক কিছু করা যেত।

মাকে ছাড়াই জীবনে এই প্রথম জন্মদিনের সময়টা পার করতে হয়েছে কুমার বিশ্বজিৎকে। জীবনের বাকিটা সময়ও মায়ের আশীর্বাদকে সঙ্গে নিয়ে মাকে ছাড়াই বাকিটা জীবন পার করতে হবে। কারণ তার মা তাকে ছেড়ে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর পরপারে চলে গেছেন। করোনার এই ক্রান্তিকালে নিজের জন্মদিন নিয়ে কোনো উচ্ছ্বাস নেই, আনন্দ নেই। অবশ্য তিনি জানান, কখনই তার জন্মদিন নিয়ে বর্ণাঢ্য তেমন কোনো আয়োজন হতো না। এ প্রসঙ্গে তার অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, সারাবিশ্বে করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে জীবন-জীবিকার প্রশ্নে এত বেশি দুশ্চিন্তা-অনিশ্চয়তা সেখানে আমার জন্মদিনটি আসলে বড় বেশিই গৌন হয়ে যায়। 

আপনার জীবনে সেরা জন্মদিনের স্মৃতি কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, ১৯৭৭ সালের জন্মদিনটা আমার কাছে আজও স্মরণীয়। ব্যান্ড করব, একটা ড্রাম সেট খুব দরকার ছিল। তখন চাইলেই সেটা ভাড়া নেওয়া বা জোগাড় করা সম্ভব ছিল না। সে বছর জন্মদিনে বাবা আমাকে ড্রাম সেট কিনে দিয়েছিলেন। ‘সেই আনন্দের কথা বলে বোঝানো যাবে না’, বললেন কুমার বিশ্বজিৎ।


গানে তার ক্যারিয়ার শুরু ১৯৭৭ সালে রেডিওতে একটি শোর মাধ্যমে। ১৯৭৭ সালেই ‘রিদম’ ব্যান্ডের সঙ্গে যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে তিনি নিজেই একটি ব্যান্ড দল গড়ে তোলেন। ১৯৮২ সালে বিটিভিতে ‘শিউলিমালা’ অনুষ্ঠানে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেন। আবদুল্লাহ আল মামুনের লেখা এবং নকীব খানের সুরে ‘তোরে পুতুলের মতো করে’ গানটি গেয়ে শ্রোতাদের কাছে ব্যাপক পরিচিতি পান তিনি।

এই গানটি ছিল তার সংগীতজীবনের টার্নিং পয়েন্ট। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৮৫ সালে আলাউদ্দিন আলীর সুর ও সংগীতে ‘আমরা দু’জন দুটি শান্ত ছেলে’ গানে প্রথম প্লেব্যাক করেন। এরপর বহুসংখ্যক আধুনিক গান এবং চলচ্চিত্রের গান গেয়েছেন কুমার বিশ্বজিৎ। তিনি চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সংগীতশিল্পীর পাশাপাশি সুরকার হিসেবেও তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের আরও অনেক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

 তিনি মনে করেন, দীর্ঘ সংগীতের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় অবদান  রয়েছে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের। তিনি বলেন, যে কোনো কাজে সফল হতে গেলে পরিবারের একটা ভূমিকা থাকে। আমার বেলাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পরিবারের অপার ভালোবাসা পেয়েছি। সংগীতে তারা আমাকে সুযোগ দিয়েছে। ভালো ভালো গান করার বিষয়ে সহযোগিতা করেছে। বিশেষভাবে হ্যাপী আখন্দ, লাকী আখন্দ এবং মো. আবু তাহের, গোলাম মোস্তফা, স্বপন ভট্টাচার্য, আলাউদ্দিন আলী, আল মনসুর আর সাকিনা সরোয়ার সবার কাছে আমার অনেক ঋণ। তারা না থাকলে এখানটায় দাঁড়াতে পারতাম না।

বর্তমানে সংগীতজগতের বিভিন্ন বিষয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংগীত সবক্ষেত্রে দৃষ্টি দিয়ে দেখার বিষয় নয়। সংগীত অনুভব এবং উপলব্ধির বিষয়। মিউজিক ভিডিওর কারণে এই অনুভব, উপলব্ধির জায়গাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সংগীতের চেয়ে ভিডিও প্রাধান্য পেলে তখন সেখানে সংগীত গৌন হয়ে পড়ে, যা একজন সংগীতশিল্পীর জন্য কষ্টকর। তিনি আরো  বলেন, আমি মনে করি, আমাদের যে সংস্কৃতি, যে ঐতিহ্য তার সঙ্গে সংগীতের সম্পৃক্ততা আরো বেশি বাড়ানো প্রয়োজন। আমাদের শেকড় থেকে যেন আমরা বিচ্ছিন্ন না হই। আধুনিকতার নামে নিজের সংস্কৃতি যেন বিসর্জন না দিই। আমাদের তরুণরা সারাপৃথিবীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যাবে। তবে তাদের উচিত পূর্ব প্রজন্মের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি জানা এবং শেখা।


সংগীতে প্রযুক্তি ব্যবহার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার তো হবেই। তবে প্রযুক্তির ভালো এবং খারাপ দুটি দিক-ই রয়েছে। ভালো যা, সেটা গ্রহণ করলে কোনো সমস্যা নেই।

নতুন প্রজন্মের প্রতি কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, খ্যাতির পেছনে দৌড়ালে চলবে না। একান্তভাবে নিজের মনে কাজ করে যেতে হবে। সহজলব্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সময় বলে দেবে কতদূর যাবে। কাজের মধ্যে ভার্চুয়ালিটি থাকতে হবে। সবশেষে সফলতার সংজ্ঞা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে সফলতার সংজ্ঞা হলো একাগ্রতা, অনুশীলন আর পরিশ্রম। যতটুকু সফলতা পেয়েছি তার পেছনে এসব কিছুর অবদান রয়েছে। এগুলো ছাড়া সফল হতে পারতাম না।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫