Logo
×

Follow Us

মুক্তবচন

বৈশ্বিক সংকট উত্তরণে জি ২০ সম্মেলনে বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা ও ভারতের চ্যালেঞ্জ

Icon

জাফর খান

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৩, ১৮:৪৪

বৈশ্বিক সংকট উত্তরণে জি ২০ সম্মেলনে বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা ও ভারতের চ্যালেঞ্জ

জি ২০ সম্মেলনের এবারের লোগো ও স্লোগান। ছবি: সংগৃহীত

জি ২০ সম্মেলন কি 

১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটির মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল- শিল্পোন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনেতিক ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে আর্থিক খাত, কর কাঠামো, আন্তর্জাতিক আর্থিক খাতের সংস্কার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। এ ছাড়াও এই সংন্থা অনানুষ্ঠানিকভাবে আর্থিক সংকটকে বিবেচনায় রেখে ব্রিটেন উড পদ্ধতির রূপান্তর সাধন করে থাকে। এই জি-২০ গ্রুপের সভা বছরে একবার হয়ে থাকে  এবং এই সকল সভার আলোচনার এজেন্ডা থাকে সাধারনত প্রবৃদ্ধির নীতিমালা, আর্থিক পদ্ধতির দুর্বলতা নিরীক্ষণ ও অবৈধ আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়।

এই সংন্থাটির অন্যান্য  সংস্থার মতো কোনো সচিবালয় কিংবা স্টাফ নেই। বরং এর পরিবর্তে একজন চেয়ারম্যানের তত্বাবধানে বাৎসরিকভাবে ২০টি সদস্য দেশের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ঘূর্ণীয়মান অবস্থায় বিচরণ করে থাকেন তিনি। এই জোটের নেতৃবৃন্দ যাকে বলা হয় ট্রইকা চেয়র যেমন- বর্তমান-আগে-পরে যাদের কাজ হলো বাৎসরিক সভার এজেন্ডা নির্ধারণ, বক্তা নিরূপণ, ও অন্যান্য পরিষেবার সুপারিশকরণ। এ ছাড়াও বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ার সংস্থার সচিবালয় তথা সভাগঠনের সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করে থাকে যেমন ২০০৯ সালে জি-২০ গ্রুপের চেয়ার করেছিল যুক্তরাষ্ট্রকে ২০০৫ সালে চীন।

 ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট এবং ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্ব করেন। জি২০ দেশসমূহের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধানগণও গ্রুপের সম্মেলনে তাদের নিজ নিজ দেশের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন। সমষ্টিগতভাবে জি২০ এর অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহ পৃথিবীর মোট জাতীয় উৎপাদনের ৮৫%, বিশ্ব বাণিজ্যের ৮০% এবং বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা গঠন করে।[

কানাডার সাবেক অর্থমন্ত্রী পল মার্টিন প্রথম জি২০ গঠনের প্রস্তাব করেন। ২০০৯ এর ২৫ সেপ্টেম্বরে জি২০ এর নেতারা ঘোষণা দেন যে, জি৮ কে জি২০ অদূর ভবিষ্যতে প্রতিস্থাপন করবে। ২০১১ সাল থেকে জি২০ এর বার্ষিক সম্মেলন নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

২০২৩ সম্মেলন ও প্রত্যাশা 

এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ স্লোগানে উদ্দীপ্ত হয়ে চলতি বছরের ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২০ দেশের অর্থনৈতিক জোট বলে খ্যাত জি-২০ এর বার্ষিক সম্মেলন। আর এবারের এই আয়োজনে অতিথি হিসেবে অংশ নিবে বাংলাদেশসহ ৮টি দেশ। এর আগে ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর জি-২০ সম্মেলন ২০২৩-এর ওয়েবসাইট, লোগো এবং স্লোগানের উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর লোগোটির নকশায় ভারতের জাতীয় ফুল পদ্ম ব্যবহৃত হয়েছে। সাত পাপড়ির এ পদ্মে সাত মহাদেশ এবং সঙ্গীতের সাত স্বরকে বুঝানো হয়েছে। আর স্লোগান হিসেবে নেয়া হয়েছে- ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর ৪ দিনের সফরে ভারত যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সফরে জি-২০ এর ২০২৩ শীর্ষ সম্মেলনে অতিথি হিসাবে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণের বিষয়েও সেসময় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়। 

চলতি বছরের এই জি২০ সম্মেলন বিশ্ব জনতার ভাগ্য বদলে আসলে কতটা কাজ করবে বা ফলপ্রসূ হয়ে আমাদেরকে পরিচালিত করতে সক্ষম সেটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ অবশ্য বলছেন তাবত সব গবেষক ও কূটনীতিক বিশ্লেষকরা। টেবিল আলোচনায় নিছক একটি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের ঘরোয়া সভা হিসেবেই এটির অস্তিত্ব থাকবে নাকি চলমান অস্থির প্রেক্ষাপটে কোনো সুনির্দিষ্ট ইতিবাচক ইঙ্গিত ও সুফলতা আনবে বিশ্ববাসীর জন্য সেটি এখন দেখার বিষয়।

বর্তমান বিশ্ব জর্জরিত হয়ে আছে নানা সমস্যায়। একদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্বের উষ্ণতা, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, যুক্তরাষ্ট্রের মত বৃহৎ অর্থনিতির দেশে সম্প্রতি বড় সব ব্যাংকের দেউলিয়া হবার মত বিষয়গুলো বিশ্ব অর্থনীতিকে কিন্ত যথেষ্ট ভাববার মত অনেকগুলো নিয়ামক এনে দিয়েছে। এছাড়াও, বিশ্বজুড়ে চলমান মূদ্রাস্ফীতি, ওপেক প্লাস ভুক্ত সৌদি ও রাশিয়ার কম তেল উত্তোলনের সিদ্ধান্ত, একচ্ছত্র ডলারের আদিপত্য থেকে বেরিয়ে আসার সংগ্রাম, ব্রিকসের মত ব্যতিক্রমি জোটের উত্থান, নিজস্ব মুদ্রায় আমদানি-রপ্তানির পরিকল্পনা, চীনের আরও মজবুত অবস্থান অর্থনীতির ক্ষেত্রে, শি জিনপিংইয়ের রিজার্ভ ছয় ট্রিলিয়ন থাকার পরেও তিন ট্রিলিয়নের প্রকাশ্য ঘোষণা, পশ্চিমা বিশ্বে খাদ্যপণ ক্রয়ে কোটা প্রথাসহ অভ্যন্তরীন কোন্দল, কৃষ্ণসাগর শস্য রপ্তানি চুক্তি নবায়নে রাশিয়ার অমত পোষণ, আফ্রিকাসহ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ক্রমাগত খাদ্যপণ্যের অস্থির মূল্য, নব্য পুঁজিবাদের উত্থান, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল, সিরিয়া সংকট ছাড়াও  মধ্যপ্রাচ্যের নানা অস্থিরতা, ভারত-পাকিস্তান কাশ্মীরের অমীমাংসিত দ্বন্দ্ব, চীন-তাইওয়ান উত্তেজনাসহ ইত্যাদি হাজারো সমস্যার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে আমাদের এই পৃথিবী। 

আর এমন সংকটকালের সময় কতটাই বা ছাড় দিতে প্রস্তত বিশ্ব নেতারা একে অপরের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীল ও সহমর্মিতার মনোভাব নিয়ে- সেটার একটি বাস্তব প্লট হয়ত প্রতিফলিত হবে এবারের আসন্ন সম্মেলনে।    

এর আগে গতবছর লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমাদের জি২০ সভাপতিত্বের লোগো, থিম এবং ওয়েবসাইট বিশ্বের কাছে ভারতের বার্তা এবং সর্বাধিক অগ্রাধিকারকে প্রতিফলিত করবে। জি-২০ সম্মেলন গোটা বিশ্বকে একত্রিত করবে। 

বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির ২০টি দেশের জোট জি-২০ অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা সংস্থা। যারা বৈশ্বিক জিডিপির ৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। 

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ বাস করে এ জোটভুক্ত দেশগুলিতে। জি-২০ জোটের সদস্য দেশগুলো হচ্ছে, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।

এছাড়াও অন্য দেশগুলোর মধ্যে অতিথি হিসেবে অংশ নেবে মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত ও বাংলাদেশ।

জি-২০ জোটকে নিয়ে গবেষণা করে থাকেন এমন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জন ক্রিটন অন্যতম। তার মতে, এই জোটের সদস্যভুক্তির বিষয় নিয়েও রয়েছে জটিলতা ও অনেক সমালোচনা ।

একটু যদি আমরা পূর্বের ইতিহাসে ফিরে যাই তবে ক্রিটনের বক্তব্য অনেকটা এরকম,  ১৯৯৯ সালে জোট শুরুর প্রারম্ভে আমেরিকার ও কানাডার অর্থমন্ত্রী যথাক্রমে লরেন্স সামার্স ও পাউল মার্টিন যৌথভাবে এই ধনী সদস্য জোটের মনোনয়ন করেছিলেন। পরিবর্তিত বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন করে সদস্য অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে অনেক সদস্যের আপত্তি আছে। এর কয়েক বছর আগে ওয়াশিংটনে সদস্যভুক্তি নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনায় সাবেক ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী  যিনি শান্ত মেজাজের একজন মানুষ হিসেবে পরিচিত ভারতীয় অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং আলোচনার টেবিলে স্পেনের প্রতিনিধিকে ইঙ্গিত করে সেসময় বলেছিলেন,এই আলোচনা বৈঠকে তাদের আসলেই  কী করণীয় আছে! 

এদিকে জার্মানির সাবেক অর্থসচিব কায়ো কখ ভেসার, যিনি জোট শুরুর প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি একবার বলেছিলেন, যারা এই জোটের সদস্য তারা নিজেদের ধন্য মনে করেন আর অন্যরা এই জোটকে ঘৃণা করেন। কারন বিশ্ব ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে। 

যুক্তরাষ্ট্র এখন আর বিশ্ব নেতৃত্বে একক শক্তি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের একক আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে চীন দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে বিশ্ব আসরে তার অবস্থানের জানান এরইমধ্যে দিয়ে রেখেছে। অন্যদিকে রাশিয়াও  সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সেই হারানো গৌরবদীপ্ত অবস্থানে ফিরতে চায়। এমন পরিস্থিতিতে চীন-রাশিয়ার ঐক্য চোখে পড়ার মত। এ ঐক্য যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্বের দিকে ছুঁড়েছে চ্যালেঞ্জ।  পক্ষান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চীনের প্রয়োজন কিন্ত ফুরিয়ে যায়নি। 

উত্তর কোরিয়ায় পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে ব্যবহার করেছিল। সিঙ্গাপুরে ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তার নেপথ্যেও চীনের সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল।

বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বের বাইরেও দক্ষিণ চীন সাগর তথা এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে কর্তৃত্বের প্রশ্নে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে বিরোধ আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার নৌ কর্তৃত্ব বাড়িয়ে চীনকে ঘিরে ফেলার স্ট্র্যাটেজির বিষয়েওকথা হয়েছিল। ফলে একুশ শতকে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোন দিকে যায়, সেদিকে দৃষ্টি অনেকের।

বিশ্বের জিডিপির ৯০ শতাংশ এ দেশগুলোর হাতে এবং ৮০ শতাংশ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে জি-২০-এর দেশগুলো। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জি-২০ দেশগুলোর মোট জিডিপির পরিমাণ ৭৫ হাজার ৩৯৩ বিলিয়ন ডলার।

২০১৮ সালে এ ধরনের একটি অর্থনৈতিক জোট যখন একটি সম্মেলনে মিলিত হয়, তখন তার গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। ট্রাম্পের আমলে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ, আরব সাগরে রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেনের তিনটি যুদ্ধ জাহাজ জব্দ ও ট্রাম্প কর্তৃক পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকার বাতিল, ব্রিটেনের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত অগ্রগতির প্রেক্ষাপট শীর্ষ সম্মেলনের গুরুত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছিল।

ফলে সংগত কারণেই একটা প্রশ্ন ছিল, এ শীর্ষ সম্মেলন থেকে বিশ্ব কী পেল? এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পুরো বিশ্বটাকেই এক ধরনের পরিবর্তনের ইংগিত দিয়েছিলেন। অভ্যন্তরীণভাবে তিনি নানা সমস্যার সম্মুখীনও ছিলেন। আর আন্তর্জাতিকভাবেও তিনি একের পর এক বিতর্ক জন্ম দিয়েছিলেন। 

সেসময় চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ এনে বড় ধরনের বিতর্কের সৃষ্টির জন্ম ট্রাম্প দিয়েছিলেন। চীনের আরও প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হবে বলেও তিনি হুমকি দিয়েছিলেন।

সেসময় অবশ্য চীন কৃষি, জ্বালানি, শিল্পসহ বিভিন্ন পণ্যের একটি ‘উল্লেখযোগ্য’ পরিমাণ কিনতে রাজিও হয়েছিল। তবে এটা খোলাসা করা হয়নি যে, চীন কী পরিমাণ পণ্য কিনবে। ট্রাম্প সরকার অভিযোগ করে আসছিল, যুক্তরাষ্ট্র তার বাজারে চীনা পণ্যের প্রবেশ উন্মুক্ত করে দিলেও চীনের বাজারে মার্কিন পণ্য প্রবেশ করতে পারছে না। চীনের এ আচরণ ন্যায়সংগত নয়।

এর আগে মার্চে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কোনো ধরনের মতৈক্য ছাড়াই শেষ হয় জি-২০ জোটভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন। ভারতে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনটিতে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে চীন সরাসরি কোনো অবস্থান নিতে অস্বীকার করায় কোনো ধরনের মতৈক্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

কাতারভিত্তক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, বিনাশর্তে ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের সম্মিলিত বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে অমত ছিল রাশিয়া এবং চীনের। ফলে এ বিষয়ে কোনো ধরনের ঐকমেত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

আর এ বিষয়ে, জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের উদ্দেশে বলেন, ‘জনাব ল্যাভরভ, এই যুদ্ধ বন্ধ করুন। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা লঙ্ঘন বন্ধ করুন। ইউক্রেনের শহর এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বোমাবর্ষণ বন্ধ করুন।’  

ল্যাভরভ তার বক্তব্যে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো ভণ্ডামি করছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। কারণ, পশ্চিমারা বছরের পর বছর ধরে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে।সেসময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বলেছিলেন, একেক দেশ ভিন্ন মত পোষণ করায় ইউক্রেন নিয়ে জোটের দেশগুলোর মধ্যে যে মতানৈক্য ছিল, তা দূর করা যায়নি। তবে অন্যান্য অনেক বিষয়ে জি-২০ জোটের দেশগুলো সম্মত হয়েছে। 

সম্মেলেনে দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের উদ্দেশে এক ভিডিও ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বর্তমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ঋণ সংক্রান্ত চুক্তিগুলোকে বিপদে না ফেলার আহ্বান জানানা।

আসন্ন ১৮তম শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ড.আতিউর রহমান বলেন, করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন, আর ইউরোপে চলমান যুদ্ধের কারণে এবারের সম্মেলন স্বভাবতই বিশেষ আগ্রহ জাগাচ্ছে। তার ওপর এবার সম্মেলনের সভাপতিত্ব করছে প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং জি–২০-এর সদস্য না হলেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিশেষ আমন্ত্রণে এই সম্মেলনে অংশ নেওয়ায় এটি একটি অন্যতম মাত্রায় যাচ্ছে। 

তবে সেপ্টেম্বর নাগাদ বিশ্বের অনৈক্যের পরিস্থিতি খুব বড় রূপ নিবে কি না তা নিয়ে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। আর এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার এই ধরনের বৈশ্বিক সংকটকালে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নীতি-প্রস্তাবনা হাজির করার জন্যই কিন্তু জি–২০-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল।

এর আগে ২০০৮-০৯-এর বিশ্ব আর্থিক সংকট মোকাবিলায় জি-২০ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই এবারেও প্রাথমিক পর্যায়ে প্রত্যাশিত ফলাফল না পাওয়া নিয়ে হতাশ না হয়ে, নতুন নতুন কৌশল নিয়ে এগোনোর পরিকল্পনা করাই সঠিক বলে মত এই অর্থনীতিবিদের।

আমাদের আশা আকাংখার প্রতিফলনের জন্য হয়ত বিশ্ব নেতাদের ২০১৮ সালে কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং জি–২০-এর মূল প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম—পল মার্টিনের একটি বক্তব্য মনে করা উচিত। 

তিনি বলেছিলেন, ‘জি–২০-এর লক্ষ্য হলো সকলের জন্য বিশ্বায়নের সুফল নিশ্চিত করা। আর বিশ্বের রাষ্ট্রনায়ক আর মন্ত্রীদের যখন একটি বদ্ধ ঘরে একান্তে আলোচনার সুযোগ করে দেওয়া হয় তাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে অমিত ক্ষমতা তৈরি হয় সেই বিষয়ও আমাদের মনে রাখতে হবে।’

তবে এবারের জি–২০ সম্মেলনের সভাপতিত্বকারী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার পশ্চিমের দেশগুলোর পক্ষ হতে চাপ থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে বৈরিতার পথে হাঁটেনি। আবার একই সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকেও জানিয়ে দিয়েছেন যে, ‘এখন যুদ্ধের সময় নয়।’

একদিকে মহামারি আর যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অস্থিরতা থাকলেও অন্যদিকে সকলে মিলে সমস্যা মোকাবিলার এমন আহ্বানও দৃশ্যমান রয়েছে। তবে ভারতের নেওয়া কৌশল কিন্তু বেশ ঝুঁকিপূর্ণও বটে।

অন্যদিকে রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি সরবরাহের সুবিধা নিয়ে এমনিতেই ভারত পশ্চিমের কাছে খানিকটা প্রশ্নের মুখে রয়েছে। তাই খুবই সতর্কতা নিয়ে কূটনীতির চাল দিতে হবে দেশটিকে।

আমরা জানি, দুই দশকেরও আগে জি–২০-এর শুরুই হয়েছিল বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় ছোট-বড় অর্থনীতির একযোগে কাজ করার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে। 

ঐ সময় সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক খাত বিষয়ে বহুজাতিক মঞ্চ হিসেবে ছিল জি-৭, যেখানে প্রতিনিধিত্ব ছিল পশ্চিমের সাতটি উন্নত অর্থনীতির দেশের। 

তবে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর পাশাপাশি দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো থেকে প্রতিনিধিত্বশীল অর্থনীতির দেশগুলোকেও জি–২০-এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আন্তর্জাতিক ঋণের বিপরীতে সুদের হার কমানো, দরিদ্র দেশগুলোর জন্য আর্থিক সাহায্য নিশ্চিতসহ বেশকিছু উদ্যোগসহ নানামুখী সংস্কারের যে নীতি-প্রস্তাবনাগুলো জি–২০ থেকে উঠে এসেছিল তা অনুসরণ করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংকট সমাধানে সফলতা এসেছিল। আর সারা বিশ্বই কিন্ত এই অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক কূটনীতির সুফল পেয়েছিল।

২০০৮-এ বিদায়ি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সভাপতিত্বে আর তার পরের বছর লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর পর দুটি জি–২০ সম্মেলন বিশ্ব অর্থনীতি বড় বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল এটাও ভুলে গেলে চলবে না।

২০০৮-০৯ সালে জি–২০-এর কল্যাণেই সংরক্ষণবাদের সম্ভাব্য বিস্তার রোধ করা সম্ভব হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এই প্রসঙ্গে জি–২০-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি লরেন্স সামার্স ২০১৮ সালে বলেন, ‘আর্থিক খাতের নিয়ম-নীতির সংস্কার এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয় বিষয়ে ওই সময়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো না গেলে, ঐ আর্থিক খাতের সংকটের ভয়াবহতা বহুগুণে তীব্রতর হতে পারতো। সে সময় জি–২০ খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছিল।’

তবে একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের বৈশ্বিক বাস্তবতার নিরিখে ভারত ‘স্বাগত দেশ হিসেবে তার কূটনৈতিক প্রভাব কতটা খাটাতে সক্ষম হবে তার ওপর বহুলাংশে নির্ভর করবে এ সম্মেলনের সফলতা ও ব্যর্থতা।

মনে রাখতে হবে রাশিয়া ভারতের পুরোনো মিত্র এবং এ সংকটের মধ্যেও ভারতে জ্বালানি ও সার সরবরাহে তারা সহায়ক ভূমিকাই রেখেছে। অন্যদিকে পশ্চিমের বাজারও ভারতের জন্য দরকারি। এ দুয়ের ভারসাম্য রাখতে হবে আর মনে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদির সরকার সে পথই বেছে নিয়েছে।

গণমাধ্যমের খবরে এবং বিশেষজ্ঞদের পর্যালোচনা থেকে জানা যাচ্ছে যে, পশ্চিমা বিনিয়োগকারীরা চীন থেকে সরে এসে অন্যত্র বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। এই সুযোগে ‘ইমার্জিং ইকোনমি’র দেশগুলোর এমএসএমই খাতে বিনিয়োগ, দেশের কৃষিকে বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে আরও বেশি করে যুক্ত করা এবং অগ্রসর অর্থনীতিগুলোর সাথে বাকিদের মধ্যকার দক্ষতার ব্যবধান কমানোর ওপর জোর দিবে মোদি সরকার।

‘গ্লোবাল সাউথ’ নামে পরিচিত অপরাপর দেশগুলোর সমর্থনও দরকার ভারতের । আর এখানেই বাংলাদেশের বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। 

জি–২০ সম্মেলন সামনে রেখে তাই বাংলাদেশের পক্ষ হতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ছয় দফা প্রস্তাবনাগুলো হলো- 

১। বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে মানব সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের পথকে সুগম করা।

২। এসডিজির লক্ষ্যগুলোর পাশাপাশি বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য নতুন চিন্তা-ভাবনা শুরু করা।

৩। স্বল্পোন্নত দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে থাকা দেশগুলোর জন্য আলাদা তহবিল গঠন।

৪। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বে ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ কমিয়ে এনে নারীসহ সবাইকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ।

৫। রোহিঙ্গা সংকটের প্রেক্ষাপটে সব মানুষের নিজ দেশে একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের অধিকারের প্রতি আরও বেশি সংবেদনশীলতা।

৬। প্রতিবেশী দেশ, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী, ব্যক্তিখাত, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, এবং অন্যান্য অংশীজনদের সাথে নিয়ে ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি।

মোদি তার এক ভাষণে বলেছিলেন, গত কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি, সন্ত্রাসবাদ এবং যুদ্ধের মতো ঘটনা আমরা দেখেছি। এতে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, বিশ্বব্যবস্থা ব্যর্থ। 

যেসব সমস্যা আমরা সম্মিলিতভাবে সমাধান করতে পারব না, সেসব সংকট তৈরি হতে দেওয়া যাবে না। 

এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বড় ফারাক রয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ চীন ইউক্রেন যুদ্ধের সরাসরি নিন্দা জানায়নি। অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণে ভারতের ওপর চাপ বাড়ছে। ভারত এখন পর্যন্ত চাপ সামলে যাচ্ছে এবং সরাসরি রাশিয়ার নিন্দা থেকে বিরত থাকার কৌশলে অটল মনোভাব দেখাচ্ছে।

এর একটি কারণ হয়ত- রাশিয়া ভারতের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। এ ছাড়া ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধ নিয়ে নিরপেক্ষ নীতি বজায় রাখা ভারতকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের প্রতি একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাতে গেলে খুবই সুচিন্তিতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। 

ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে গত সপ্তাহে জি-২০ অর্থমন্ত্রীদের সম্মেলন কোনো মতৈক্য ছাড়াই শেষ হয়। ওই সম্মেলনে সমাপনী বিবৃতিতে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ‘কঠোর ভাষায়’ নিন্দা জানানো হলে ওই বিবৃতি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় মস্কো এবং বেইজিং।

বিবিসি বলছে, জি২০ সম্মেলনের প্রস্ততি পূর্ব পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায় বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিঙ্কেন মন্তব্য করেছেন, ‘ইউক্রেনে বিনা উস্কানিতে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং অন্যায় যুদ্ধের কারণ বৈঠকে আলোচনা  হয়েছে।’

জি-৭ নাম নিয়ে পথচলা শুরু করা জি ২০ জোটের কাছে বিশ্ব মানুষের আশা অনেক। হয়ত অসহায় রাষ্ট্রগুলো তাকিয়ে থাকে এই জোট নেতাদের কাছে। ইতিবাচক মোড়লিপানা দিয়ে কতটা তারা আমাদের এই ধরণিকে আগামী প্রজন্মের জন্য কার্যকরী ও সুষ্ঠু হিসেবে গড়ে তুলে যাবে তা দেখার সময় এখন এসেছে। নাকি ধংসযজ্ঞ সকাল নিয়ে আরেক নতুন শিশুর জন্ম হবে এ বিশ্বে আর বিশ্ব নেতারা চুপ করে থাকবেন নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ক্ষমতা প্রদর্শনের নতুন সব মঞ্চ নির্মাণের মাধ্যমে। 

তথ্য সংগ্রহ: 

রায়হান আহমেদ তপাদার (লেখক, কলামিস্ট, গবেষক) 

ড. মিহির কুমার রায় প্রবন্ধ 

ড. আতিউর রহমান (অর্থনীতিবিদ ও সাবেক গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংক) 

বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫