
বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পী এন্ড্রু কিশোর আর নেই। তিনি গত ৬ জুলাই পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। প্লেব্যাক সম্রাটের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছেন তার সহকর্মীরা।
আমি বাকরুদ্ধ: গাজী মাজহারুল আনোয়ার
কী থেকে কী হয়ে গেল, বুঝলাম না। সিঙ্গাপুরে এক স্টেজে আমরা অনেকেই ছিলাম। কিশোর গানও করেছে। ওর সঙ্গে কথা বলে এসেছিলাম। ওকে সান্ত¡না দিতে গেলে ও আমাদের সাহস দিত। ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’ এ গানটা ও স্টেজে গেয়ে কান্না করেছিল। আমাদের সবার চোখেই তখন পানি ছলছল করছিল।
ওর সঙ্গে এটাই আমার শেষ স্মৃতি। দু’দিন আগেও ফোন করেছিলাম ওর নম্বরে, ধরেনি। বুঝতে পেরেছি কিছু একটা ঘটেছে। ছোট ভাই চলে গেল, এখন বড় ভাই হিসেবে আমার অবস্থা কী আর বলব? এখন আমিই প্রশ্ন করছি, আসলে আমি নিতে পারছি কি? চলে যাওয়ার জন্য খুব বেশি সময় হয়েছে কি? আমি বাকরুদ্ধ। কিশোর যেখানেই থাক, ভালো থাক।
শতভাগ পেশাদার শিল্পী ছিলেন: সৈয়দ আবদুল হাদী
এন্ড্রু কিশোর আমার পরিবারেরই একজন। সারাটি জীবন তার সুখে-দুঃখে পাশে ছিলাম ছায়ার মতো। কিশোর শতভাগ পেশাদার একজন শিল্পী, কোনোদিন কাজে ফাঁকি দেয়নি, খুব সময় সচেতন, মানুষকে যেমন সম্মান করত, ঠিক তেমনি মানুষও তাকে সম্মান করতেন। একজন এন্ড্রু কিশোর বাংলাদেশের গানের অহঙ্কার। আমার মেয়ে রাজকন্যাকে নিজের মেয়ের মতোই আদর করত এন্ড্রু। বিধাতা তাকে ওপারে ভালো রাখুক এ প্রার্থনা করি।
আমি সহ্য করতে পারছি না: কনকচাঁপা
আমি কিছু বলতে পারছি না। দাদাকে নিয়ে কি বলব। আমি সহ্য করতে পারছি না! কিছুই ভালো লাগছে না। দাদা এত তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। তার কথা আমার কানে এখনো বাজে। তার জন্য উপহার হিসেবে একটা কাজ করছিলাম। এ নিয়ে কথা বলার সময় আমি কান্না করছিলাম। দাদা আমাকে বললেন, দূর বোকা, কাঁদিস কেন? দেখিস, আমি ভালো হয়ে যাব। তোদের মাঝে সুস্থ হয়ে ফিরে গান করব। কাঁদিস না, বলে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন। অবশেষে চলেই গেলেন তিনি! দাদা, যেখানে থাকুন, ভালো থাকুন।
নিজের অর্ধেক মৃত্যু হয়ে গেল: কুমার বিশ্বজিৎ
আমি এখন কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই। মনে হচ্ছে আজ নিজের অর্ধেক মৃত্যু হয়ে গেল। প্রাণের বন্ধু, ভাইতুল্য মানুষটাকে হারিয়ে বড্ড একা লাগছে। কিছু ভাবতে বা বলতেও ভালো লাগছে না। আমার স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। এন্ড্রু দা ভালো থাকুক।
মনে হচ্ছে চারদিকে ফাঁকা: সামিনা চৌধুরী
ভাবতে পারছি না এন্ড্রুদা আর নেই। মনে হচ্ছে চারদিকে ফাঁকা। আমার কেউ নেই এই পৃথিবীতে, আর উনাকে নিয়ে লিখে কী হবে? আর কেউ ওনার জন্য টাকা চাইবে না। শিল্পীদের মধ্যে ভাগাভাগি হবে না। মানুষের খারাপ কথা আর শুনতে হবে না। আমি, এন্ড্রু দা আর আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল একই সিনেমা দিয়ে অভিষেক করেছিলাম। সেই পপুলার গান আমার বুকের মধ্যিখানে মন যেখানে হৃদয় যেখানে। বাকি দু’জন চলে গেল আমি একাই পড়ে রইলাম।
সারপ্রাইজ দিয়ে চলে গেলেন: এসআই টুটুল
আমরা একসঙ্গে অনেক শো করেছি। আমেরিকায় দীর্ঘদিন আমরা একসঙ্গে থেকেছি, একরুমে। একসঙ্গে গলার রেওয়াজ করতাম। আজও হানিফ সংকেতের সঙ্গে কথা বলেছি দাদাকে নিয়ে। সংকেত দাকে বললাম, চলেন দেখতে যাই। তখন তিনি বললেন এখন গেলে তো দেখা করতে পারবি না। কথা বলতে পারবি না। কবির বকুল ভাইয়ের সঙ্গেও কথা হয়েছে, চলুন ওনাকে গিয়ে সারপ্রাইজ দিয়ে আসি; কিন্তু যাওয়া হলো না। বিকেল গড়াতেই উনি নিজেই সারপ্রাইজ দিয়ে চলে গেলেন।