
ডলার। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন মুল্লুকের মুদ্রা ডলার। বাংলাদেশের মুদ্রা টাকা। যতটা না মাথাব্যথা টাকা নিয়ে, তার চেয়ে বেশি অস্থিরতা ডলার নিয়ে। তাই বাংলাদেশে বাজারে ডলারকে বেঁধে রাখার প্রবণতা সবসময় ছিল। ডলার বেঁধে রাখার অর্থ হলো টাকার বিনিময়ে এর দাম নির্ধারণ করা এবং তা করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
কিন্তু উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ডলারকে বেঁধে রাখার বিরুদ্ধে। ঋণ সহায়তা প্রদানের শর্ত হিসেবে আইএমএফের চাপে ডলারের দাম নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করা হয় গত ৮ মে। একদিনেই ডলারের দাম বাড়ানো হয় ৭ টাকা। এতেই পাগলা ঘোড়ার মতো ছোটা শুরু করেছে ডলারের দাম। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে বাজারের পণ্যমূল্য চাবুক আকারে জনগণের পিঠে আছড়ে পড়ছে। বাজারে ত্রাহি অবস্থা।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত মানতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৮ মে প্রতি ডলারে ৭ টাকা বাড়িয়ে মধ্যবর্তী দর ১১৭ টাকা ঠিক করে। এ ঘোষণার পরই খোলা বাজারে ডলারের দাম ১১৯ টাকা হয়। আর ৯ মে তা ১২৫ টাকা পর্যন্ত ওঠে।
বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুত ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে ঢাকায় আইএমএফ মিশনের সঙ্গে বৈঠকের শেষ দিনে চালু হয় ‘ক্রলিং পেগ’। এটি এমন পদ্ধতি, যার মাধ্যমে মধ্যবর্তী দর নির্ধারণ করে তা একটি সীমার মধ্যে ওঠানামা করতে বলা হয়। ডলারের দর পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার আগের এ পদ্ধতিতে বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আইএমএফের পরামর্শে বিভিন্ন দেশ এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করেছে। কোথাও সাফল্য এসেছে, কোথাও ব্যর্থ হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, বিনিময় হারে নতুন পদ্ধতি চালুর কারণে সাময়িক অস্থিরতা দেখা দিলেও সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে স্থিতিশীল হয়ে যাবে। ক্রলিং পেগ ডলারের দর পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার আগের ধাপ। এত দিন একটি দর ঘোষণা করে আরেক দরে ডলার বেচাকেনা হচ্ছিল। এখন সব ব্যাংক একই রকম দরে বিক্রি করবে। এর মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
এদিকে এক দিনে ৪ টাকা বেড়ে আমদানিকারকদের ডলার কিনতে হয়েছে ১১৭ টাকা ৫০ পয়সায়। সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ডলারের দর বৃদ্ধির ফলে আমদানি করা সব ধরনের পণ্যের দর বাড়বে। কেননা এত দিন তারা ১১২ থেকে ১১৫ টাকায় ডলার পাচ্ছিলেন। এখন কোনো ব্যাংক আর ১১৭ টাকার নিচে বিক্রি করবে না। দর আরও বাড়তে পারে।
ডলার সংকটের কারণে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অনেক সময় আমদানি খরচ বাড়ানো হয়েছে। এতে পণ্য আমদানিতে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া এবং সরবরাহ সংকট তৈরি হওয়ায় অনেক পণ্যের দাম আগে বেড়েছে। এখন ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন পণ্যের কাঁচামাল আমদানি এবং জ্বালানি আমদানির ব্যয় বাড়বে। এতে অধিকাংশ পণ্যের দাম আরেক দফায় বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারি হিসেবে ইতোমধ্যে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। যদিও নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দাম এক বছরের ব্যবধানে ২ থেকে ৩ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে।