সবুজ কমছে ঢাকায়
উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বৃক্ষনিধন বন্ধ হোক

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৩, ১৪:০৪

সম্পাদকীয়। ফাইল ছবি
সম্প্রতি প্রায় সাড়ে ৪ কোটি জনসংখ্যার বিভাগ ঢাকার প্রকৃতি ও পরিবেশের এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরে ২০ শতাংশ সবুজ এলাকা থাকা প্রয়োজন।
অথচ বর্তমানে আছে সাড়ে ৮ শতাংশেরও কম। এক একটা গাছ পাশে থাকা মানে এক একটা অক্সিজেনের ফ্যাক্টরি চারপাশে থাকা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো ২০০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশ থেকে হারিয়ে গেছে দুই লাখ ১৪ হাজার হেক্টর গাছের ছায়া, যা ১০৮ মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের সমান।
গত ৮ জুলাই বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় নগর অঞ্চলের সবুজ ও ফাঁকা জায়গা ৫২.৪৮ বর্গকিলোমিটার থেকে কমে ২৯.৮৫ বর্গকিলোমিটারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ ২৯ বছরে ঢাকার সবুজ ও ফাঁকা জায়গা কমেছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। এতে একদিকে প্রকৃতিতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন শোষণ যেমন কমছে, অন্যদিকে বাড়ছে কার্বন নিঃসরণ। এ ছাড়া আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পরিবর্তন, তাপমাত্রা বাড়া ও বায়ুদূষণের মতো পরিবেশগত বিরূপ প্রভাবের ঝুঁকিতে নগরের মানুষ।
এভাবে অবাধ বৃক্ষনিধনের ফলে তাপমাত্রা বাড়ছে। ফলে ধারাবাহিকভাবে বায়ুদূষণে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের প্রথম সারিতে গিয়ে পৌঁছেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বায়ুদূষণজনিত মৃত্যুও অনেক বেশি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ফজলে নূর তাপস সুন্দর ঢাকা গড়তে উদ্যান নির্মাণ, সবুজায়ন, ছাদবাগানে উৎসাহ, পরিবেশবান্ধব স্থাপনা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা কী, তা আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি। এই সেদিনও ডিএসসিসিকে দেখা গেছে বিপুল উৎসাহে ধানমন্ডিতে গাছ কাটতে। অথচ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গ্লাসগোতে কপ-২৬-এর বৈঠকে ২০৩০ সালের মধ্যে গাছ কাটা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশও আছে।
তাই সময় এসেছে সচেতন হওয়ার। পরিকল্পনাহীনভাবে সড়কদ্বীপে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে। কেটে ফেলা গাছ প্রতিস্থাপন করা, রোপণ করা গাছের সংরক্ষণ নিশ্চিত করা, নগরে বনায়ন, গাছ রক্ষা ও কাটার প্রয়োজনে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা ও কৌশলপত্র প্রণয়ন করা, যে কোনো প্রকল্পে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন নিশ্চিত করা, বৃক্ষনিধন হয় এ রকম প্রকল্পে অংশীজনের মত নেওয়া, গাছ ও সবুজ অক্ষুণ্ন রেখে উন্নয়ন প্রকল্প করা, নগর এলাকায় গাছ কাটার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজনীয় নীতিমালা করা, বিদ্যমান আইনে বৃক্ষনিধন বন্ধে আরও কঠোর শাস্তির বিধান আরোপ করা, বিদ্যমান বৃক্ষের সংরক্ষণ ও নতুন বৃক্ষরোপণের কৌশল নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয়ে জোর দিতে হবে।
আমরা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি সবকিছুই চাই, কিন্তু প্রকৃতিকে যতটা পারা যায় অক্ষত রেখে। ভালো ও সুস্থ থাকার জন্য বিশুদ্ধ বায়ু গ্রহণ করতে হয়। আর এর জন্য দরকার ব্যাপক সবুজায়ন। এই নগরকে ভালো রাখার দায়িত্ব যাদের হাতে, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকেই এটা বুঝতে হবে সবার আগে। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বৃক্ষনিধন বন্ধ হোক।