
ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
বছরব্যাপী নির্বাচন নিয়ে নানা উত্তেজনাকর পরিস্থিতির প্রভাব পাশে রেখেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা। যদিও এই নির্বাচন কতটা জন-অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিনিধিত্বশীল হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ ভোটারদের হাতে প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার খুব বেশি বিকল্প নেই এখন।
২০২৩ সালের প্রায় পুরোটাজুড়ে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছি আমরা। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে দেশি-বিদেশি নানা মহলের নিষেধাজ্ঞার হুমকি, আশঙ্কা, উদ্বেগ এখনো আছে। কিন্তু এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশব্যাপী নানা নির্বাচনী সহিংসতা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৬৯ জন। শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকায় অধিকাংশ আসনেই তাদের বিজয় প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু তারপরও কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, ক্যাম্পে আগুন, ভাঙচুর, বিস্ফোরণ ও পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনা ঘটেছে। সংঘাত-সহিংসতা যেভাবে বিস্তৃত হচ্ছে, তাতে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ক্রমেই বাড়ছে। গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নির্বাচন একটি উৎসববিশেষ। কিন্তু সাম্প্রতিককালে আমরা যেন সেই ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার এই উৎকট চেহারা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, এমন অনেকের সম্পদের হিসাব গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এদের মধ্যে গত নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন, এমন কিছু ব্যক্তির সম্পদ বৃদ্ধির মাত্রা বিস্ময়কর। পাঁচ বছরে সম্পদের পরিমাণ ৩৫১ গুণ বেড়েছে, এমন প্রার্থীও রয়েছেন এবারের নির্বাচনে। দুর্নীতির পথে না হেঁটে এতটা সম্পদ অর্জন কি কোনোভাবেই সম্ভব?
নির্বাচন কমিশনে গিয়ে আওয়ামী লীগের এক প্রতিনিধি দল দাবি করেছেন, প্রার্থীদের হলফনামায় নিজেদের সম্পদের হিসাব যেন প্রকাশ করা না হয়। এ ধরনের আবদারের পেছনে যুক্তি থাকতে পারে, ক্ষমতায় থেকে দলের অনেকের অস্বাভাবিকভাবে সম্পদবৃদ্ধি জনগণ যেন জানতে না পারে।
গণতন্ত্রের মূল বিষয় হচ্ছে, জনগণকে তার প্রতিনিধি বাছাইয়ের সুযোগ করে দেওয়া এবং জনগণের জানতে হবে যে তারা কোন প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন, তার অতীত রেকর্ড কী। ক্ষমতায় থেকে কেউ সম্পদের পাহাড় গড়বেন আর সেই তথ্য লুকিয়ে আবার ভোটের জন্য জনগণের সামনে হাজির হবেন এটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।
জনগণকে প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ দিতে হলে প্রার্থীদের সম্পর্কে তথ্য প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। স্বচ্ছতা ও জনগণের প্রতি রাজনীতিবিদদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হলে এ ধরনের বিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সবাইকে নতুন বছরের অগ্রিম শুভেচ্ছা।