পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নয়, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করুন

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৩, ১৩:০১

ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বড় দুই দলকে সংলাপে বসার তাগিদ দিয়ে দেশি-বিদেশি নানা মহলের তাগিদ ও তৎপরতার ক্ষেত্র ধীরে ধীরে প্রস্তুত হচ্ছে। কিন্তু এরই মাঝে শহরে একই সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির পাশাপাশি কর্মসূচির কারণে পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সভা-সমাবেশ করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু সেই সভা-সমাবেশ ঘিরে যাতে বিশৃঙ্খলা কিংবা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বর্তমানে বিরোধী দল যেদিন কর্মসূচি নেয়, সেদিন আওয়ামী লীগও কর্মসূচি দিচ্ছে। ১৮ ও ১৯ জুলাই বিএনপি-ঘোষিত পদযাত্রার দিন আওয়ামী লীগও প্রায় অনুরূপ কর্মসূচি দিয়েছে। এই প্রবণতা দেশকে আরও অস্থিতিশীলতার দিকেই নিয়ে যাবে সন্দেহ নেই। বিশেষ করে সাপ্তাহিক কর্মদিবসে সরকার ও বিরোধী দল পাল্টা কর্মসূচি পালন করলে ঢাকা শহর যে পুরোপুরি অচল হয়ে যায়, কী পরিমাণ জনদুর্ভোগ বাড়ে সেটি তারা আমলেই নিচ্ছেন না।
দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে কূটনীতিকরা গত কয়েক মাস ধরে পর্দার আড়ালে তৎপরতা চালিয়ে আসছিল। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল এ ইস্যুতে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরও করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করছেন। দেশে অবাধ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে তাদের সাম্প্রতিক ঢাকা সফর কতটা কাজে দেবে তা হয়তো সময়ই বলে দেবে। তবে সংলাপ ছাড়া যে এর সমাধান হবে না, সে মতামত রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও আসছে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, বাইরের চাপের কারণে নয়, রাজনৈতিক দলগুলোকেই সহিষ্ণুতার রাজনীতির চর্চা করতে হবে এবং সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।
অতীতে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতার পালাবদলের প্রেক্ষাপটে দেশে সহিংস রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মাসের পর মাস হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে সহিংসতায় বহু প্রাণহানি হয়েছে। সে সময় দেশজুড়ে নাশকতামূলক কর্মকা-ে যে ব্যাপক ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদহানি হয়েছিল, তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল অর্থনীতিতে। আমরা আর এ সবের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না।
এজন্য নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যে বিতর্ক চলছে তার অবসান হওয়া দরকার। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কোনো বিকল্প নেই। তাই রাজপথে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি না দিয়ে বরং রাজনৈতিক নেতৃত্ব আলোচনার মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন, এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।