যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:২৭
ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়েছিল ট্রাম্পের কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ সমর্থক। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়েছিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ সমর্থক। কাঁদানে গ্যাস ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করেও তাদের ছত্রভঙ্গ করতে না পেরে বাধ্য হয়ে ক্যাপিটল ভবন অবরুদ্ধ করে রেখেছিল পুলিশ।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। গত নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের জয়কে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার (৬ জানুয়ারি) ভবনটিতে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলার সময় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলাকারীরা ভবনের জানালা ভাঙচুর করে। আর সেইসাথে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ উগ্র জনতাকে হটাতে পুরো ভবন অবরুদ্ধ করে ফেলে। এসময় গুলিতে একজন নিহত হন।
সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসির মেট্রোপলিটান পুলিশ জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন ধরণের অন্তত পাঁচটি বন্দুক জব্দ করেছে।
বাইডেন এ ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্যাপিটল ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বটে, তবে সেই সাথে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ অব্যাহত রেখেছেন। খোদ রিপাবলিকান পার্টির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, আজকের এই অস্থির জনতা ছাড়াও মার্কিন কংগ্রেস এর চেয়ে অনেক বড় হুমকি মোকাবেলা করেছে। তারা আমাদের গণতন্ত্রকে বিঘ্নিত করতে চেয়েছিল, তারা পারেনি, তারা পরাজিত হয়েছে।
এদিকে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। তারা এ ঘটনায় বিস্মিত ও স্তব্ধ হওয়ার প্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ ঘটনাকে লজ্জাজনক দৃশ্য বলে উল্লেখ করেছেন। সেই সাথে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এ ঘটনার পর যৌথ অধিবেশন স্থগিত হয়ে যায়। তবে রাতে আবার তা শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর আগে জর্জিয়ার দুটি সিনেটের আসন জিতে যায় ডেমোক্র্যাটরা। এর ফলে সিনেট ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে চলে এল। ডেমোক্রেটিক পার্টির দুই প্রার্থী রাফায়েল ওয়ারনক ও জন ওসফ সিনেটে নির্বাচিত হয়েছেন।
বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য অধিবেশনে বসেছিলেন, ট্রাম্পের শত শত সমর্থক তখন আইনসভা কংগ্রেসের ভবন ক্যাপিটলে ঢুকে পড়ে। কয়েক ঘণ্টা ভবন কার্যত দখল করে রাখার পর বিক্ষোভকারীরা ধীরে ধীরে ক্যাপিটল প্রাঙ্গণ ছেড়ে বাইরে চলে যেতে থাকে।
রাজধানী ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১২ ঘণ্টার কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু সান্ধ্য আইন শুরু হবার পরও শত শত বিক্ষোভকারীকে রাজপথে জটলা পাকাতে দেখা গেছে।
বুধবার কংগ্রেস অধিবেশনের বিরোধিতা করে ওয়াশিংটনে জড়ো হন কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক, যাদের মধ্যে উগ্রপন্থি বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যরাও রয়েছেন। সেই সমাবেশে বক্তব্যে নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এই সমাবেশের অল্প একটু দূরে গিয়ে কয়েকশ ট্রাম্প সমর্থক ক্যাপিটল ভবনে নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ান। এক পর্যায়ে কংগ্রেসের অধিবেশন চলার মধ্যেই পুলিশের বাধা ভেঙে ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়েন তারা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাস ও পেপার স্প্রে ব্যবহার করে পুলিশ।
হাউস অফ রেপ্রেসেন্টেটিভের সভাকক্ষের প্রবেশদ্বারে অস্ত্র তাক করার দৃশ্য দেখা গেছে। কাঁদানে গ্যাসও ব্যবহার করা হয়েছে। ভবনের ভেতরে বিক্ষোভকারীদের ‘আমরা ট্রাম্পকে ভালোবাসি’ শ্লোগান দিতে দিতে মিছিল করতে দেখা গেছে। একজন ট্রাম্প সমর্থকের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে সে সিনেটের সভাপতির আসনে বসে আছে।
ট্রাম্প তার ভিডিওতে তার সমর্থকদের বাড়ি ফেরার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি আবারো দাবি করেন, বাইডেনের ডেমোক্র্যাট দল নির্বাচন চুরি করেছে যদিও তিনি কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।

তিনি বলেন, আমি তোমাদের বেদনা বুঝি, আমি জানি তোমরা কষ্ট পেয়েছ। তোমাদের এখন বাড়ি ফিরতে হবে, আমাদের শান্তি দরকার, আমরা চাই না কেউ আহত হোক।
বাইডেন বলেন, এই বিক্ষোভ একটি বিদ্রোহের সমতুল্য ও এখনই তার অবসান হওয়া উচিত। এই সময় আমাদের গণতন্ত্র এক নজিরবিহীন আক্রমণের মুখে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গুলিতে এক নারী লুটিয়ে পড়েন। তার কাঁধে গুলি লেগেছিল। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তার মৃত্যু হয়। আরো বেশ কিছু মানুষ আহত হয়েছেন বলে বিক্ষোভকারীরা দাবি করেছেন। তবে কতজনের শরীরে গুলির আঘাত রয়েছে, এখনো তা স্পষ্ট নয়।
ওয়াশিংটনের পুলিশ বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন, আহত কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। -বিবিসি ও রয়টার্স