
প্রতীকী ছবি
ধরা যাক, একটি স্কুলের এক ক্লাসে ৫০ জন ছাত্র আছে। তাদের মধ্যে পরীক্ষায় কামাল প্রথম হলো, ফেল না করলেও বোল্টুর স্থান হলো সবার শেষে। স্বাভাবিকভাবেই প্রথম জন উৎফুল্ল, পরের জন এবং এমন আরও কয়েকজন বিষণ্ণ।
ফর্মাল এডুকেশন শেষে কামাল হলো বুয়েট পাস করা প্রকৌশলী। কিন্তু বোল্টু কোনোমতে তৃতীয় বিভাগে গ্র্যাজুয়েশন করে কোথাও চাকরি পেল না। অগত্যা বাধ্য হয়ে ভগ্ন মন নিয়ে অল্প পুঁজি সংগ্রহ করে ছোট আকারে ব্যবসা শুরু করল। বছর দশেক পর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়াতে এবং কঠিন পরিশ্রমের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়ে গেল। তার আরও পাঁচ বছর পর, আগের প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়াতে, কামাল বোল্টুর প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিল।
অর্থাৎ স্কুলের ফার্স্ট বয় জয়েন করল লাস্ট বয়ের আন্ডারে। চিত্রটি মোটেও অবাস্তব নয়। এ ক্ষেত্রে কামালের মনে সবসময়ই একটি ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স কাজ করবে। অথচ প্রতিযোগিতার কালচার না থাকলে, কামাল পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সন্তুষ্টির সঙ্গে যোগ দিতে পারত।
ভাবছেন, পরীক্ষা ছাড়া স্কুল হয় নাকি? হয়। ফিনল্যান্ডের স্কুলগুলোতে পরীক্ষার নিয়ম নেই। পরিবেশটি চিন্তা করতেও কত ভালো লাগে। পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যার কোনোই গুণ নেই। যার উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহ আছে, সে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা চালিয়ে যাবে। আর যার তা ভালো না লাগে, সে তার ভালোলাগার কাজ অল্প বয়স থেকেই বেছে নেবে। হয়তো কেউ সঙ্গীতশিল্পী হবে, কেউ অভিনেতা আবার কেউ দক্ষ মেকানিক। সেক্ষেত্রে কারও মনেই অতৃপ্তি বাসা বাঁধতে পারবে না।
খেয়াল করলে দেখা যায়, ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় খারাপ করে মেধার অভাবে নয়; অনাগ্রহের কারণে। আরও মনে হয়, শিল্প কখনোই প্রতিযোগিতার বিষয় নয়। এটি সৃষ্টি এবং উপভোগের বিষয়। তাই সঙ্গীত বা ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতার ঘোষণা দেখলে ব্যথিত ও বিরক্ত হই। দেশের প্রতিষ্ঠিত সেরা সঙ্গীত কণ্ঠগুলো প্রতিযোগিতা থেকে সৃষ্টি হয়নি। অথবা একজন এস এম সুলতান বা হুমায়ুন ফরীদি প্রতিযোগিতা থেকে আসেননি। আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারি, মারিও টেস্টিনো বা সিন্ডি শারমেন প্রতিযোগিতার কারণে সৃষ্টি হননি। এরা সবাই তৈরি হয়েছেন শিল্পটির প্রতি গভীর আগ্রহ, ভালোবাসা ও অধ্যবসায়ের কারণে।
লেখক: পাখি পর্যবেক্ষক