
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরিচিত মুখ রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চংগ্যা। ভাইসহ অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেন, জানবাজি রেখে কর্তৃত্ববাদকে প্রশ্ন করেছেন, ৪ আগস্ট তার ওপর হামলাও হয়। অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির এই নেতা আবার দ্বিতীয়বার রক্তাক্ত। ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের একটি গ্রাফিতি পাঠ্যপুস্তকে পুনর্বহালের দাবিতে এনসিটি ভবন এলাকায় গিয়েছিলেন। পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের ওপর হামলা করে গ্রাফিতির বিরোধিতাকারীরা। রুপাইয়াসহ প্রায় ১৭ জন গুরুতর আহত হন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে হামলার নিন্দা জানিয়ে বলা হয়েছে, রুপাইয়ারা সেদিন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করছিলেন। অভিযুক্ত ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টির’ দুজনকে পুলিশ এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করেছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রাফিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে পুরো ঘটনাকে ‘জাতিগত বিদ্বেষ ও সংঘাতের’ ন্যারেটিভ তৈরির বাহাদুরি চলছে। মানুষের সঙ্গে মানুষের প্রশ্নহীন পাতানো ঘৃণা আর বিভাজন জোর করে উসকে দেওয়া হচ্ছে। এর দায়ভার কার? অমীমাংসিত প্রশ্নগুলোর সুরাহা দরকার। কোনো দীর্ঘসূত্রতা, বাহাদুরি, বলপ্রয়োগ কিংবা বিভাজনের কর্তৃত্ব আমরা আর দেখতে চাই না।
রুপাইয়ার সঙ্গে গুরুতর আহত হন অনন্ত বিকাশ ধামাই, ডন যেত্রা, জুয়েল মারাক, টনি চিরান, দনওয়াই ম্রো মলয় বিকাশ ত্রিপুরা, স্নেহলাল তঞ্চংগ্যা, শান্তিময় চাকমা, শান্তা চাকমা, মিশাল কান্তি ত্রিপুরা, রেংইয়ং ম্রো, সুমী চাকমা ও ফুটন্ত চাকমা। একই সঙ্গে রাহী নায়েব, ইসাবা সোহরাত ও ববি বিশ্বাস- এই তিন বাঙালি শিক্ষার্থী আহত হন। রুপাইয়াকে বাঁচাতে গিয়ে দুই হাত ভেঙেচুরে গেছে ডন যেত্রার। বেশ জটিল অপারেশন হয়েছে তার। লাঠির আঘাতে রক্তাক্ত অনন্ত, জুয়েল বা রেংদের যেসব ছবি প্রকাশিত হয়েছে তা আমাদের সামনে এক বীভৎস বিশৃঙ্খল বিভাজনের হিংসাকে হাজির করে।
জুলাই অভ্যুত্থান সব বৈষম্য আর বিভাজনের বিরুদ্ধে ইনক্লুশনের ন্যারেটিভ দাঁড় করিয়েছিল। আর ইনক্লুশন বা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের এই প্রবণতা তৈরি হয়েছে অভ্যুত্থানের জন-আকাঙ্ক্ষা হিসেবে। চুরমার কর্তৃত্ববাদী রেজিমের ওপর দাঁড়িয়ে অভ্যুত্থানের পাঁচ মাস পরে আজ জুলাইয়ের জন-আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। রুপাইয়াদের ক্ষত সেলাই দিয়ে জোড়া দেওয়া হয়েছে, হয়তো ক্ষতের দাগ ধীরে ধীরে মুছবে। কিন্তু মনের গভীরে তৈরি হওয়া ক্ষত ও দাগ কে সারাবে? কোন সংস্কার প্রক্রিয়া, কোন দায় ও দরদের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত?
তুমুল রক্তস্রোত, বন্দুক আর বাহাদুরির ভেতর আঁকা হয়েছিল দুর্ধর্ষ সব গেরিলা-গ্রাফিতি। অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার সঙ্গে জন-আকাঙ্ক্ষার পাবলিক আওয়াজ হিসেবে রূপ দিতে রুপাইয়া, ডন, রেং, টনিরাও এসব গ্রাফিতি এঁকেছিলেন। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এনসিটিবি এসব গ্রাফিতির আলোকচিত্র পাঠ্যপুস্তকের মলাটে ব্যবহার করেছে। এরই একটি নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ের পেছনের মলাটে ব্যবহৃত হয়েছিল। একটি গাছের পাঁচটি সবুজ পাতায় লেখা আছে মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, হিন্দু ও আদিবাসী। পাশে লেখা, পাতা ছেঁড়া নিষেধ। অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা হিসেবে এ রকমের গ্রাফিতি দেশজুড়ে আঁকা হয়েছে। কেউ এসব গ্রাফিতি মুছে দেয়নি। ধর্মীয় বৈচিত্র্যের সঙ্গে উল্লিখিত গ্রাফিতিতে জাতিগত বৈচিত্র্যকে তুলে ধরায় কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। শ্রেণি-বর্ণগত ধারা একই বিন্যাসে অঙ্কিত না হলেও এই গ্রাফিতি ভুল নয়, কারণ এটি আমাদের ইনক্লুশনের বার্তা দিতে পেরেছে। ‘বাঙালি-আদিবাসী’ আমরা সবাই বাংলাদেশি, আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশ’ এই একই রকমের গ্রাফিতিও দেশজুড়ে আঁকা হয়েছে। যদি ধর্মের বিবেচনায়ও দেখি, সেখানেও ‘আদিবাসী’ প্রত্যয়ের মাধ্যমে আমরা পুস্তকবিহীন ধর্মধারাগুলোকে ইনক্লুশন হিসেবে পাঠ করতে পেরেছি। যেসব পুস্তকবিহীন ধর্মধারা বহু আদিবাসী সমাজে বিরাজমান। বাংলাদেশে আদিবাসীদের ভেতর যেমন মুসলিম, সনাতন, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আছে; একই সঙ্গে জেন্টিল, সনামেহী, ক্রামা, সারনা, সাংসারেকসহ আরো বহু ধর্মাবলম্বী আছে। উল্লিখিত গ্রাফিতিটি একই সঙ্গে বাঙালি-আদিবাসীসহ দেশের সব জাতিসত্তার ধর্মীয় ইনক্লুশনকেও বোঝায়। যারা জুলাইয়ের আওয়াজ এবং আকাঙ্ক্ষাকে দাবিয়ে রাখতে চায়, তারাই আজ গ্রাফিতি নিয়ে কুতর্ক করছে। বিভাজন ও বিদ্বেষ উসকে দিচ্ছে। রক্তাক্ত জুলাইয়ের গ্রাফিতির ভাষা ও উপস্থাপন নিয়ে মিথ্যাচার করছে। বাংলাদেশের জনগণ এই গ্রাফিতির মর্ম বুঝতে পেরেছে।
উল্লিখিত গ্রাফিতি নিয়ে আবারও ‘আদিবাসী-তর্ককে’ সামনে এনে জাতিগত বিভাজন ও আদিবাসী-বাঙালি বাইনারি ন্যারেটিভকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। স্মরণ রাখা জরুরি এই অহেতুক আপত্তি আর তর্ক অনৈতিহাসিক নয়। এটি কলোনিয়াল লিগ্যাসির এক অমীমাংসিত বিদ্বেষ। রাষ্ট্র, ক্ষমতা, বাঙালি জাত্যাভিমান এবং নয়া উদারবাদী ব্যবস্থা এটি জিইয়ে রেখেছে। আর একে নানাভাবে উসকানি দেয় এজেন্সি নিয়ন্ত্রিত কিছু তথাকথিত গবেষণা, ভূমিগ্রাস, মেগা উন্নয়ন প্রকল্প কিংবা প্রাণ-প্রকৃতিবিনাশী দখলিপনা। ‘আদিবাসী’ প্রত্যয়টিকে ‘আদিবাসিন্দার’ সঙ্গে জোর করে গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে। আদিবাসী জাাতিগত সামাজিক বর্গীয় পরিচয়। কোনো অঞ্চলের আদিবাসিন্দা বোঝাতে এই পরিচয় ব্যবহৃত হয়নি। এমনকি এটি ইনডিজেনাস পিপল, অ্যাবোরিজিনাল, ফার্স্ট নেশান, ট্রাইবাল- এ রকম শব্দের কোনো বাংলা প্রতিশব্দ বা অনুবাদ নয়। তবে ইনডিজেনাস পিপল ও আদিবাসী বর্গীয় পরিচয় খুব কাছাকাছি এবং উভয়েই আত্মপরিচয়কে হাজির করে। ১৮৫৫ সালের হুল বা সাঁওতাল বিদ্রোহ, ১৮৩০ সালের হাতিখেদা বিরোধী আন্দোলন, ১৯০০ সালের উলগুলান কিংবা পরবর্তী সময়ে টংক-নানকা-তেভাগার সময়েও আদিবাসী পরিচয়টি স্থানীয়ভাবে বহুল ব্যবহৃত ছিল। আদিবাসীরা ব্রিটিশ জুলুমের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের জনতাকে নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন।
ব্রিটিশ উপনিবেশ শুরু থেকেই আদিবাসী জীবন ও প্রাণসম্পদ নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্বের ভেতর রেখেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় সেই সময়ে ট্রাইবাল ও উপজাতি শব্দগুলোকে আমদানি করা হয়। যদিও ১৯৫০ সালের প্রজাস্বত্ব আইনে ‘অ্যাবোরিজিনাল’ শব্দটি আছে। ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত নওগার পাহাড়পুর আদিবাসী উচ্চ বিদ্যালয়ের নামেও আদিবাসী শব্দটি আছে। দেশভাগের পর পাকিস্তান আমলে বাংলাতে ‘উপজাতি’ শব্দটির বহুল ব্যবহার শুরু হয়। আর সেখানেও প্রধান বিষয় হিসেবে কাজ করে আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে রাষ্ট্রীয়ভাবে সংগঠিত জনমিতির রাজনীতি এবং জীবন ও পরিবেশ বিনাশী মেগাপ্রকল্প। এ ক্ষেত্রে কাপ্তাই বাঁধ, বাগদাফার্ম, পানিহাটা, দারুসার ঘটনাগুলো স্মরণ করা জরুরি। ষাটের দশকে লেখা আবদুস সাত্তারের ‘আরণ্য জনপদের’ মতো বই ও গবেষণার মাধ্যমে ‘উপজাতি’ ধারণাকে বিদ্যায়তন এবং গণমাধ্যমে প্রতিষ্ঠার জবরদস্তি চলে।
মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী স্বাধীন দেশে প্রথম সাংবিধানিক বিতর্কে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বাঙালি জাত্যাভিমানকে প্রশ্ন করেন এবং সব জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবি করেন। রাষ্ট্র মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার জিজ্ঞাসাকে কোনো আমলেই নেয়নি। এমনকি পঞ্চদশ সংশোধনীর সময়েও এই দাবিকে দাবিয়ে রাখা হয়েছিল। জাতীয় শিক্ষানীতি কিংবা ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইনে’ আদিবাসী শব্দটি থাকলেও সংবিধানে পরবর্তী সময়ে ‘উপজাতি’, ‘নৃগোষ্ঠী’, ‘ক্ষুদ্র জাতিসত্তা’ ও ‘সম্প্রদায়’- এই পরিচয়গুলো স্বীকৃতি পায়। সংবিধানে না থাকলেও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের নামসহ বহুলভাবে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ শব্দটিকে বিগত রেজিমে প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর এই ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ শব্দটি ব্যবহারেরও একাডেমিক ঐতিহাসিকতা আছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ ‘এথনিক থিয়েটার’ বোঝাতে ‘নৃগোষ্ঠী নাট্য’ শব্দটির বহুল প্রচার করে এবং এই ধারাবাহিকতায় আদিবাসীদের পরিচয় হিসেবে নৃগোষ্ঠী এবং পরে ‘এথনিক মাইনরিটির’ বাংলা হিসেবে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ শব্দের ব্যাপক প্রচলন ঘটানো হয়।
প্রাক-উপনিবেশ সময়কাল থেকে দেশভাগ, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশে আদিবাসী পরিচয়টি বাঙালি বাদে দেশের অপরাপর প্রান্তিক জাতিদের এককভাবে বোঝানোর ক্ষেত্রে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য জাতিগত বর্গীয় পরিচয় হলেও কর্তৃত্ব, ক্ষমতা, দখল ও অপরায়ণের রাজনীতির কারণে এই আত্মপরিচয়কে রাষ্ট্র এখনো যথাযথ স্বীকৃতি ও মর্যাদা দিতে পারেনি।
‘আদিবাসী’ পরিচয়ের সঙ্গে কে আগে পরে এসেছে তার সম্পর্ক এই অঞ্চলের জন ইতিহাসে নেই। মানুষের পরিভ্রমণ, স্থানান্তর ও অভিবাসনের ইতিহাস পাঠের জন্য প্রত্নতত্ত্ব, জীনবিজ্ঞান এবং ঐতিহাসিক ভাষাবিদ্যার আশ্রয় নেওয়া হয়। কিন্তু গরিষ্ঠভাগ সময়েই এর উপস্থাপন এবং বয়ান থাকে অধিপতি ক্ষমতাকাঠামো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং ঔপনিবেশিক। এমনকি ‘গবেষণার’ নামে কোনো অঞ্চলের প্রান্তিক করে রাখা জনগোষ্ঠীর ইতিহাস ও প্রমাণকে ‘আড়াল’ ও ‘অপর’ করা হয়, যা মূলত রাজনৈতিক ফায়দা, বিভাজন, দ্বন্দ্ব এবং নানামুখী উসকানিকে প্রশ্রয় দেয়। এমনকি বেশির ভাগ সময় এসব গবেষণা পদ্ধতি এবং গবেষণাকাঠামো প্রবলভাবে জনগোষ্ঠীর সম্মতি এবং অংশগ্রহণকে কোণঠাসা করেই করা হয়। ঐতিহাসিকেরা বলে থাকেন, কৃষিকাজ ও বসতিবিস্তার ঘটেছিল নবপলীয় সময়ে। বাংলাদেশি প্রত্নতাত্ত্বিকরা নবপলীয় সময়ের বহু উপাদান ও ইতিহাস খুঁড়ে ও খুঁজে বের করেছেন। নরসিংদীর উয়ারি-বটেশ্বর, হবিগঞ্জের চাকলাপুঞ্জি, কুমিল্লার লালমাই-ময়নামতী, নওগাঁর টেকথা, ফেনীর ছাগলনাইয়া কিংবা পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি অঞ্চলে দীর্ঘ অনুসন্ধান ও খননের ভেতর দিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এসব অঞ্চলে প্রাচীন বসতির প্রমাণ পেয়েছেন। প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানান, প্রাচীন বসতির বিস্তার দেশে মধুপুর গড়, বরেন্দ্র, লালমাই, সিলেট হয়ে পার্বত্যাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রতিটি অঞ্চলে আদিবাসী জাতিসত্তাগুলোর প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। স্থানের নাম, মৌখিক ইতিহাস, লোকায়ত জ্ঞান, স্থানীয় শস্য ফসলের বৈচিত্র্য, ভাষার পরিধি কিংবা নানা সাংস্কৃতিক উপাদানের খণ্ডবিখণ্ড থেকে এখনো তার বহু প্রমাণ মেলে। মধুপুর গড় মান্দি বা গারোদের হাবিমা কিংবা মাতৃভূমি, লালমাই ত্রিপুরাদের আদি অঞ্চল, চাকলাপুঞ্জি খাসিদের প্রাচীন বসতি। বরেন্দ্র অঞ্চলে সাঁওতাল, কোল, কডা, পাহাড়িয়া, মুন্ডা, ওঁরাও, রবিদাস, মাহালীসহ বহু আদিবাসীদের প্রাচীন বসতিবিস্তারের নজির আছে। বাঙালিরা এই অঞ্চলের বহু জনপদের আদিবাসিন্দা হলেও তারা ‘আদিবাসী’ নন। প্রাক-উপনিবেশকাল থেকে যেসব জনগোষ্ঠী জাতিগতভাবে একসঙ্গে বসবাস করে আসছে এবং স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পূর্ব থেকে এখনো অবধি নিজেদের সমাজ প্রথাগত আইন ও ভাষা-সংস্কৃতির মাধ্যমে পরিচালনা করে এবং একই সঙ্গে যাদের মাধ্যমে জাতিগত নিপীড়ন ও প্রান্তিকতা তৈরি হয় না একক সামাজিক বর্গীয় পরিচয় হিসেবে তারা ‘আদিবাসী’। একই সঙ্গে প্রতিটি আদিবাসী জাতিসত্তার নিজস্ব আত্মপরিচয়, যেমন- লালেং, খাড়িয়া, কন্দ, খিয়াং, পাংখোয়া, পাঙাল, কোচ, ডালু, হাজং, তঞ্চংগ্যা, কড়া, খুমীর স্বীকৃতিও গুরুত্বপূর্ণ। জুলাই অভ্যুত্থান সবার আত্মপরিচয় এবং আত্মমর্যাদাকে নিয়েই এক বহুত্ববাদী অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের আওয়াজ তুলেছে। সেই আওয়াজ দেশের কারো মনে কোনো ক্ষত তৈরি হতে দিতে পারে না। ক্ষত সারানোর রাজনৈতিক বন্দোবস্ত জোরালো করতে পারে।