যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার মেশিন উপহার দিয়েছিলেন। এছাড়া দায়িত্ব ছাড়ার পরে পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগও ছিল তার। এমনটাই দাবি করেছেন ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির আলোচিত প্রতিবেদক বব উডওয়ার্ড। আজ বুধবার (৯ অক্টোবর) বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

বব উউওয়ার্ড তার নতুন প্রকাশিতব্য বই ‘ওয়ার’এ দাবি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো বইটির এই চুম্বক অংশ প্রকাশ করেছে। তিনি এতে বলেছেন, রাশিয়ায় কোভিড-১৯ পরীক্ষার মেশিন কম পড়েছিল। তখন পুতিনের পাশে ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসেন ট্রাম্প। তিনি পুতিনকে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য করোনা পরীক্ষার মেশিন পাঠিয়েছিলেন। তবে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণা দল। 

প্রখ্যাত এই সাংবাদিক তার বইয়ে আরও বলেছেন, ক্ষমতা ছাড়ার পরও ডোনাল্ড ট্রাম্প পুতিনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তবে ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণা দল এই দাবিকে ‘বানোয়াট গালগল্প’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। 

বইটিতে দাবি করা হয়, পুতিন সে সময় খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন যে, তিনি যেকোনো সময় কোভিডে আক্রান্ত হতে পারেন। 

বইটিতে আরও দাবি করা হয়, পুতিন ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছিলেন যেন এই উপহারের বিষয়টি প্রকাশ না পায়। কারণ, এতে ট্রাম্পের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছিলেন, ‘আমি চাই না আপনি বিষয়টি আর কাউকে বলুন। কারণ, এতে লোকজন আপনার ওপর ক্ষুব্ধ হবে, আমার ওপর নয়।’ জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘ঠিক আছে। তবে আমি পরোয়া করি না।’ 

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, বইটিতে এমন এক দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে ট্রাম্প তার এক সহযোগীকে নিজ বাসভবন মার-এ-লাগোর ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে বাইরে যেতে বলেন। পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার জন্য তিনি এমনটা করেছিলেন।  

নাম প্রকাশ না করা ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২১ সালের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছেড়ে আসার পর এখন পর্যন্ত অন্তত ছয়বার আলাপ করেছেন পুতিনের সঙ্গে। তবে তারা কী আলোচনা করেছেন, সেসব বিষয়বস্তুর ব্যাপারে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। তবে বব উউওয়ার্ড নিজেই বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের সহকারীর দাবিকে যাচাই করতে পারেননি। 

যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি উন্মোচনের মূল নায়ক বব উডওয়ার্ড। তার প্রতিবেদনের জের ধরেই রিচার্ড নিক্সনকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে যেতে হয়। এখন পর্যন্ত তিনি বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন, যেগুলো বেস্টসেলার হয়েছ। তার অধিকাংশ বইই বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে লেখা। 

ট্রাম্প নির্বাচনি প্রচারণা দলের মুখপাত্র স্টিভেন চেউং বিবিসিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে এই আবর্জনা বইয়ের জন্য একেবারেই কোনো সুযোগ দেননি (কথা বলার)। এটি হয় ডিসকাউন্টে চলা কোনো বইয়ের দোকানের কল্পকাহিনী বিভাগের দর-কষাকষিতে অথবা টয়লেট টিস্যু হিসেবে ব্যবহৃত হয়।’ 

উডওয়ার্ডকে ‘বিকৃতমস্তিষ্ক’ ও ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’ আখ্যা দিয়ে চেউং আরও বলেছেন, উডওয়ার্ড একজন রাগান্বিত ছোট বাচ্চার মতো এবং স্পষ্টতই মানুষের বিরক্তির কারণ। কারণ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার আগে করা রেকর্ডিংগুলোর অননুমোদিত প্রকাশের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করছিলেন। 

২০২১ সালে ট্রাম্প সাংবাদিক উডওয়ার্ডের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে ট্রাম্প এই অভিযোগ এনেছিলেন যে, উডওয়ার্ড অনুমতি ছাড়াই সাবেক প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকারের রেকর্ডিং প্রকাশ করেছিলেন। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন উডওয়ার্ড।