
সম্পাদকীয়। ফাইল ছবি
এবারের বাজেটে বলা হয়েছে, ৫০ ধরনের সেবা নিতে গেলে একজন টিআইএনধারীকে দুই হাজার টাকা ন্যূনতম আয়কর দিয়ে রিটার্ন দাখিল করে তার প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে তার যদি আয়কর দেওয়ার মতো আয় নাও থাকে, তারপরও তাকে দুই হাজার টাকা আয়কর পরিশোধ করতে হবে।
একে রাজস্ব আদায় বাড়াতে সরকারের একটি মরিয়া প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে এটি কতটা যৌক্তিক এবং নৈতিক। দেশের প্রায় ৮৮ লাখ মানুষের কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন রয়েছে। এদের মধ্যে ৩০ লাখের কিছু বেশি মানুষ তাদের রিটার্ন জমা দেন। এদের অনেকেই শূন্যকর দেখিয়ে রিটার্ন জমা দেন, অর্থাৎ আয়কর দেওয়ার মতো আয় তাদের নেই। নতুন এই নিয়মে এরা তো বটেই, এদের সঙ্গে ঝামেলায় পড়বেন তারা, যারা ৫০টি সেবার কোনো একটি নিতে যাবেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধিতে এ মুহূর্তে নানা সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এদের ওপর ন্যূনতম করের বোঝা চাপে থাকা মানুষের ওপর চাপ আরও বাড়াবে। অন্যদিকে সরকার কিন্তু বিশেষ সুবিধা দিয়েছে ধনীদের। এবারের বাজেটে তাদের সম্পদের ওপর সারচার্জের ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এত দিন তিন কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে সারচার্জ দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। আগামী বছরের জন্য এটা চার কোটি টাকা করা হয়েছে।
বলাবাহুল্য পৃথিবীতে যেসব দেশে করজিডিপি অনুপাত একেবারে নিচের দিকে, বাংলাদেশ তার একটি। মানুষের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে তাই রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির কোনো বিকল্প হয়তো নেই। তার ওপর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির ফলে সরকারকে আগামী অর্থবছরে বড় পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে হবে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপে পিষ্ট মানুষের কাঁধেই কেন অযৌক্তিক এই বোঝা চাপানো হচ্ছে? কর আদায়ের আরও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। সেই সঙ্গে করফাঁকি ও অর্থপাচার তো চলছেই। এই সব বন্ধের দিকে নজর না দিয়ে নাগরিক অধিকার বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া অযৌক্তিক।
সরকার একদিকে মানুষকে ‘স্বস্তি দিতে’ যখন করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়েছে, তখন উল্টোদিকে আবার কর দেওয়ার ক্ষমতা নেই, এমন মানুষকে কর দিতে বাধ্য করছে। করমুক্ত আয়ের একটি সীমা নির্ধারণ করে সরকারই স্বীকার করে নিয়েছে যে কিছু মানুষ আয়কর দেওয়ার মতো অর্থ আয় করে না। আয়কর অধ্যাদেশের মাধ্যমেই সেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
কাজেই আমরা আশা করব, এ নিয়ম তুলে দেওয়া হবে। যিনি কর দেওয়ার উপযুক্ত, যার সামর্থ্য ও আয় আছে তিনিই কর দেবেন। কিন্তু যার নেই তার কাঁধে করের বোঝা চাপানো বৈষম্যমূলক। এটা বরং অর্থনৈতিক চাপ বাড়াবে এবং মূল যে উদ্দেশ্য সেটিকে ব্যাহত করবে।