পাচার হওয়া অর্থ ফেরত
রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রের আমূল সংস্কার প্রয়োজন

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৬

গ্রাফিক্স: সাম্প্রতিক দেশকাল
স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসনের অভাব আর প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির প্রশ্রয়ে গত দেড় দশকে টাকা পাচারের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। এ সময়ে প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। কখনো আন্ডার ইনভয়েস, কখনো ওভার ইনভয়েস; আবার প্রবাসীদের বাড়তি টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে হুন্ডির মাধ্যমেও একটি বড় অঙ্কের টাকা পাচার হয়েছে।
রাজনীতিক, আমলাসহ দেশের অসাধু শীর্ষ ব্যবসায়ী থেকে মাঝারি স্তরের ব্যবসায়ী-আমদানিকারকরাও এই পাচারচকারীক্রের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কাস্টমস, বন্দরসহ অনেক সংস্থার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদেরও যোগসাজশ থাকার প্রমাণ রয়েছে। সরকারের অন্তত সাতটি নজরদারি সংস্থা থাকার পরও সবার নাকের ডগায় এই বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার বিস্ময়কর।
আমরা দেখেছি, এতদিন পর্যন্ত টাকা পাচারের অন্যতম কারণ ছিল রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। পাচার করা সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও এটিই বাধা ছিল। আশার কথা- অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েই টাকা পাচার ঠেকানো এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মুনসুরকে সভাপতি করে আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করেছে সরকার। নতুন প্রজ্ঞাপনে টাস্কফোর্সের কার্যপরিধিও বাড়ানো হয়েছে।
যদিও পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা একটি দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। তবে পাচারের বিরুদ্ধে আমাদের যথেষ্ট ভালো আইন আছে, পাচার করা অর্থের তিন গুণ জরিমানা ছাড়াও কারাদণ্ডের বিধান আছে। এখন প্রয়োজন, যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়েছে, তাদের প্রত্যেক দেশের কাছে চিঠি দেওয়া, তারা যেন সেই অর্থসম্পদ আটকে দেয়। ওই অর্থ যাতে পাচারকারী তুলে নিতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে দুদক ও বিএফআইইউসহ অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে।
বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান যথা- দুদক, সিআইডি, এনবিআর, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফইইউ), অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে দুদককে দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করার সুযোগ প্রদানের ওপর। তবে, রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রে মৌলিক পরিবর্তন না হলে একটি আদর্শ দুদক প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলেও তারা ঠিকভাবে কাজ করতে পারবে না। তাই দুদকের স্বাধীনভাবে কাজের পথে প্রতিবন্ধক অন্যান্য আইন ও নীতিমালার যুগোপযোগী সংস্কার করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রয়োজন দেশের রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রের আমূল সংস্কার। তা হলেই একদিকে যেমন বন্ধ হবে অবৈধ অর্থপাচার, অন্য দিকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার পথও প্রশস্ত হবে।