Logo
×

Follow Us

মুক্তবচন

বাল্যবিবাহের উচ্চহার, রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৩, ১২:০৯

বাল্যবিবাহের উচ্চহার, রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে

প্রতীকী ছবি

জনস্বাস্থ্য ও মাতৃস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বেশ কিছু উন্নতি লক্ষ করা গেলেও বাল্যবিবাহের হার এখনো অনেক বেশি। ‘৮০০ কোটি জীবন, অপরিসীম সম্ভাবনা’ শিরোনামে ‘বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি-২০২৩’ বৈশ্বিকভাবে প্রকাশিত হয় গত ১৯ এপ্রিল। 

এতে দেখা যায়, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাল্যবিবাহের হারে বাংলাদেশ এখনো শীর্ষে। প্রতিবেদনে বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে ২০০৬ থেকে ২০২২ সালের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়সের আগেই ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে।

বাল্যবিবাহের অনেক নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যে অন্যতম, এতে কম বয়সে গর্ভধারণ এবং মা ও নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৭৪টি শিশুর জন্ম দিচ্ছেন ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মায়েরা। গত ১৮ এপ্রিল প্রকাশিত বিবিএসের বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২১ প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে এক লাখ শিশু জন্ম দিতে গিয়ে মারা যাচ্ছেন ১৬৮ জন মা। 

২০১৮ সালের এক কর্মপরিকল্পনায় বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ে কমিয়ে আনার একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল। তাতে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের বাল্যবিবাহ এক-তৃতীয়াংশ কমানোর লক্ষ্য ছিল। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এর বিপরীত অবস্থাই দেখা যাচ্ছে। গত এপ্রিল মাসে প্রকাশিত বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস) ২০২২-এর প্রাথমিক ফল অনুসারে, বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার ৫০ শতাংশের বেশি। 

২০১৭ সালে সরকার বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পাস করে। তাতে বেশ কিছু ধারায় কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়। কিন্তু আইনটির একটি বিশেষ ধারায় বাল্যবিয়েকে বৈধতা দেওয়া হয়। এই ধারায় বলা হয়, বিধি দ্বারা নির্ধারিত কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ এবং পিতা-মাতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে, বিবাহ সম্পাদিত হলে এই আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। বাল্যবিয়ের প্রতিরোধে কাজ করছেন এমন ব্যক্তিরা বলেছেন আইনের এই বিশেষ ধারার অপপ্রয়োগ হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই, যা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের অনেক উদ্যোগকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে। তাছাড়া করোনা মহামারির সময় দেশে বাল্যবিবাহের হার বেড়ে যায়। ওই দুই বছর এই বয়সী প্রায় ২৭ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরেই বাল্যবিবাহ পরিস্থিতি উন্নয়নে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। এর পেছনে রয়েছে দরিদ্রতার পাশাপাশি সামাজিক কিছু আচার-আচরণ। এ পরিস্থিতি রোধে মেয়েদের উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে উপবৃত্তি দিতে হবে। সামাজিক মনোভাবে পরিবর্তন আনতে হবে। মেয়েরা যাতে স্কুলে যেতে পারে তা নিশ্চিত করতে এবং তারা যাতে পরিপূর্ণভাবে নিজের মাঝে থাকা সম্ভাবনা অনুযায়ী বেড়ে উঠতে পারে সে সুযোগ দিতে হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের মধ্যে সমন্বয় করে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে উদ্যোগ বাড়াতে হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫