
কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই
কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেলগুলো সেই, আজ আর নেই।
নিখিলেশ প্যারিসে মঈদুল ঢাকাতে নেই তারা আজ কোন খবরে
গ্র্যান্ডের গিটারিস্ট গোয়ানিজ ডিসুদা ঘুমিয়ে আছে যে আজ কবরে
-উপমহাদেশের কিংবদন্তি কন্ঠশিল্পী মান্না দে’র কালজয়ী এ গানের ঢাকার ‘কাগজের রিপোর্টার মঈদুল’ আর নেই (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)।
কফি হাউজের সোনালী বিকেল অনেক আগেই হারিয়ে গেলেও কালজয়ী এ গানে বেঁচে ছিলেন মঈদুল। কিন্তু গত বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
কফি হাউজের অন্যতম চরিত্র ছিলেন ঢাকার এ মঈদুল। পুরো নাম নূর আহমেদ মঈদুল। একাধারে ছিলেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ধারাভাষ্যকার, ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়ালেখক।
কাগজের রিপোর্টার মঈদুল সাংবাদিকতা করেছেন দৈনিক আজাদ, ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, ইনকিলাব, সংবাদ, বাংলার বাণী আর দৈনিক পূর্বদেশে।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার জানাজা শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ভারতের কিংবদন্তি কন্ঠশিল্পী মান্না দের জনপ্রিয় গান ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’-এর ‘কাগজের রিপোর্টার মঈদুল’ই হলেন এই নূর আহমেদ মঈদুল।
১৯৩৬ সালের ১৩ জানুয়ারি কলকাতার উত্তর চব্বিশ পরগনার দরগাহ গ্রামে জন্ম হয় মঈদুলের। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়ার সময় কলেজ লিগ ফুটবলে এবং এরপর কলকাতা মোহামেডানের হয়ে ফুটবল খেলেছেন তিনি। পাশাপাশি ব্যাডমিন্টন খেলাতেও পারদর্শী ছিলেন। ১৯৬৪ সালের দাঙ্গার সময় তার পরিবার কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে। ১৫ বছর বয়সে মান্না দের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। মান্না দের গানের আসরে অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিত তিনিও থাকতেন।
ঢাকায় স্থায়ী হওয়ার পর মঈদুল ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ব্যাডমিন্টন খেলতেন। ফুটবল খেলেছেন সে সময়ের ইকবাল স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান রেডিওতে নাটকের অডিশন দিতে গিয়ে বরেণ্য ধারাভাষ্যকার মোহাম্মদ শাহজাহানের সঙ্গে দেখা হলে তার হাত ধরে ধারাভাষ্যে চলে আসেন তিনি। ১৯৬৬ সাল থেকে দৈনিক আজাদ, ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, ইনকিলাব, সংবাদ, বাংলার বাণী ও দৈনিক পূর্বদেশে খেলাধুলা নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করতেন। এছাড়া বিভিন্ন সাপ্তাহিক ও পাক্ষিকে লিখতেন মঈদুল। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির আজীবন সম্মাননা পান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৫ জুলাই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ার পর তাকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত বুধবার (১৫ জুলাই) তিনি সোনালী বিকেলটাকে আরো বিবর্ণ করে চলে যান না ফেরার দেশে।