অযোগ্যরা পাচ্ছে সুবিধা
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করুন

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৩, ১০:৫৬

সম্পাদকীয়। ফাইল ছবি
বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ সন্দেহ নেই। দেশের সব নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা ও গুণগত শিক্ষার পাশাপাশি বয়স্ক ও অবসরপ্রাপ্ত নাগরিক, শিশু, নারীসহ সমাজের সব পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধা নিশ্চিত করতে এই কর্মসূচির গুরুত্ব অনেক। কিন্তু এ কার্যক্রমটিতে শুরু থেকেই নানা অনিয়ম ও স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগ রয়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক সমীক্ষার প্রাথমিক ফল থেকে জানা গেছে, যাদের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধা পাওয়ার কথা তাদের অনেকেই সেটা পাচ্ছেন না। অথচ যাদের উপকারভোগী হওয়ার কথা নয় তাদের অনেকেই সরকারের দেওয়া বিভিন্ন ভাতা পাচ্ছেন। এ কারণে শুধু বিধবা ও বয়স্ক ভাতা খাতে বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে।
জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএসএস) মধ্যবর্তী উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়, যোগ্য না হয়েও ভাতা নিচ্ছেন ৪৬ শতাংশ। আর বয়স্ক ভাতায় শর্ত পূরণ করেননি ৫৯ শতাংশ। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতায় অনিয়ম ধরা পড়েছে ২৩ শতাংশ। ভিজিডির ক্ষেত্রে ভূমিহীন বা সামান্য ভূমির অধিকারী হওয়ার শর্ত পূরণ করে না ৪৭ শতাংশ, ভিজিএফের ক্ষেত্রে ৫৪ শতাংশ।
এসব তালিকা তৈরি করে থাকেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তথা ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। তারা ভোট, ভোটারের চিন্তা, আত্মীয়তার সম্পর্ক ইত্যাদি মাথায় রেখে তালিকা তৈরি করেন। এমনকি সুবিধাপ্রাপ্তদের কাছে থেকে তাদের ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। জানা গেছে বয়স্ক ভাতার কার্ড পেতে গড়ে ২৬৫৩ টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে উপকারভোগীদের।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির লক্ষ্য ছিল ২৬ লাখ পরিবারের ১ কোটি ৭ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচ থেকে ওপরে তুলে আনা। কিন্তু দরিদ্র নয় এমন লোক যদি ভাতা পায় তাহলে টেকসইভাবে দারিদ্র্য কমানোর কাজ কঠিন হয়ে পড়বে। অযোগ্যদের বাদ দেওয়া হলে যোগ্যদের অন্তত ৪৫ শতাংশকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা যেত বলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জরিপভিত্তিক গবেষণায় জানা গেছে।
কাজেই এ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। সব ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অভিযোগ রয়েছে, উপকারভোগীদের তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়াটিই স্বচ্ছ নয়। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। এইসব অনিয়ম দূর করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনপ্রতিনিধি ও দলীয় লোকজনের পরিবর্তে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে ভাতাভোগীর তালিকা করা হলে অনিয়ম-দুর্নীতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব হতে পারে। বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। এছাড়া ময়মনসিংহের কয়েকটি এলাকায় অনলাইনে সরকারি সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে সুফল পাওয়া গেছে। সারা দেশেই অনলাইন চালু করতে পারলে এ খাতে চুরি-দুর্নীতি অনেকাংশে কমবে। এছাড়া যাদের কারণে কর্মসূচি সফল হচ্ছে না, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন।