
সাব্বির নাসির
সংগীতশিল্পী সাব্বির নাসির নব্বই দশকের গানের শিল্পী। অনেক দিন দূরে থাকার পর আবার তিনি গানে ফিরেছেন। নিয়মিত গান করছেন।
এরই মধ্যে প্রকাশিত তার ‘তুমি যদি বলো’, ‘পোকা’ গান দুটি দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। ১৯৮৫ সাল থেকে গানের সাথে জড়িত তিনি। তার সংগীত জীবন ও সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন এন আই বুলবুলের সাথে...
আপনার গানের শুরুর কথা জানতে চাই?
গানে হাতেখড়ি ছোটবেলায়। একসময় খ্যাতিমান ওস্তাদদের কাছ থেকে তালিম নিয়েছি। গান গাওয়ার পাশাপাশি আমি লিড গিটার বাজাই। ১৯৮৫ সাল থেকে ব্লুজ মিউজিক নিয়ে কাজ করেছি। অসংখ্য গানের সাথে গিটার বাজিয়েছি। ১৯৯৮ সালে মেটামরফোসিস ব্যান্ডের সাথে ‘জীর্ণ শহরে বৃষ্টি নামে’ অ্যালবামে কাজ করেছি। এভাবেই গানের সাথে জড়িয়ে পড়ি। তারপর আবার বিভিন্ন কারণে কিছুদিন গান থেকে দূরে ছিলাম। তবে এখন নিয়মিত গান করছি।
অনেকে বলেন, এখন গানের অবস্থা ভালো না। এরমধ্যে কী ভেবে গানে নিয়মিত হলেন?
শিল্পীদের একটু অভিমান বেশি। তাই বলে গান থেকে একেবারে দূরে থাকা কোনো শিল্পীর পক্ষে সম্ভব না। সমসাময়িক মিউজিশিয়ান আর বন্ধুদের অনুপ্রেরণায় আবার স্টুডিওতে ফিরেছি। হাতে তুলে নিয়েছি পুরনো সেই গিটার।
আপনি কোন ধরনের গানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
আমি এই সময়ে যে গানগুলো করছি সেগুলো একেকটি একেক টাইপের। তবে অনেকের কাছ থেকে শুনছি ফোক টাইপের গান আমার ভয়েসে বেশি ভালো লাগছে। আমিও অনেক দিন পর এই বিষয়টি অনুধাবন করেছি। ফোক টাইপের ভালো কথা ও সুর পেলে কিছু গান করবো।
সংগীতের এই সময়টাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
আমার শুরুটা আর এই সময়টায় অনেক ব্যবধান। আমাদের সেই সময় সব ছিল অ্যাকুয়েস্টিক। আর এখন সব ডিজিটাল হয়ে গেছে। একটি গানে গিটারের জন্য তাকে কারও কাছে দৌড়াতে হচ্ছে না। নিজের মতো করে ডিজিটালভাবে গিটার নামানো হচ্ছে। তবে এটাতে গানের মান অনেক কমে গেছে। একই ঢংয়ের গান বেশি হচ্ছে। আবার অনেকে ইউটিউবের বেশি ভিউয়ের জন্য সস্তা কথা ও সুরকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। আমি মনে করি, একজন শিল্পীর উচিত ভালো কথা ও সুরকে প্রাধান্য দেয়া। তাহলেই সেই শিল্পী তার গানের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকবেন।
একটা সময় আমাদের দেশে ব্যান্ডের জয়জয়কার ছিল। আপনিও দীর্ঘদিন বিভিন্ন ব্যান্ডের সাথে ছিলেন; কিন্তু এখন ব্যান্ডের সেই উত্তাপ নেই কেন?
ব্যান্ডের উত্তাপ না থাকলেও ব্যান্ড শিল্পীদের উত্তাপ আছে। এখনো মানুষ জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকাদের গান শোনে। তবে এটি সত্যি গেল একদশক সলো শিল্পীদের দখলে আমাদের সংগীতাঙ্গন। এই সময়ে আমরা অনেক জনপ্রিয় শিল্পী পেয়েছি। তারা ব্যান্ডের বাইরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিছু অব্যবস্থাপনার কারণে অনেক ব্যান্ড মাঝপথে থেমে গেছে। একটি ব্যান্ড গড়ে ওঠে কয়েকজনের সমন্বয়ে। সেখানে সবার যদি মতের মিল না হয় সেটি টিকে থাকে না।
নতুন ব্যান্ড শিল্পীদের জন্য আপনি কিছু বলবেন?
যারা ব্যান্ড করছেন বা করবেন তাদের সমন্বয় ও মতের মিল থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে দল প্রধানের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। ব্যান্ডের সদস্যদের মধ্যে কোনো কারণে মান অভিমান হতে পারে। তাই বলে দল থেকে বের হয়ে যাব এমন সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। সবাইকে এক হয়েই এগিয়ে যেতে হবে।
এখন গান প্রকাশ মানেই ইউটিউব ও বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। এখানে একজন শিল্পীর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ কেমন বলে মনে করেন?
সময়ের সাথে সাথে সব কিছুতে পরিবর্তন আসে। গান প্রকাশেও সেই পরিবর্তন আমরা দেখছি। এটাকে আমাদের গ্রহণ করতে হবে। এই পরিবর্তন আমাদের সবার জন্য ভালো। আগে শিল্পীদের পরিধি ছিল দেশের মধ্যে। এখন সারাবিশ্বের মানুষ একজন শিল্পীর গান শুনতে পাচ্ছে। তবে এখন প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। যে ভালো কিছু করবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের দর্শক তাকে গ্রহণ করবে।