Logo
×

Follow Us

মুক্তবচন

দেশকে উন্নয়নের পথে নিতে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করুন

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৩, ১৩:৩৬

দেশকে উন্নয়নের পথে নিতে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করুন

সম্পাদকীয়। ফাইল ছবি

বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের বৈশ্বিক কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত বেলজিয়ামের ব্রাসেলসভিত্তিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন (আইটিইউসি)। সংস্থাটি বিশ্বের ১৪৯টি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সূচক প্রকাশ করেছে। যেখানে সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষদের জন্য সবচেয়ে খারাপ ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা বাকি নয়টি দেশ হলো-বেলারুশ, ইকুয়েডর, মিশর, এসওয়াতিনি, গুয়াতেমালা, মিয়ানমার, তিউনিসিয়া, ফিলিপাইন ও তুরস্ক।

সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ‘অধিকারের নিশ্চয়তা নেই’ শ্রেণিতে পড়েছে। যেখানে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো পশ্চাৎমুখী আইন, ইউনিয়ন গঠনে বাধা ও পুলিশি সহিংসতা। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মারাত্মকভাবে শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত আটটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠন নিষেধ রয়েছে। ইপিজেডে শ্রমিকদের স্বাধীনভাবে অধিকার-সম্পর্কিত মতামত প্রকাশও নিষেধ।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, প্রতি ১০টি দেশের ৯টিতেই আইনসঙ্গত ধর্মঘটে যাওয়ায় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ৭৭ ভাগ দেশ ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা ও তাতে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের বঞ্চিত করে চলেছে। ৪২ ভাগ দেশে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া, মত প্রকাশের স্বাধীনতা কঠোরভাবে সংকুচিত করে রাখা হয়েছে। ফ্রান্সের মতো দেশে পুলিশ দিয়ে বেধড়ক পিটুনির মাধ্যমে শ্রমিকের প্রতিবাদ দমন করা হয়। বাংলাদেশ, লেবানন ও ফিলিপাইনসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের ৪৪টি দেশে শ্রমিকেরা অধিকার রক্ষার জন্য সোচ্চার হয়ে সহিংস আক্রমণের শিকার হয়েছেন। আটটি দেশে ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী খুন হয়েছেন। ৪২ ভাগ দেশে শ্রমিকেরা গ্রেপ্তার ও বন্দি হয়েছেন। ৬৫ ভাগ দেশে শ্রমিকেরা ন্যায়বিচারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প খাত তৈরি পোশাক কারখানায় ৪৫ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। কিন্তু তাদের যে মজুরি দেওয়া হয় তা একজন শ্রমিকের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। এমনকি সেখানে নিয়মিত মজুরিও দেওয়া হয় না; যা নিয়ে মাঝেমধ্যেই অসন্তোষ দেখা যায়। এমনকি ঈদের মধ্যেও এ নিয়ে শ্রমিকদের ব্যাপক অসন্তোষ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। যদিও রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ কিছুটা উন্নত হয়েছে, কিন্তু এখনো দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের বেতন কম।

একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের বিকল্প নেই। বাংলাদেশে ২০০৬ সালে যে শ্রম আইন প্রণীত হয়েছে, তা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়। তারপরও সরকার ও মালিকপক্ষ এই আইনকে উপেক্ষা করে শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করছে। অনেকেরই মতে, কম মজুরিতে এবং ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েই কাজ চলছে বাংলাদেশে। 

আমরা যদি প্রকৃতই দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে চাই, তাহলে শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নতি করতে হবে। তাদের উপযুক্ত মজুরি, কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিলে তবেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫