Logo
×

Follow Us

সংগীত

সুর সম্রাজ্ঞী লতার মহাপ্রস্থান

Icon

রাফিউজ্জামান রাফি

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪:১৪

সুর সম্রাজ্ঞী লতার মহাপ্রস্থান

লতা মঙ্গেশকর

সে অনেক দিন আগের কথা। মুম্বাইয়ের প্রযোজক শশধর মুখোপাধ্যায় একটি সিনেমা নির্মাণ করছিলেন। সিনেমাটির নাম শহীদ। সিনেমাটির সংগীত পরিচালক ছিলেন গুলাম হায়দার। এই সিনেমার গানেই কণ্ঠ দিতে এসেছিলেন ভারতের ইন্দোর রাজ্যের এক তরুণী।

মেয়েটি ছিলেন সিনেমার গানে নতুন। চলচ্চিত্রে গাওয়ার অভিজ্ঞতা বলতে এর আগে দু’একটি মারাঠি সিনেমার গানে কণ্ঠ দেওয়া হয়েছিল তাঁর। নতুন সেই মেয়েটিকে গুলাম হায়দার শহীদ সিনেমায় একটি গান করার সুযোগ দিলেন; কিন্তু সে গান শুনে মন ভরল না সিনেমাটির প্রযোজক শশধর মুখোপাধ্যায়ের।

তিনি গুলাম হায়দারকে বললেন, মেয়েটির কণ্ঠটা খুব পাতলা। একে দিয়ে তার সিনেমায় যেন না গাওয়ানো হয়। সে দিন প্রযোজক মেয়েটির কণ্ঠের সমাদর না করলে পাকা জহুরী গুলাম হায়দার হীরা চিনেছিলেন ঠিকই।

আর তাই তো গুলাম হায়দার শশধরকে বলেছিলেন, আজ যে মেয়েটিকে বলিউডের সিনেমায় গান গাইতে দেওয়া হলো না, এক দিন গান গাওয়াতে গোটা বলিউডই তাঁর পায়ের কাছে বসে থাকবে। গুলাম হায়দারের ভবিষদ্বাণীকে সত্যি প্রমাণ করে দিয়ে সেই মেয়েটিই একদিন হয়ে উঠেছিল শুধু বলিউডই নয়, গোটা ভারতের সংগীত অঙ্গনের অপ্রতিদ্বন্দ্বী সুর সম্রাজ্ঞী এবং এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সেরা গায়িকাদের মধ্যে অন্যতম একজন।

তিনি আর কেউ নন। তিনি সদ্য প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকর। নিজের সুললিত কণ্ঠের জাদুতে দীর্ঘ সাত দশক ধরে বুঁদ করে রেখেছিলেন যিনি সংগীতপ্রেমীদের। বরেণ্য ও কিংবদন্তি এই কণ্ঠশিল্পী ১৯২৯ সালে ভারতের ইন্দোর রাজ্যের রাজধানী ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় লতা মঙ্গেশকরের নাম ছিল হেমা। 

১৯৪২ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই এই মারাঠি তরুণীই শশধর মুখোপাধ্যায়ের শহীদ সিনেমা থেকে বাদ পড়ার পর লতাকে নিয়ে ভবিষদ্বাণী করা সংগীত পরিচালকের হাত ধরেই পুনরায় বলিউডে আগমন ঘটেছিল লতার। তারই ফলস্বরূপ ১৯৪৮ সালে মজবুর সিনেমায় লতা ‘দিলে মেরা তোড়া মুঝে কাহিন কা না ছোড়া’ নামক একটি গানে কণ্ঠ দেন। এই গানের মাধ্যমে গুলাম হায়দারের হাত ধরে লতার এবারের বলিউড যাত্রাটি ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের জন্য বড়সড় এক ব্রেক, যার পরের গল্পটি ছিল ধীরে ধীরে বলিউডে স্থান করে নেওয়ার গল্প। যে গল্পে ধীরে ধীরে লতাকে দেখা যায় একজন নবাগতা সম্ভাবনাময়ী কণ্ঠশিল্পী থেকে বলিউডের সর্বপূজনীয় কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী হয়ে উঠতে। আর এই পূজনীয়ভাবেই কেটে যায় তার দীর্ঘ সাত দশকের সংগীত ক্যারিয়ার।

দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে লতা মঙ্গেশকর কাজ করেছেন অনীল বিশ্বাস, এসডি বর্মণ, আরডি বর্মণ, সলীল চৌধুরীসহ প্রখ্যাত সব সংগীতজ্ঞদের সঙ্গে। এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তাঁর রয়েছে হাম কো হামিসে চুরালো, দিলতো পাগল হ্যায়, লাগ কা গালে সে, আজ পিয়া তোহে পিয়ার দু, আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন, প্রেম একবার এসেছিল নীরবেসহ অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান। একে একে ৪০টি ভাষায় প্রায় দশ হাজারেরও অধিক গান গেয়ে সংগীতের সরস্বতী বনে যাওয়া এই গায়িকার অর্জনের ঝুলিও কম ভারী নয়।

গান গেয়ে একে একে তিনবার ভারত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, দাদা সাহেব ফালকো পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননাসহ অসংখ্য পুরস্কার জিতেছেন এই নারী। এ ছাড়া সংগীতে অবদান রাখায় ভারত সরকার তাঁকে ভারতরত্ন ও পদ্মশ্রী পুরস্কারেও ভূষিত করেছে। 

কিন্তু দীর্ঘ বর্ণাঢ্য সংগীত ক্যারিয়ারের অধিকারী এই নারীকেও শেষমেশ ছেড়ে কথা বলল না প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। জানুয়ারির শুরুতেই তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত ৯ জানুয়ারি মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। করোনা কাটিয়েও উঠেছিলেন তিনি; কিন্তু তবুও হলো না শেষ রক্ষা। লতা মঙ্গেশকর করোনাকে হারিয়ে দিলেও ৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুর কাছে হেরে গিয়ে পাড়ি জমালেন পরপারে। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫